মৃত ভেবে মর্গের ফ্রিজে ৮ ঘণ্টা, অলৌকিকভাবে কিশোরীর বেঁচে ফেরা
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম
গাজার ১২ বছর বয়সি রাঘাদ আল–আসারের জীবনে গত বছরের একটি রাত হয়ে উঠেছে দুঃস্বপ্নের মতো। ইসরায়েলের হামলায় মৃত ভেবে তাকে গাজার একটি মর্গে পাঠানো হয়। অচেতন অবস্থায় ঠান্ডা স্ল্যাবে তার দেহ পড়ে ছিল টানা আট ঘণ্টা।
রাঘাদ আল জাজিরাকে বলেন, ‘অন্যদের মতো আমরাও বাড়িতে বসে ছিলাম। হঠাৎ গুলি, যুদ্ধবিমান আর ড্রোন আমাদের ওপর আছড়ে পড়ে।’
মর্গে পাঠানোর পর ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় রাঘাদ। এক ফিলিস্তিনি ব্যক্তি নিজের সন্তানের মৃতদেহ খুঁজতে গিয়ে রাঘাদের আঙুল নড়তে দেখে দ্রুত চিকিৎসকদের খবর দেন। পরে জানা যায়, সে তখনো জীবিত। রাঘাদ বলেন, ‘আমি দুই সপ্তাহ কোমায় ছিলাম। জ্ঞান ফেরার পর আমার পরিবার বলে যে আমাকে মর্গের ফ্রিজে রাখা হয়েছিল।’
২০২৪ সালের ৮ জুনের ওই হামলায় রাঘাদের দুই বোন প্রাণ হারায়। পরিবারের অন্য সদস্যরাও গুরুতর আহত হন। রাঘাদের বড় বোনের অবস্থা এখনও শোচনীয়- এক চোখে দেখতে পান না, শরীরে গভীর ক্ষত, বার্ন, এবং পেটের জটিলতা রয়েছে।
রাঘাদের বাবা মোহাম্মদ আল-আসার জানান, হামলার খবর পেয়ে তিনি কর্মস্থল থেকে ছুটে আসেন। ধ্বংসস্তূপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খোঁজার পরও রাঘাদের কোনো সন্ধান পাননি। পরে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন, তাকে মৃত মনে করে মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার পর রাঘাদের মানসিক স্বাস্থ্য পুরোপুরি বদলে গেছে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়, ছোট শব্দেও ভয় পায়।’
রাঘাদ জানায়, সে নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখে এবং যুদ্ধের শব্দ শুনলেই আতঙ্কে কেঁপে ওঠে। তার ইচ্ছা- বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া। রাঘাদ বলেন, ‘আমি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চাই। এটা আমার স্বপ্ন। বিদেশে অন্যান্য মানুষের মতো বেঁচে থাকা একটি শিশুর অধিকার।’
গাজাজুড়ে দুই বছরের ইসরায়েলি বোমা হামলায় অনেক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে এবং শত শত চিকিৎসক নিহত হয়েছে, যার ফলে অঞ্চলটির চিকিৎসা অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। হামাস এবং ইসরায়েল গত মাসে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও, ইসরায়েল উপত্যকাটিতে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে এবং ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ২৬০ জন নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রায় ৬৪ হাজার শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৯ হাজার ১৮৭ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ৭০ হাজার ৭০৩ জন আহত হয়েছে।