Logo
Logo
×

জাতীয়

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি: কী পড়বেন, কীভাবে পড়বেন?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৫ পিএম

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি: কী পড়বেন, কীভাবে পড়বেন?

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে সারা দেশে ১৪ হাজার ৩৮৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এই বড় নিয়োগের আবেদনের প্রক্রিয়া বর্তমানে চলছে। প্রথম ধাপের আবেদন ২১ নভেম্বর শেষ হবে, আর দ্বিতীয় ধাপের আবেদন গ্রহণ করা হবে ২৭ নভেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। ইতোমধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি জানা গেছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।

এদিকে আবেদনকারী প্রার্থীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রস্তুতির চাপে। শেষ মুহূর্তে এসে নিজেদের আরও ঝালিয়ে নিতে চলছে তাদের বাড়তি চেষ্টা; হাজারো শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে বইছে প্রস্তুতির উত্তাপ। এই স্বল্প সময়ে পরীক্ষার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই কম সময়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি আপনি যেভাবে নেবেন তা এখানে তুলে ধরা হলো। আসুন জেনে নেওয়া যাক শেষ সময়ের কার্যকরী কিছু প্রস্তুতির কৌশল।

কিভাবে নেবেন প্রস্তুতি?

দীর্ঘ সময় ধরে একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখা অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে। কেউ পারিবারিক চাপ বা আর্থিক সমস্যার কারণে মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে নেমে যান। ফলে পরিকল্পিত প্রস্তুতি নেয়ার মতো সময় হাতে থাকে না। তাই যেটুকু সময় পাওয়া যায়, সেটাই সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে।

নিয়মিত মডেল টেস্ট দিন

প্রস্তুতি যাচাইয়ের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো প্রতিদিন অন্তত একটি মডেল টেস্ট দেওয়া। এতে নিজের অগ্রগতি বোঝা যায় এবং কোন অংশে দুর্বলতা আছে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো ঠিক করার উদ্যোগ নিলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সহজ হয়। অনলাইনে বা বাজারে পাওয়া বিভিন্ন বই থেকে মডেল টেস্ট সমাধান করতে পারেন।

পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন অনুশীলন

বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় আগের বছরের প্রশ্ন থেকেও অনেক সময় একই ধরনের বা হুবহু প্রশ্ন পুনরাবৃত্তি হয়। তাই প্রশ্নব্যাংক ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ১৫–২০ নম্বর পর্যন্ত কমন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ডিজিটাল মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন

আজকের দিনে সোশ্যাল মিডিয়া অনেককেই আসক্তির মতো আবদ্ধ করে রেখেছে। বিশেষ করে পড়তে বসলে ফোন চেক করার প্রবণতা মনোযোগ নষ্ট করে। তাই পড়াশোনার সময় ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা অপ্রয়োজনীয় ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিরত রাখা উচিত।

গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো বারবার পড়ুন

পরীক্ষার সব বিষয় সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিছু টপিক থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে—সেগুলো আলাদা করে বারবার রিভিশন করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, সহজ প্রশ্ন যেন ভুল না হয়। পরীক্ষায় ভুল করার সুযোগ নেই—তাই গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

বিগত বিসিএস প্রশ্ন সমাধান

বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় বিসিএসের প্রশ্ন থেকে অনেক প্রশ্ন নেওয়া হয়। ১০ম থেকে ৪৪তম বিসিএসের প্রশ্ন ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারলে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতির অর্ধেকই সম্পন্ন হয়ে যাবে। প্রতিদিন ৩–৪টি বিসিএস প্রশ্নপত্র অনুশীলন করতে পারেন।

কি কি বিষয় পড়তে হবে?

প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। এর মধ্যে ৯০ নম্বরের হবে লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, দৈনন্দিন বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) থেকে প্রশ্ন করা হবে। লিখিত পরীক্ষায় পাস করতে হলে সর্বনিম্ন ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা ১০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

বাংলা

এর আগে বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য থেকে ২০টি প্রশ্ন আসে। ব্যাকরণে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। অষ্টম ও নবম শ্রেণির ব্যাকরণ বই উদাহরণসহ পড়া জরুরি।

প্রধান টপিক- ভাষা, বর্ণ, শব্দ, সন্ধি, কারক, বিভক্তি, উপসর্গ–অনুসর্গ, ধাতু, সমাস, বানান, সমার্থক–বিপরীত শব্দ, বাগধারা, এক কথায় প্রকাশ, বাক্য রূপান্তর ইত্যাদি।

সাহিত্য অংশ- গল্প–উপন্যাসের রচয়িতা, কবিদের পরিচয়, বিখ্যাত কবিতার চরণ; এগুলো জানতে হবে। বিশেষত রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জহির রায়হান, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র ও জসীম উদ্‌দীন সম্পর্কিত প্রশ্ন বেশি আসে।

ইংরেজি

ইংরেজি ব্যাকরণ ও সাহিত্য থেকে মোট ২০টি প্রশ্ন হয়। ব্যাকরণ অংশে অধিক প্রশ্ন থাকে, তাই ব্যাকরণে বিশেষ মনোযোগ দিন।

টপিক- Tense, Preposition, Parts of Speech, Voice, Narration, Article, Spelling, Sentence Correction, Right form of verb, Phrase & Idioms, Synonym–Antonym, Translation ইত্যাদি।

গণিত

গণিতে দক্ষতা থাকলে পরীক্ষায় এগিয়ে থাকা যায়। শর্টকাট পদ্ধতিগুলো শিখলে সময় বাঁচে।

প্রধান টপিক- পাটিগণিত: পরিমাপ ও একক, ঐকিক নিয়ম, অনুপাত, শতকরা, সুদ, লসাগু–গসাগু, লাভক্ষতি, ভগ্নাংশ, গড়।

বীজগণিত: সূত্রাবলি, উৎপাদক, মান নির্ণয়, বাস্তব সংখ্যা।

জ্যামিতি: ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বর্গক্ষেত্র, রম্বস, বৃত্ত ইত্যাদি।

অষ্টম–নবম শ্রেণির গণিত বই অনুসরণ করলেই ভালো ভিত্তি তৈরি হবে। একটি ভালো গাইড বইও ফলো করতে পারেন।

সাধারণ জ্ঞান

সাধারণ জ্ঞান অংশে সবচেয়ে বেশি পড়াশোনা প্রয়োজন। মোট ২০টির মধ্যে প্রায় ১২–১৪টি প্রশ্ন থাকে বাংলাদেশ বিষয়াবলি থেকে।

বাংলাদেশ- শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, ঐতিহ্য, জাতিগোষ্ঠী, রাষ্ট্রব্যবস্থা, অর্থনীতি, জাতীয় দিবস, মুজিবনগর সরকার, বঙ্গবন্ধু, মুঘল ও ইংরেজ আমল।

আন্তর্জাতিক- দেশ–রাজধানী, মুদ্রা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, নোবেল, গুরুত্বপূর্ণ দিবস, খেলাধুলা, ভৌগোলিক তথ্য ইত্যাদি।

সাধারণ বিজ্ঞান- রোগ–ব্যাধি, খাদ্য ও পুষ্টি, ভিটামিন।

পত্রিকা পড়ার অভ্যাস সাধারণ জ্ঞান অংশকে আরও শক্তিশালী করে। তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত প্রশ্নও নিয়মিত আসে।

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। একটু নিয়মিত ও সুশৃঙ্খল পড়াশোনা করলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আজ থেকেই পরিকল্পিত প্রস্তুতি শুরু করুন, যাতে কেউ আপনাকে পেছনে ফেলতে না পারে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার