যে কোনো সময় বন্ধ হতে পারে জাহাজ চলাচল
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০২:২৯ এএম
কতিপয় মধ্যস্বত্বভোগী পণ্যের এজেন্টের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে নৌপথে পণ্য পরিবহণ সেবা। তাদের দৌরাত্ম্যে ইতোমধ্যে ৮০০ জাহাজ স্ক্র্যাপ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন থেকে বকেয়া ভাড়ার টাকা না পাওয়ায় মালিকদের পক্ষে এখন আর জাহাজ চালানো সম্ভব নয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জাহাজ মালিকদের ১০ দফা দাবি আদায় না হলে সকল দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
রোববার (১৬ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জাহাজ মালিকরা।
যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিভিওএ) ও কোস্টাল শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন বিসিভিওএ'র সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিঃ মেহবুব কবির। এ সময় আরো বক্তব্য দেন, বিসিভিওএ'র ভাইস চেয়ারম্যান জিএম সরোয়ার হোসেন, খোরশেদ আলম, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো. আলী, সাধারণ জাহাজ মালিকদের পক্ষে মো. জুবায়ের আহমেদ প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে ইঞ্জিঃ মেহবুব কবির বলেন, আমরা সরকারী পণ্য পরিবহণ নীতিমালা অনুযায়ী সিরিয়ালে পণ্য পরিবহণ করলেও ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের কতিপয় পণ্যের এজেন্ট সিন্ডিকেট সিরিয়াল বিহীন পণ্য পরিবহণ করছে। আমরা নীতিমালা অনুযায়ী সিরিয়ালে বসে থেকেও ২/৩ মাসেও একটি ট্রিপ পণ্য পরিবহণ করছি। অন্যদিকে সিরিয়াল বিহীন জাহাজগুলো অবৈধভাবে মাসে ৩/৪ ট্রিপ পণ্য পরিবহণ করছে। কিছু ফ্যাক্টরির মালিকগণ নীতিমালা অমান্য করে চার্টার জাহাজ দিয়ে পণ্য পরিবহণ করছে। তাছাড়া কতিপয় পণ্যের এজেন্ট জাহাজ মালিকদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিষ্পত্তিকৃত ২১১ কোটি টাকা পরিশোধ করছেন না। পাশাপাশি তারা জাহাজ মালিকদের পরিবহণ ভাড়া বাবদ পাওনা প্রায় ২০০ কোটি টাকাও পরিশোধ করছেন না। তাছাড়া ডেমারেজের টাকাও তারা পরিশোধ করছে না। এক্ষেত্রে নৌ পরিবহণ অধিদপ্তরও নানা টালবাহানা করছে।
তিনি বলেন, টাকার অভাবে ইতোমধ্যে অন্তত ৮০০ জাহাজ স্ক্র্যাপ হয়ে গেছে। বকেয়া টাকা না পেলে যে কোনো সময় নৌ পথে পণ্য পরিবহণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া জাহাজ বন্ধ হলে প্রতিযোগিতা মূলক পণ্য পরিবহণের পরিবর্তে সিন্ডিকেটরা একচেটিয়া ভাড়া বৃদ্ধি করবে। এতে ভোক্তার উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে জানান তিনি। এ সময় তিনি সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। তাহলো- ১. পণ্য পরিবহণ নীতিমালা-২০২৪ বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. নৌ পরিবহণ অধিদপ্তরের পক্ষপাতমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে।
৩. বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের পণ্যের এজেন্টের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে।
৪. বিডব্লিউটিসিসি পরিচালনা পরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠর ভিত্তিতে হতে হবে।
৫. বকেয়া ডেমারেজের ২১১ কোটি টাকাসহ চলমান সমস্ত ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।
৬.পণ্য পরিবহণ করে জাহাজ ভাসমান গোডাউন করা বন্ধ করতে হবে।
৭.সমস্ত জাহাজ নৌ নীতিমালা অনুযায়ী সিরিয়ালভূক্ত হয়ে চলতে হবে।
৮. ফ্যাক্টরি মালিকদের নীতিমালা বহির্ভূত চার্টার জাহাজে পণ্য পরিবহণ বন্ধ করতে হবে।
৯.বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের সদস্য ব্যতিত কমার্শিয়াল পণ্য পরিবহণ বন্ধ করতে হবে।
১০. সমুদ্র বন্দর হইতে বাল্কহেডে পণ্য পরিবহণ বন্ধ করতে হবে।
মেহবুবা কবীর বলেন, এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে। অন্যথায় ১৫ দিন পর জাহাজ চলাচল বন্ধ হলে এর দায় দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে বলে জানান তিনি।