প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করতে সম্পর্ক গড়ে বন্ধুর প্রেমিকা
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১৩ পিএম
রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ১০ লাখ টাকা আদায় করতে চেয়েছিল বন্ধু জরেজুল ইসলাম এবং তার প্রেমিকা শামীমা আক্তার ওরফে কোহিনুর (৩৩)। এ লক্ষ্যে শামীমা এক মাস আগে আশরাফুলের সঙ্গে ভুয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে তাকে ঢাকায় এনে খুন করে লাশ ২৬ টুকরা করে জরেজ ও শামীমা।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।
তিনি জানান, ১৪ নভেম্বর সকালে কুমিল্লার লাকসামের বড় বিজরা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে শামীমা আক্তারকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩।
তিনি আরও জানান, গত ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় ব্যবসায়ী আশরাফুল হক ব্যবসা সংক্রান্ত পাওনা আদায়ের উদ্দেশ্যে একই গ্রামের বাসিন্দা বন্ধু জরেজুল ইসলামের সঙ্গে রংপুর থেকে ঢাকায় রওনা দেন। পরদিন সকাল থেকে আশরাফুলের পরিবারের সদস্যরা তার মোবাইলে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ১৩ নভেম্বর হাইকোর্টস্থ পানির পাম্প-সংলগ্ন স্থানে দুটি নীল রংয়ের ড্রাম থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক পুরুষের ২৬ খণ্ডে গঠিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে সিআইডি নিশ্চিত হয়—মরদেহটি নিখোঁজ ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের।
সেদিন রাতেই নিহতের বোন বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় আশরাফুলের বন্ধু জরেজুল ইসলামকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জরেজের প্রেমিকা শামীমাকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শনির আখড়ার নূরপুর এলাকা থেকে রক্তমাখা সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি, হত্যায় ব্যবহৃত দড়ি, কসটেপ, একটি গোলগলা গেঞ্জি ও একটি হাফ প্যান্ট উদ্ধার করা হয়।
লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন জানান, জরেজ ও শামীমার এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জরেজ শামীমাকে জানায়—তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যাবে; এর মধ্যে ৭ লাখ নেবে জরেজ, আর ৩ লাখ পাবে শামীমা। পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা এক মাস আগে থেকেই আশরাফুলের সঙ্গে মোবাইলে নিয়মিত কথোপকথন ও অডিও-ভিডিও কলের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে থাকে। গত ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় জরেজ আশরাফুলকে নিয়ে ঢাকায় আসে। ১২ নভেম্বর তারা শামীমার সঙ্গে দেখা করে শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাসা ভাড়া নেয় এবং তিনজন সেখানে ওঠে।
তিনি বলেন, ঢাকায় আসার আগে জরেজ ফোনে শামীমাকে নির্দেশ দেয়—আশরাফুলের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে তা দিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায় করতে হবে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা আশরাফুলকে মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ফেলে, যাতে বাইরে থেকে জরেজ ভিডিও ধারণ করলেও আশরাফুল কিছু বুঝতে না পারে। এই ভিডিও শামীমার মোবাইলে সংরক্ষিত ছিল, যা উদ্ধার করা হয়েছে।
শামীমার বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ তার হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে মুখ কসটেপ দিয়ে আটকায়। পরে ইয়াবা সেবন করে উত্তেজিত অবস্থায় অচেতন আশরাফুলকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে জরেজ। অতিরিক্ত আঘাত এবং মুখ বন্ধ থাকার কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই আশরাফুল মারা যান। এরপর লাশ একই ঘরে রেখে রাত্রীযাপন করে জরেজ ও শামীমা এবং তারা শারীরিক সম্পর্কেও লিপ্ত হয়।
লে. কর্নেল আরেফীন আরও বলেন, লাশ গুম করতে ১৩ নভেম্বর সকালে জরেজ কাছাকাছি বাজার থেকে চাপাতি ও ড্রাম কিনে আনে। এরপর চাপাতি দিয়ে লাশ ২৬ টুকরা করে দুইটি নীল ড্রামে ভরে। দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রাম দুটি বহন করে। পথে ধরা পড়ার আশঙ্কায় সিএনজি পরিবর্তনও করে। দুপুর ৩টা ১৩ মিনিটে হাইকোর্ট মাজার গেট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে তারা ড্রামগুলো রাস্তার পাশে একটি বড় গাছের নিচে ফেলে দ্রুত অটোরিকশায় করে সায়দাবাদে চলে যায়। সেখানে গিয়ে জরেজ শামীমাকে কুমিল্লায় বাড়ি ফিরে যেতে বলে এবং নিজে রংপুরে চলে যাওয়ার কথা জানায়। শামীমা কুমিল্লায় চলে গেলে জরেজের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।
তিনি জানান, শামীমার বক্তব্য অনুযায়ী, ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতানোই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। তবে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো শত্রুতা আছে কি না—তা মূল আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে।
উল্লেখ্য, হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি জরেজুল ইসলামকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।