যাত্রী সংকটে প্যাডেল স্টিমারের প্রথম যাত্রা বাতিল
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:২৩ এএম
ভাড়া চূড়ান্ত না হওয়া এবং যাত্রী সংকটে ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার পি এস মাহসুদের উদ্বোধনী যাত্রাই বাতিল হলো। পর্যটন সার্ভিস হিসেবে আজ শুক্রবার স্ট্রিমারটির ঢাকা-বরিশাল নৌপথে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, গত বুধ ও আজ বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা বৈঠক হলেও প্যাডেল স্টিমারের ভাড়া নির্ধারণ করা যায়নি। আগাম টিকিট বুকিংও আশানুরূপ হয়নি। মাত্র তিন-চারজন যাত্রী বুকিং করায় উদ্বোধনী যাত্রা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি।
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান বলেন, ভাড়া চূড়ান্ত হয়নি, আবার যাত্রীর সংখ্যাও খুব কম। এ কারণে ২১ নভেম্বরের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ২৮ নভেম্বর (শুক্রবার) স্টিমারটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির এক কর্মকর্তা জানান, ভাড়া নিয়ে সর্বশেষ সভায় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) প্রথম শ্রেণির কেবিন ভাড়া ৬ হাজার টাকা, নন-এসি শ্রেণির কেবিন ৪ হাজার এবং সাধারণ চেয়ারে ২ হাজার ৬০০ টাকা ভাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভাড়া আরও কমানোর চেষ্টা চলছে। আগামী রোববার নাগাদ ভাড়া চূড়ান্ত হতে পারে।
গত ২৪ অক্টোবর সকালে রাজধানীর সদরঘাট থেকে ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ রুটে পি এস মাহসুদ পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়। ১৫ নভেম্বর সকালে স্টিমারটির পুনরায় যাত্রার উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।
বিআইডব্লিউটিসি জানায়, স্টিমারটিকে আধুনিকায়নের সময় এর মূল কাঠামো ও ঐতিহাসিক নকশা অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। তবে ইঞ্জিন, নিরাপত্তা এবং ফায়ার সেফটি সিস্টেম পুরোপুরি নবায়ন করা হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে আধুনিক কেবিন, পর্যটকবান্ধব ডেক এবং ডিজিটাল নেভিগেশন ব্যবস্থা।
প্রাথমিকভাবে প্রতি শুক্রবার সকালে ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে স্টিমারটি বরিশালে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টায়। পরদিন সকালে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়বে। আগে স্টিমার সাধারণত রাতেই চলত, তবে এবার দিনে চালু করায় নদী ও তীরের দৃশ্য উপভোগে যাত্রীরা অধিক আকৃষ্ট হবেন বলে আশা করছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।
ব্রিটিশ আমলে এক শতাব্দীর বেশি সময় আগে ১৯২২ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে পি এস মাহসুদের নির্মাণ সম্পন্ন হয়। পরে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নৌযানটিকে আধুনিকায়নে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতে হয়। ১৯৮৩ সালে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ লিমিটেডে বেলজিয়ামের প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তায় স্টিমারটির স্টিম ইঞ্জিন বদলে ডিজেলচালিত নতুন ইঞ্জিন বসানো হয়। ১৯৯৫ সালে যান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে এটিকে মেকানিক্যাল গিয়ার সিস্টেমে রূপান্তর করা হয়।
২০২২ সালে স্টিমারটির নিয়মিত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঐতিহ্যবাহী এই নৌযানকে আবার সচল করতে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করে বিআইডব্লিউটিসি। নৌপথে যাত্রার উপযোগী হয়েছে পি এস মাহসুদ।