ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটদান সহজ এবং নিশ্চিত করতে পোস্টাল ভোট বিডি নামে একটি মোবাইল অ্যাপ প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ২৭ অনুসারে ইসি পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। প্রবাসীদের পাশাপাশি দেশে বসেও পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেয়া যাবে।
ভোট দিতে ইচ্ছুক প্রবাসী ও বাংলাদেশি ভোটাররা অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন।
আবেদনকারীদের তথ্যাদি যাচাই করে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মাধ্যমে ভোটারদের দেশ ও বিদেশের ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হবে। রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে প্রতীক বরাদ্দ হলে ভোটাররা অ্যাপের মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থী বিষয়ে জানতে পারবেন এবং পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।
ভোটের ব্যালট ফিরতি খামে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বরাবর ডাকযোগে পাঠাতে হবে। পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধিত ভোটার ব্যালট পেপার পাঠানোর অগ্রগতি অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণও করতে পারবেন।
নিবন্ধনের সময়
পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে নিবন্ধন শুরু হয়েছে ১৯ নভেম্বর। প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররা সংযুক্ত শিডিউল (সংযুক্তি-১) অনুযায়ী পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের মাধ্যমে ভোট দেয়ার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।
সংযুক্তি-১ এর তথ্যানুযায়ী, পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলোর প্রবাসীরা ১৯-২৩ নভেম্বর, উত্তর আমেরিকা এবং ওশেনিয়া অঞ্চলের জন্য ২৪-২৮ নভেম্বর, ইউরোপের দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীরা ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবের প্রবাসী ভোটাররা ৪ থেকে ৮ ডিসেম্বর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবাসীরা ৯ থেকে ১৩ ডিসেম্বর, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে (সৌদি আরব ছাড়া) থাকা প্রবাসীদের ১৪-১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
এছাড়া দেশে বসে যারা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে চান তাদের ১৯ থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন শেষ করতে হবে।
যেভাবে করবেন নিবন্ধন
প্রবাসী ভোটার যে দেশ থেকে ভোট দিতে ইচ্ছুক কেবলমাত্র সেই দেশের মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। প্রবাসী ভোটারদের গুগল প্লে স্টোর অথবা আইফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিবন্ধন করতে হবে। অ্যাপটির বিশেষত্ব হচ্ছে অ্যাপটির জিও লোকেশন এনাবেল বা চালু থাকবে।
মোবাইল নম্বর প্রবেশ করানোর পর ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি আসবে। ওটিপি দিয়ে মোবাইল নম্বর নিশ্চিত করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির ছবি তুলে আপলোড করতে হবে। পরবর্তীতে দিতে হবে ভোটারের ছবি।
নিবন্ধনের সময় এনআইডির সঙ্গে ওই ভোটারের ফেসিয়াল রিকগনিশনও যাচাই করা হবে। অর্থাৎ এনআইডি সার্ভারে ওই ভোটারের যে ছবি আছে, ফেস রিকগনিশনের সময় চেহারার সঙ্গে মিনিমাম ৭০ শতাংশ মিল থাকতে হবে। ক্যামেরার সামনে ডানে-বায়ে মুখ ঘুরিয়ে ভেরিফিকেশনে পর চেহারার সঙ্গে মিললে অ্যাপে ‘আপনি এখন নিবন্ধিত’ লেখা ভেসে উঠবে।
এরপর পাসপোর্ট থাকলে সেটিরও ছবি দিতে হবে। তবে নিবন্ধনের জন্য পাসপোর্টের তথ্য চাওয়া হলেও, প্রবাসী বাংলাদেশি সবার কাছে পাসপোর্ট না থাকার কারণে সেটি সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হবে না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন সূত্র।
যেহেতু নিবন্ধিত ভোটারের ঠিকানায় ব্যালট পাঠানো হবে, সে কারণে দেশে ও বিদেশে যে ঠিকানায় তিনি থাকেন সেই ঠিকানাও অ্যাপে দিতে হবে।
যেভাবে পাঠানো হবে পোস্টাল ব্যালট
পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে নিবন্ধিত সব ভোটারের কাছে পর্যায়ক্রমে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধিত ভোটাররা অ্যাপে দেয়া ঠিকানায় নির্বাচন কমিশন থেকে পাঠানো পোস্টাল ব্যালটসহ খাম পাবেন। খাম পাওয়ার পরপরই ভোটাররা মোবাইল অ্যাপে লগইন করে খামের ওপর দেয়া কিউআর কোড স্ক্যান করবেন।
এতে তিনি যে ব্যালট পেপারটি হাতে পেয়েছেন তা সিস্টেমে শনাক্ত হবে। ভোটাররা নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া বহির্গামী খামে একটি পোস্টাল ব্যালট সম্বলিত খামের মধ্যে পোস্টাল ব্যালট পেপার পাবেন। এর একপাশে ভোট দেয়ার নির্দেশাবলী ও অপর পাশে একটি ঘোষণাপত্র সম্বলিত একটি পৃথক কাগজ এবং একটি ফেরত খাম থাকবে। ওই খামে সংশ্লিষ্ট আসনের রিটার্নিং অফিসারের ঠিকানাও ছাপা থাকবে।
ভোট দিয়ে যেভাবে পাঠাবেন ব্যালট
পোস্টাল ভোটিং প্রক্রিয়ায় পাঠানো ব্যালট পেপারে সব প্রতীক ছাপানো থাকবে। আর প্রতিটি প্রতীকের পাশে থাকবে ফাঁকা ঘর। ভোট দেয়ার আগে ভোটাররা নির্দেশনাপত্র পড়ে ঘোষণাপত্রে যথাযথভাবে ব্যালট পেপারের ক্রমিক নম্বর, ভোটারের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উল্লেখ করে নির্ধারিত স্থানে স্বাক্ষর করবেন।
নিরক্ষর/অক্ষম ব্যক্তি অন্য একজন বৈধ ভোটারের সাহায্যে সংশ্লিষ্ট অংশ পূরণ করে সত্যয়ন করবেন। এই ঘোষণাপত্র/সত্যয়নপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ছাড়া ব্যালট পেপারটি বৈধ হিসাবে গন্য হবে না।
প্রতীক বরাদ্দের পর অ্যাপের মাধ্যমে অথবা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে ভোটাররা বিষয়টি জানতে পারবেন। ভোট দেয়ার জন্য ভোটাররা মোবাইল অ্যাপে লগইন করে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থীদের তালিকা দেখতে পাবেন এবং নির্দেশিকাতে প্রদত্ত পদ্ধতিতে ব্যালট পেপারে (ফরম-৭) মুদ্রিত প্রতীকের পাশে ফাঁকা ঘরে টিক (√) চিহ্ন কিংবা ক্রস (x) চিহ্ন দেবেন।
পোস্টাল ব্যালট পেপারে ভোটার ভোট চিহ্নিত করার পর শুধুমাত্র ব্যালট পেপারটি ছোট খামে রেখে সেটি বন্ধ করবেন। পরে ব্যালট পেপার সম্বলিত খাম এবং স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্র রিটার্নিং অফিসারের ঠিকানা ছাপানো খামে প্রবেশ করাতে হবে। পরে তা বন্ধ করে দ্রুততম সময়ে ডাকযোগে পাঠাতে হবে। অ্যাপের মাধ্যমে ভোটার তার পোস্টাল ব্যালটটি ট্র্যাকও করতে পারবেন।
পোস্টাল ব্যালট যেভাবে সংরক্ষণ হবে
রিটার্নিং অফিসার ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালটের খাম পাওয়ার পর তার ওপর দেয়া কিউআর কোড স্ক্যান করার মাধ্যমে রেকর্ড রাখবেন। এক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসার গণনার জন্য পাওয়া খাম খুলে প্রথমেই ঘোষণাপত্র যথাযথভাবে স্বাক্ষরযুক্ত কিনা তা পরীক্ষা করবেন। যথাযথভাবে স্বাক্ষরযুক্ত না থাকলে এর সঙ্গে পাওয়া ব্যালট পেপারটি বাতিল হিসেবে সংরক্ষণ করবেন।
তবে যথাযথ স্বাক্ষরযুক্ত ঘোষণাপত্র সম্বলিত ব্যালটের খাম গণনার জন্য আলাদা বক্সে সংরক্ষণ হবে।
পোস্টাল ব্যালটের ভোট গণনা
পোস্টাল ব্যালট পেপার গণনার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি গণনা কক্ষ থাকবে। এ সময় প্রার্থী/নির্বাচনি এজেন্ট/প্রার্থীর প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, পর্যবেক্ষকগণ অন্যান্য কেন্দ্রের মতো একই নীতিমালা অনুসরণে সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবেন। রিটার্নিং অফিসার পোস্টাল ভোট দেয়ার জন্য ডেভেলপ করা সফটওয়্যারে লগইন করে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় আসনের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে দেয়া ভোটের সামগ্রিক চিত্র দেখতে ও জানতে পারবেন।
সময়ের পর পাওয়া ব্যালটের কী হবে
সময়সীমা পার হওয়ার পর যদি কোনো ব্যালট পেপার সম্বলিত খাম রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছায়, সেক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালটসমূহ রিটার্নিং অফিসার/দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গ্রহণের তারিখ ও সময় উল্লেখসহ সংরক্ষণ করবেন। ওই সংখ্যা পরে প্রকাশ করতে হবে। এটি ভোট হিসেবে গৃহীত হবে না।
পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে পাওয়া ভোটের হিসাব একীভূত না করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা যাবে না বলেও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
প্রবাসীর সংখ্যা কত
২০২৩ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী সোয়া কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) যদিও বলছে, সংখ্যাটা ১ কোটি ৪৮ লাখের বেশি। আর একাদশ সংসদের তথ্যমতে বিদেশে বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন ১ কোটি ৫৫ লাখ।