Logo
Logo
×

জাতীয়

পোস্টাল ভোটিং : অ্যাপে যেভাবে নিবন্ধন করবেন প্রবাসীরা

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৩ এএম

পোস্টাল ভোটিং : অ্যাপে যেভাবে নিবন্ধন করবেন প্রবাসীরা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা, তাদের নিবন্ধনের জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উন্মুক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন-ইসি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন অ্যাপটি উদ্বোধন করার পর নিবন্ধনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

নমুনা হিসেবে মিশর, জাপান, আরব আমিরাত, কেনিয়া ও নেদারল্যান্ডস থেকে একজন করে প্রবাসীকে নিবন্ধ করতে দেখা যায়।

পোস্টাল ভোটিং এর মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে ‘এক অনন্য সংযোজন’ বলে মন্তব্য করেছেন সিইসি।

তিনি বলেন, “আজকের অনুষ্ঠান (পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের উদ্বোধন অনুষ্ঠান) গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক অনন্য সংযোজন।”

এ সময় যারা সেখানে সরাসরি ও ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা ইতিহাসের সাক্ষী হলেন। বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটা ইতিহাস সৃষ্টি করল। সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলেন আপনারা।

“বর্তমানে প্রায় এক কোটি ৩০ লক্ষাধিক মানুষ বিদেশে বসবাস করছে। এবং বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছে। এতদিন এই বিদেশে থাকা নাগরিকরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আজকের এই উদ্যোগ সেই বঞ্চনার অবসান ঘটাচ্ছে।”

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঁচ দিন করে নিবন্ধনের সময় বেঁধে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার থেকে নিবন্ধন শুরু হবে। ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলোর প্রবাসীরা নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন।

এ ছাড়া দেশের ভেতর তিন ধরনের ব্যক্তিদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে। এ সময় বাদ পড়া প্রবাসীরাও নিবন্ধন করতে পারবেন।

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। একই দিনে একসঙ্গে গণভোটের সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নিয়ে সিইসি বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭.১ ঘোষণা করে গণতন্ত্রের মালিক জনগণ। এই মালিকানার কোন ভৌগলিক সীমানায় বাধা নয়। প্রবাসী নাগরিকরা যেমন অর্থনৈতিক নাগরিক হিসেবে ভূমিকা রাখছে, এমনভাবে গণতান্ত্রিক নাগরিক হিসেবে ভূমিকা রাখাও কর্তব্য।

“তাদের ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তি হবে আরও বিস্তৃত, প্রতিনিধিত্বশীল এবং আরও শক্তিশালী।”

তিন মাসের কিছুটা বেশি সময়ে মোবাইল অ্যাপ বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে তুলে ধরে তিনি ‘এটাকে দুঃসাহসী’ বলে দাবি করেন।

বিদেশি অনেক বিশেষজ্ঞ সায় না দিলেও কমিশন সাহস নিয়ে এগিয়ে যায় দাবি করে সিইসি বলেন, “আমি এটাকে দুঃসাহসী বলে অভিহিত করতে চাই। এটা দুঃসাধ্যের মত বিষয় ছিল।”

অ্যাপটির মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন করা যাবে এবং ভোটের বিষয়টি হবে ডাকযোগের মাধ্যমে।

তবে অ্যাপটি বাস্তবায়নে ‘অনেক চ্যালেঞ্জ’ থাকার কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই তারা ধীরে ও ধারাবাহিতা রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন।

অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন ও ডাক ভোটের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে তিন বলেন, “চ্যালেঞ্জের মধ্যে শনাক্তকরণের চ্যালেঞ্জ আছে, এখানে যতগুলো দেশে প্রবাসী থাকেন ততগুলো দেশের ডাক বিভাগ সম্পৃক্ত।”

এ সময় অ্যাপের নিবন্ধন নমুনা দেখতে কানাডায় গিয়েছিলেন তুলে ধরে সেখানে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

নাসির উদ্দিনের ভাষ্য, “ওখানে (কানাডা) শুনলাম অনেকদিন ডাক ধর্মঘট ছিল। এই অ্যাপে দেড়শর বেশি দেশকে যুক্ত করব। দেড়শর বেশি ডাক বিভাগ সম্পৃক্ত থাকবে। এধরনের ঘটনা (ধর্মঘট) যদি ঘটে যায়, আল্লাহ না করুক, তাইলে… এটা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না। এধরনের অনেক চ্যালেঞ্জে আছে কিন্তু।”

ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগে কোনো নাগরিক যেন বঞ্চিত না হয়, সে জন্য ডাক ভোট নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সিইসি।

“আজকে উদ্বোধনের মাধ্যমে আমরা শুধু অ্যাপ চালু করছি না, আমরা একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছি। যেখানে নাগরিকত্ব ভৌগলিক নয়, বৈশ্বিক। ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ আমাদের সেই বৈশ্বিক গণতন্ত্রের দরজা খুলে দিচ্ছে।”

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও প্রকল্পের টিম লিডার সালীম আহমাদ খান অ্যাপ, ভোটিং পদ্ধতির বিভিন্ন বিষয় ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন।

আর নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে এই অ্যাপে নিবন্ধন ও ভোট দেওয়ার বিষয়ে সবার সহযোগিতা চান।

কীভাবে ও কখন নিবন্ধন করবেন

আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার ও দেশের ভেতরের ব্যক্তিদের প্রসঙ্গ টেনে অ্যাপ এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি–এসডিআই)’ প্রকল্পের টিম লিডার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালীম আহমাদ খান।

নিবন্ধনের বিভিন্ন ধাপ তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রবাসীরা যে ঠিকানায় আছেন সে ঠিকানায় নিবন্ধন করতে হবে। প্রবাসের ব্যবহৃত নম্বরটি ‘ইউজার নেম’ হবে।

“বাংলাদেশে বসে নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে না। অন্যখানে (এক দেশে) বসে অন্য দেশের নামে নিবন্ধনের সুযোগ নেই। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটা ব্যবস্থাও থাকছে। ইসি, প্রকল্প, সরকার ও আন্তর্জাতিক নানা সংস্থার সমন্বয়ে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।” বলেন সালীম আহমাদ।

তালিকাভুক্তি ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া

অ্যাপ ডাইনলোড> লগইন ও রেজিস্ট্রেশন পেইজ> এনরুলমেন্ট এর জন্য একাউন্ট তৈরি> মোবাইল, ইমেইল অ্যাড্রেস, ওটিপি, ভেরিফিকেশন, পাসওয়ার্ড> লগইন উইথ ইউজারনেম (মোবাইল নম্বর) ও পাসওয়ার্ড>এনআইডি ভেরিফিকেশন>ফ্যাসিয়াল রেকগনিশন, লাইভলিনেস চেক>সেলফি>প্রবাসের ঠিকানা, পাসপোর্টসহ আণূষাঙ্গিক তথ্য>তালিকাভূক্ত ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন।

নিবন্ধনের ধাপগুলো তুলে ধরে প্রকল্পের টিম লিডার বলেন, অ্যাপ ডাউনলোড করে ভাষা নির্বাচন করে নির্দেশনা থাকবে। কয়েকটি ধাপ রয়েছে। ‘হেল্পলাইন’ রয়েছে। থাকবে ভিডিও টিউটোরিয়াল, তা সংশ্লিষ্টদের গাইড করে নিয়ে যাবে। ১০টি ধাপ দেখালেও সহজভাবে নিবন্ধন ও তালিকাভুক্ত হতে পারবেন।

তিনি বলেন, নিবন্ধন করতে কখনও কখনও ৫-১০ মিনিটও যেতে পারে। আমরা অনুমোদন করে দেব। প্রবাসে নিবন্ধন করে দেশে এসে ভোট দেওয়া যাবে না। প্রাথমিকভাবে ১৪৩টি দেশের মধ্যে প্রতিটি অঞ্চলকে পাঁচ দিন করে সময় দেওয়া হয়েছে। ৪০ দিনব্যাপী নিবন্ধন প্রক্রিয়া হবে। নিবন্ধিত হলে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার তালিকা ছাপা হবে।

দেশে ও প্রবাসে ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। বাংলাদেশ টাইম ১২টা ১মিনিটে নিবন্ধন শুরু হয়ে শেষ হবে পঞ্চম দিনে ১১টা ৫৯মিনিটে।

নিরাপদ হলেও চ্যালেঞ্জ আছে

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় নির্বাচন বাংলাদেশের ২০২৬ সালের নির্বাচন। বাংলাদেশের নির্বাচনের কতগুলো দুর্বলতার মধ্যে ছিল জনগোষ্ঠীর ৭-৮% প্রবাসীকে ভোটের মধ্যে আনতে না পারা।

২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেন। এ ধারাবাহিকতায় ইসি ধাপে ধাপে পোস্টাল ভোটিংয়ের এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, গত বছর দায়িত্ব নিয়ে ১১ দিনের মাথায় ৫ ডিসেম্বরে কাজ শুরু করেন তারা। গত বছর অংশীজনের মতামতও নেওয়া হয়। এ বছরের মে মাসে কারিগরি টিম গঠন করা হয়, সবার সাথে আলোচনা ও পরামর্শ নেওয়া হয়। আর জুনে কাজ শুরু প্রকল্পের।

পোস্টাল ভোটিং চালুর সিদ্ধান্তের পাঁচ মাসের মাথায় অ্যাপে নিবন্ধনের কাজ শুরু হল।

পোস্টাল ভোটিংয়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এ নির্বাচন কমিশনার জানান, নির্দেশনা পাঠানো হবে খামে, প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রতীক দেখে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। ফেরত খাম দেশে পাঠাবেন। ব্যালট পেপারের খাম ট্র্যাকিং করা যাবে।

এই উদ্যোগকে ব্যয় বহুল হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতি ভোটে ব্যয় হচ্ছে ৭০০ টাকা।

কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রথম চ্যালেঞ্জ নিবন্ধনের সমস্যা। বিশ্বে নিবন্ধনের হার শতকার ৩ ভাগেরও কম। নিবন্ধন করেও কম সংখ্যক প্রবাসী ভোট দেন। অন্তর্ভুক্ত করা ও নিবন্ধন করা প্রথম চ্যালেঞ্জ। প্রতি চারটি ব্যালটে একটি ব্যালট নষ্ট হয়ে যায়; নানা কারণে হয়। সময়ের অভাবে, ভুল ঠিকানা, অসচেতনার কারণে হয়ে থাকে। সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকির কথাও বলেছেন তিনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার