Logo
Logo
×

জাতীয়

৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৬ পিএম

৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতি বছরই আমাদের জীবন, সম্পদ ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান এসব দুর্যোগের অন্যতম কারণ। নতুন করে এ খাতায় নাম লিখিয়েছে ভূমিকম্প। সাম্প্রতিক সময়ে হালকা ও মাঝারি ধরনের ভূকম্পন অনুভূত হলেও একসময় এ অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। এজন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তারা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পার্বত্য এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মণিপুর, মিজোরাম, মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া, কিশোরগঞ্জের হাওর দিয়ে মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামানের পাশ দিয়ে দক্ষিণে যদি একটি রেখা কল্পনা করা যায়, এলাকাটি হচ্ছে দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল। এ দুটি প্লেটের মধ্যে পূর্বে অবস্থিত বার্মা প্লেট, পশ্চিমে অবস্থিত ইন্ডিয়ান প্লেট। এর সংযোগস্থলের উপরের ভাগটি অর্থাৎ সুনামগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে পূর্বে মণিপুর, মিজোরাম পর্যন্ত অঞ্চলটি ‘লকড’ হয়ে আছে। অর্থাৎ এখানে শক্তি জমা হয়ে আছে।

প্রাথমিক লক্ষণ, চলতি বছরে হালকা-মাঝারি ১০ ভূকম্পন

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত (১৭ সেপ্টেম্বর) ১০টি হালকা ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে দেশে। এতে জানমালের তেমন ক্ষতি না হলেও বড় ধরনের ভূমিকম্পের আভাস পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পার্বত্য এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মণিপুর, মিজোরাম, মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া, কিশোরগঞ্জের হাওর দিয়ে মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামানের পাশ দিয়ে দক্ষিণে যদি একটি রেখা কল্পনা করা যায়, এলাকাটি হচ্ছে দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল। এ দুটি প্লেটের মধ্যে পূর্বে অবস্থিত বার্মা প্লেট, পশ্চিমে অবস্থিত ইন্ডিয়ান প্লেট। এর সংযোগস্থলের উপরের ভাগটি অর্থাৎ সুনামগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে পূর্বে মণিপুর, মিজোরাম পর্যন্ত অঞ্চলটি ‘লকড’ হয়ে আছে। অর্থাৎ এখানে শক্তি জমা হয়ে আছে

বাংলাদেশে এ বছর প্রথম ভূকম্পন অনুভূত হয় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের পাশাপাশি কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলাও। ৩ দশমিক ৯ মাত্রার এ ভূমিকম্পে জানমালের তেমন ক্ষতি হয়নি।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে মাঝারি মাত্রার জোড়া ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটির আয়াবতি ও রাখাইন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের কক্সবাজারেও ভূকম্পন অনুভূত হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক জানান, রাখাইন রাজ্যের ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার আগারগাঁও থেকে ৩৭৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। 

চট্টগ্রামে গত ৩০ এপ্রিল ৪ দশমিক ৬ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। চট্টগ্রাম আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাথ তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল অক্ষাংশ ২২ দশমিক ৯৩ ডিগ্রি উত্তর, দ্রাঘিমা ৯৪ দশমিক ১৯ ডিগ্রি পূর্ব মিয়ানমারের মাউলাইকে। রাজধানীর ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এর দূরত্ব ছিল ৪০০ কিলোমিটার।

বছরের শুরুতে ভূমিকম্পের ভয়াবহ তাণ্ডবের শিকার হয় তুরস্ক-সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সেখানে মারা যান প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। লাখ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি সেখানে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। পরবর্তীতে বেশ কয়েক দফা সেখানে ভূকম্পন অনুভূত হয়

গত ৫ মে রাজধানীতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা জানান, শুক্রবার সকাল ৫টা ৫৭ মিনিট ৮ সেকেন্ডে রাজধানীতে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার সিটি সেন্টার থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে দোহারে। তবে, এ ঘটনায় জানমালের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।

গত ৫ জুন ৩.৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে বঙ্গোপসাগরে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম লাইভ মিন্ট জানায়, এদিন সকালে বঙ্গোপসাগরে ৩.৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের কাছে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে। বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ৮টার দিকে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।

গত ১৬ জুন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূকম্পন অনুভূত হয়। ঢাকা ছাড়াও সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ থেকে ভূকম্পনের তথ্য আসে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ। অবশ্য ভূমিকম্পের পরপরই বিভিন্ন মাধ্যমে যে তথ্য পাওয়া যায় সেখানে বলা হয়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভারতের শিলংয়ে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫। তবে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা জানান, ১০টা ৪৬ মিনিট রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

গত ১৪ আগস্ট সিলেটে ফের ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। একই সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলায়ও এটি অনুভূত হয়। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ও সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, এর উৎপত্তিস্থল ছিল আসামের মেঘালয়। উৎপত্তিস্থলে এর গভীরতা ছিল ৩৫ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ২২৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে।

ঠিক ১৬ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৯ আগস্ট সিলেট মহানগরীর আশপাশে ফের মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৫। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জৈন্তাপুরে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৪ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প আঘাত হানে। আসামে আঘাত হানা ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের সিলেট জেলাও। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার গভীরে এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। বাংলাদেশের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, সিলেটে ৪ দশমিক ৪ মাত্রায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ২৬৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের আসামের কাছাড়ে।

সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে ৪.২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইল সদরে। ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫ কিলোমিটার নিচে। 

বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে দেশ, সক্রিয় তিনটি টেকটোনিক প্লেট

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের আশপাশ দিয়ে তিনটি টেকটোনিক প্লেট গেছে। এগুলোর সংযোগস্থল আমাদের সীমান্তের আশেপাশে। যেমন- আমাদের উত্তরে হিমালয় পড়েছে ইউরেশিয়ান প্লেটে। আমাদের অবস্থান ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটে। আর আমাদের পূর্বে হচ্ছে বার্মার মাইক্রো প্লেট। এ তিনটি প্লেটই আমাদের কানেক্টেড এবং সক্রিয়। প্লেটগুলোর মুভমেন্ট আছে। এগুলো প্রতি বছরে পাঁচ সেন্টিমিটার বা ৫০ মিলিমিটার মুভমেন্ট করে। তার মানে, প্রতি বছর আমরা পাঁচ সেন্টিমিটার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মুভমেন্ট করছি। একইভাবে পুরো পৃথিবীও মুভ করছে।

প্লেটের মুভমেন্ট, বাড়ছে হিমালয়ের উচ্চতা

এ আবহাওয়াবিদ বলেন, নেপালে যেমন ইউরেশিয়ান প্লেট আর আমাদের ইন্ডিয়ান প্লেট (বাংলাদেশ যে প্লেটে অবস্থান করছে)। দুটি প্লেটের কনভারজেন্ট মুভমেন্ট বিদ্যমান। কনভারজেন্ট মুভমেন্ট হওয়ায় একটি প্লেট আরেকটি প্লেটের দিকে মুভ করছে এবং একটি প্লেট  গ্রাজুয়ালি রাইজিং করছে। অর্থাৎ হিমালয়ের যে উচ্চতা, যেটি গত বছর যা ছিল তার চেয়ে একটু হলেও বেড়েছে। এজন্য যখন প্লেট মুভ করে এবং কোনো কারণে যদি ওখানে মুভমেন্ট কম হয় বা মুভমেন্ট না হয় তখনই সেখানে বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। দেখা যায়, আমাদের প্লেট বাউন্ডারির লাইনগুলোতে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ হচ্ছে। অনেক বিজ্ঞানী বলেন, সংঘর্ষের ফলে যদি এনার্জি রিলিজ হয়, তাহলে ভালো। আর যদি এনার্জি রিলিজ না হয়, যদি সেখানে প্লেট বাউন্ডারি থাকে তাহলে এটি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, পরে যখন সেখান থেকে বড় ধরনের এনার্জি রিলিজ হয় তখন ভূমিকম্পের মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। আমাদের আশপাশে সক্রিয় তিনটি প্লেটের কারণে বলতে পারি যে, আমরা প্রবল ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে আছি, এটি নিশ্চিত।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে শুধু বাংলাদেশ ঝুঁকিতে আছে, বিষয়টি সেরকম নয়। পুরো পৃথিবীই ঝুঁকির মধ্যে আছে। সারা পৃথিবীতে অনেকগুলো প্লেট আছে। যেমন- ইউরেশিয়ান প্লেটটি ইউরোপ জুড়ে বিস্তৃত, এটি নেপাল পর্যন্ত চলে এসেছে। আমরা ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটে অবস্থিত। এটি অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ও তৎসংলগ্ন মহাসাগর হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতীয় উপমহাদেশ ও তৎসংলগ্ন জলভাগ পর্যন্ত প্রসারিত। পুরো প্লেটই মুভ করছে।  ফলে বলা যায়, পুরো পৃথিবীই ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে।

ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ রয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতের ঘটনা থেকে বলা যায় যে, যেখানে প্লেট বাউন্ডারি লাইন থাকবে অর্থাৎ দুটি প্লেটের সংযোগস্থল থাকবে, তার আশেপাশে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বেশি। যেহেতু বাংলাদেশ প্লেট বাউন্ডারির খুবই কাছাকাছি (বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ১০০ বা ১২০ কিলোমিটারের মধ্যে প্লেট বাউন্ডারি অবস্থিত) অবস্থান করছে, সুতরাং আমরা অবশ্যই ঝুঁকির মধ্যে আছি। অতীতেও এ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। যেহেতু পৃথিবী মুভ করে এনার্জি গেইন করে এবং প্লেট বাউন্ডারি দিয়েই এনার্জি রিলিজ করে, সেজন্য বলা যায় বাংলাদেশেও বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আবিষ্কার হয়নি ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস

সাবেক আবহাওয়া বিজ্ঞানী আব্দুল মান্নান বলেন, এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের প্রেডিকশন দেওয়ার মতো কোনো পদ্ধতি/প্রক্রিয়া আবিষ্কার হয়নি। যেহেতু এটি পৃথিবীর ইন্টারনাল বিহেভিয়ার এবং ইন্টারনালি লেট মুভমেন্ট এনার্জি রিলিজের মাধ্যমে এক প্লেট থেকে অন্য প্লেটে এনার্জি বিনিময় হয় বা কোনো কারণে যখন শক্তির পরিবর্তন হয়, তখনই ভূমিকম্পের মতো ঘটনা ঘটে। পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ কিন্তু ইউনিফর্মলি সৃষ্ট নয়। এখানে ননউনিফর্মিটি আছে এবং সে কারণেই পৃথিবীর সব জায়গা সমানভাবে গঠিত হয় না। যেমন- জাপানে প্রতিনিয়ত ভূমিকম্প হয়। কিন্তু বাংলাদেশ বা এমন অনেক অঞ্চল আছে যেখানে সেভাবে ভূমিকম্প হয় না।

আমরা শক্তিশালী ভূমিকম্প এরিয়ার মধ্যে আছি

তিনি বলেন, অতীতে বাংলাদেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিকে ব্যাপক ভূমিকম্প হয়েছে। তার মানে, আমরা ভূমিকম্প এরিয়ার মধ্যেই আছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঘন ঘন ভূকম্পন হচ্ছে কেন? যেহেতু এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, এখানে বছরের কোনো এক সময় বা অতীতেও ভূমিকম্পের প্রবণতা ছিল, এখনও অতীতের মতো ভূমিকম্প প্রবণতা রয়ে গেছে। যেহেতু বাংলাদেশ ঝুঁকিতে আছে, সেহেতু বাংলাদেশের উচিত হলো অতীতের রেকর্ডগুলো আমলে নিয়ে যতটা সম্ভব সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কারণ, এটি এমন একটি দুর্যোগ, যেটির কোনো পূর্বাভাস নেই। ভূমিকম্প মোকাবিলার জন্য আমাদের নিজেদেরই সতর্ক থাকতে হবে।

দক্ষিণ থেকে বাংলাদেশ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে

আব্দুল মান্নান বলেন, টেকটোনিক প্লেটগুলো থাকার কারণে পৃথিবীর সব স্থান কিন্তু মুভ করছে। তবে, এ মুভমেন্টটা আমরা ফিজিক্যালি দেখি না। কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি প্রতি বছর কিছু মিলিমিটার এটি মুভ করছে। সেই মুভমেন্টের কারণে বাংলাদেশও এখন দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে। পৃথিবীর সব অঞ্চলই নিজস্ব প্লেটগুলোর মুভমেন্টের কারণে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এ মুভমেন্টের প্রক্রিয়া বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করেছেন। কাজেই নতুন কোনো এলাকায় ভূমিকম্প যে হবে না, সেরকম কোনো নিরাপত্তা আমরা পাচ্ছি না। এ নিরাপত্তা না থাকার কারণে যেসব অঞ্চল আমরা এ মুহূর্তে নিরাপদ ভেবেছিলাম, সেসব এলাকা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে বলা যায়, ভূমিকম্প মাসে তিনবার কেন, দিনেও তিনবার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিজ্ঞানীরা এখনও এ প্রাকৃতিক দুর্যোগকে নিজেদের কব্জায় আনতে পারেনি। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো এখনও কোনো দেশের বিজ্ঞানীরা মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে পারেনি। সেজন্য আমাদের সবার উচিত সার্বিকভাবে প্রস্তুত থাকা।

ভূতাত্ত্বিক গঠনের তিন প্লেটের সংযোগস্থল বাংলাদেশে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ভূতত্ত্ববিদ ও খ্যাতনামা ভূবিজ্ঞানী এবং বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ভূতাত্ত্বিক গঠন অনুযায়ী বাংলাদেশ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। বাংলাদেশের উত্তরে ইউরেশিয়ান প্লেট, পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট এবং পূর্বে হচ্ছে বার্মা প্লেট। তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ইন্ডিয়ান ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। সেটি হচ্ছে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের হাওর হয়ে মেঘনা নদীর পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। যদি সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের হাওরটা দেখেন, তাহলে দেখবেন যে এটি উত্তর-দক্ষিণে প্রলম্বিত এবং মেঘনা নদীতে এসে পড়েছে। এটি দিয়ে যদি একটি কাল্পনিক রেখা টানেন তাহলে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মেঘনা নদী হয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান দিয়ে বার্মা ও ইন্ডিয়ান প্লেটের সংযোগ ঘটেছে। অন্যদিকে, এটির পূর্বে বার্মা প্লেট এবং পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট অবস্থিত। ইন্ডিয়ান প্লেট সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও মেঘনা নদীর লাইন বরাবর বার্মা থেকে নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। যখন একটি প্লেট আরেকটি প্লেটের নিচে তলিয়ে যায় তখন আমরা বলি সাবডাকশন জোন। এ সাবডাকশন জোন সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বিস্তৃত।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার