বিএনপি নেতা হারুনকে উকিল নোটিশ, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
পূজা শয়তানের ইবাদত বক্তব্যের জের
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১৯ এএম
‘পূজা শয়তানের ইবাদত, রোজা হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত’ এমন বক্তব্য দেয়ার ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-০৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদকে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগ তুলে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এমন বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য বলা হয়েছে উকিল নোটিশে। অন্যথায় মামলা দায়েরের কথা জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায়।
গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র সাজন কুমার মিস্ত্রীর পক্ষ থেকে এই উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। গত শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে পদ্মা নদীর অববাহিকায় পানির নায্য হিস্যার দাবিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হারুনুর রশীদসহ জেলার তিন সাবেক এমপির আয়োজনে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি জামায়াতের সমালোচনা করতে গিয়ে এই বক্তব্য দেন। বক্তব্য প্রদানের সময় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
উকিল নোটিশে বলা হয়, সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ বক্তব্যের এক পর্যায়ে পুজাকে শয়তানের ইবাদত হিসেবে উল্লেখ করেন৷ যা সারাবিশ্বের সনাতন সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে মারাত্মক আঘাতের শামিল। এই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপ্রসূত ধর্মীয় কটূক্তিমূলক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে সারা বিশ্বের সনাতন সম্প্রদায়ের মাঝে মারাত্মক ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই বক্তব্য বাংলাদেশের সংবিধান ও অসাম্প্রদায়িক এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনিমার্ণের পরিপন্থী। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বহির্বিশ্বে হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক ও সম্প্রীতির চেতনাকে ক্ষুণ্ণ করবে।
সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, দেশের সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। একজন সাবেক জনপ্রতিনিধির নিকট হতে সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক বক্তব্য শুধু কান্ডজ্ঞানহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয় বরং দেশের ধর্মীয় সংস্কৃতি বিনষ্ট করার জঘন্য প্রচেষ্টা মাত্র। এই কান্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য বাংলাদেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল ও যারা এই দেশকে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদেরকে উৎসাহিত করবে এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জাতীয়তাবাদী আদর্শের পরিপন্থী। যখন দেশ আগামী নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় এমন বক্তব্য মারাত্মক সাম্প্রদায়িক, উসকানিমূলক এবং বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারার মধ্যে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর মধ্যে দিয়ে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অভিপ্রায়।
উকিল নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ একটি জনসভায় প্রকাশ্যে জনসম্মুখে "পূজা একটি শয়তানের ইবাদত" বলে বক্তব্য প্রদান ও তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সারা বিশ্বের কোটি কোটি সনাতনী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। যা মারাত্মক ধর্মীয় কূটক্তির সামিল এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অশ্লীল, মনগড়া, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রসূত, ধর্মীয় অবমাননা ও কূটক্তিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার করে সনাতন সম্প্রদায়ের নিকট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করার আল্টিমেটাম দেয়া হয়। অন্যথায় সনাতন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের দায়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে উকিল নোটিশে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় উকিল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, আপত্তিকর বক্তব্যটি নিয়ে হারুনুর রশীদকে একটি উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জবাব না দিলে ধর্মীয় অবমাননার প্রচলিত ধারায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হবে।
এনিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ৷মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে তিনি বলেন, উকিল নোটিশের বিষয়টি আমিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখেছি। কিন্তু আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। উকিল নোটিশের কপি হাতে পেলে এর জবাব দেয়া হবে।
গত শনিবারের (১৫ নভেম্বর) গণসমাবেশে বক্তব্যের এক পর্যায়ে জামায়াতের সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর বক্তা ও যারা রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন তাদের প্রতি বিশেষ আহ্বান, এই জায়গাগুলোতে আপনাদেরকে আরও সর্তক অবলম্বন করা দরকার। কারণ আপনারা মন্দির ও মসজিদেও পরিদর্শনে যাচ্ছেন। মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে বলছেন, পূজা এবং রোজা মুদ্রার এপিট-ওপিট। মনে রাখতে হবে, পূজা হচ্ছে শয়তানের ইবাদত, আর রোজা হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত। এসময় তিনি আরও বলেন, তারা (জামায়াত) একটি ভোটের জন্য হিন্দু সম্মেলন করে বলছে, ‘হরি হরি হরি বোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোল।’