মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন সমন্বয় করার লক্ষ্যে ২৭ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকার ২৩ সদস্যের জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫ গঠন করে।
কমিশনের সভাপতিত্ব করেন সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান। কমিশন বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে সুপারিশ জমা দেয়ার মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করবে।
ছয়জন সদস্যের পরিবারের ব্যয় হিসাব ধরে কমিশন সুপারিশ তৈরি করবে।
প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় গত মাসের ১৪ তারিখ। কমিশনের ছয় মাস মেয়াদ অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি ১৪-এ সুপারিশ জমা দেওয়ার সময়সীমা পূর্ণ হবে।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে নতুন বেতন কাঠামোর (পে-স্কেল) ঘোষণা পিছিয়ে গেছে।
তবে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরি করবে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তা বাস্তবায়িত হবে। ইতিমধ্যে সরকারি চাকরিজীবীরা বর্তমান পে-স্কেলের অধীনে নিয়মিত ভাতা পাবেন।
এদিকে নতুন পে-স্কেল ঘোষণা পিছিয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশ হওয়ার পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বেড়েছে।
তারা আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনের সময় নির্দিষ্ট না হলে নতুন পে-স্কেল কার্যকর হতে দেরি হতে পারে।
এজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়েছে সরকারি কর্মী সম্প্রদায়।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের সমিতির ব্যানারে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
একই সঙ্গে মাঠপর্যায়ে কর্মচারীরা পে-স্কেল বিলম্বের প্রতিবাদে প্রকাশ্যে অসন্তোষ দেখাচ্ছেন।
তারা জানান, ২০১৫ সালের পর নতুন পে-স্কেল দেয়নি সরকার। গত দশকে মূল্যস্ফীতি ও দৈনন্দিন খরচ বৃদ্ধির কারণে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সরকারি কর্মীরাও আর্থিক চাপের মুখে পড়েছেন।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আগে জানিয়েছিলেন, বেতন কমিশনের প্রতিবেদন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।
দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় সময় উপযোগী বেতন কাঠামো তৈরি করা হবে।
তবে ১২ নভেম্বর তিনি উল্লেখ করেছিলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে আগামী নির্বাচিত সরকার। এই বক্তব্য প্রকাশের পর ১৪ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বলা হয়, “নতুন পে-স্কেল নির্বাচনের আগে না দিলে কর্মচারীরা কঠোর আন্দোলনে যাবে। ১ ডিসেম্বর থেকে যতদিন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হবে না, আন্দোলন চলবে।”
বর্তমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী ২০১৫ সালের পে-স্কেলে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ২০টি গ্রেড রয়েছে।
প্রায় ১৫ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী এই পে-স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা পান। নতুন পে-স্কেলে গ্রেড সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে এবং বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।