চাকরিচ্যুত ৫ ক্যাডার কর্মকর্তা, প্রশাসনে তোলপাড়
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৫ এএম
তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ পাঁচ ক্যাডার কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতির ঘটনায় প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কারণ দর্শানোর কোনো নোটিশ ছাড়াই বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ৪৩তম ব্যাচের তিনজন শিক্ষানবিশ সহকারী কমিশনারকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একই বিসিএসের নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারের আরো দুই কর্মকর্তাকেও চাকরিচ্যুত করা হয়।
চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা হলেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার কাজী আরিফুর রহমান, বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার অনুপ কুমার বিশ্বাস ও পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার নবমিতা সরকার, ফিন্যানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট একাডেমির সহকারী মহাহিসাবরক্ষক সোহানুর রহমান সরকার ও একই পদে থাকা কায়সার মাহমুদ।
গত দুই দিনে পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই পাঁচজনকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার বিষয়টি ছিল ‘টক অব দ্য সেক্রেটারিয়েট’। এ নিয়ে প্রশাসনে এক ধরনের উদ্বেগ বিরাজ করছে। বিশেষ করে যাঁরা গত ১৫ বছর চাকরির আচরণবিধি লঙ্ঘন করে দলীয় প্রভাবে সুবিধা নিয়েছেন, তাঁরা অনেকে চাকরি হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন।
এ ব্যাপারে প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘কারণ উল্লেখ না করে চাকরিচ্যুতি করা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। ভুক্তভোগীরা সংবিধান অনুযায়ী আদালতে গেলে এ আদেশ টিকবে না।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী কমিশনারগণকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১-এর বিধি ৬(২)(এ) মোতাবেক সরকারি চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। সরকারি চাকরিকালীন তাঁদের কাছে সরকারের কোনো প্রকার আর্থিক পাওনা থাকলে তা ‘দ্য পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট ১৯১৩’ অনুযায়ী আদায়যোগ্য হবে’।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ৪৩ ব্যাচের পুলিশ ক্যাডারের শের শাহ, শোভন কুমার বিশ্বাস, রওশন জামিল ও আশফাক ফেরদৌসকে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়োগের সময়ও অন্তত ৬৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এরপর চাকরিরত অবস্থায় বিভিন্ন ক্যাডারের আরো ১৩ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে চলছে তোলপাড়। তাঁদের কেউ কেউ এমনও বলেছেন, সরকারি চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে সাধারণত ভুক্তভোগীকে এর কারণ উল্লেখ করে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর আগে এ ব্যাপারে শুনানি করা হয়। অথচ এঁদের ক্ষেত্রে এমন কিছু করা হয়নি। এ নিয়ে প্রশাসনে অনেকে আতঙ্কে ভুগছেন। বিশেষ করে যাঁরা গত ১৫ বছর চাকরির আচরণবিধি লঙ্ঘন করে দলীয় প্রভাব দেখিয়ে সুবিধা নিয়েছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই পাঁচজন কর্মকর্তাকে কেন চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি চাকরিচ্যুতির কোনো কারণ জানে না চাকরি হারানো পাঁচজনের কেউ।
তবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১-এর বিধি ৬(২)(এ) বলা হয়েছে, ‘শিক্ষানবিশ মেয়াদ চলাকালে কোনো শিক্ষানবিশীর সংশ্লিষ্ট চাকরিতে বহাল থাকার অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হইলে কমিশনের (পিএসসি) সহিত পরামর্শ ব্যতিরেকে সরকার সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগের অবসান করাইতে পারিবেন।’
অসামরিক কর্মচারীর বরখাস্তের বিষয়ে সংবিধানের ১৩৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তিকে তাঁহার সম্পর্কে প্রস্তাবিত ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাইবার যুক্তিসংগত সুযোগদান না করা পর্যন্ত তাঁহাকে বরখাস্ত বা অপসারিত বা পদাবনমিত করা যাইবে না।’
চাকরিচ্যুত তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দুজন বলেন, ছাত্রজীবনে হলে থাকার সময় নিরুপায় হয়েই অনেককে রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে যেতে হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নায়কদের মধ্যে অনেকে সেটা করেছেন। এগুলোকে যদি অযোগ্যতা ধরা হয়, তাহলে কী আর বলব? বৈষম্যবিরোধী সরকারের কাছে আমরা ন্যায়বিচার চাই।
এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী চাকরিচ্যুত করলেও অতীতে এ ধরনের আদেশ আদালতে টেকেনি। সুনির্দিষ্ট কারণ থাকলে কাউকে চাকরিচ্যুত করাই যায়, তাতে বাধা নেই। কিন্তু কারণ উল্লেখ না করে চাকরিচ্যুতি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। যাঁরা চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাঁরা সংবিধান অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। আশা করি তারা ন্যায়বিচার পাবেন।’