Logo
Logo
×

জাতীয়

৫০ জেলায় নতুন ডিসি, নির্বাচনি মাঠ সাজাচ্ছে সরকার

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১৪ এএম

৫০ জেলায় নতুন ডিসি, নির্বাচনি মাঠ সাজাচ্ছে সরকার

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন সাজাতে শুরু করেছে সরকার। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পুলিশ প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনে রদবদল শুরু হয়েছে। তবে এবার মাঠ পর্যায়ে এমন কর্মকর্তাদের বেছে নেওয়া হচ্ছে যারা বিগত ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেননি।

মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও নির্ভেজাল নির্বাচন উপহার দেওয়া সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ কারণে নির্বাচনকালীন দায়িত্বে যারা থাকবেন, তাদের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই বাছাই করে যোগ্য কর্মকর্তাদেরই মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বে রাখা হবে।

সূত্রমতে, চলতি নভেম্বর মাসে চার ধাপে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫০টিতে নতুন ডিসি পদায়ন করেছে সরকার। গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ডিসি ‘ফিট লিস্ট’ থেকে বাছাই এবং অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন শেষে এই কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখনও ১৪ জেলায় ডিসি পদায়ন বাকি রয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন শাখার একজন উপসচিব জানান, বাকি ১৪ জেলাতেও নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কয়েকটি জেলায় সম্প্রতি ডিসি পদায়ন হওয়ায় তাদের রাখা হবে, নাকি বদলি করে নতুন কাউকে আনা হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আসবে।

একটি সূত্র বলছে, “আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট হতে বিগত তিনটি পাতানো নির্বাচনে ন্যূনতম যুক্ত থেকেও সহায়তা করেছে, তাদেরকে ‘ছাঁকনির মতো করে ছেঁকে ছেঁকে’ বাদ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।”

সূত্রটি আরও জানায়, “এমন কোনো কর্মকর্তাকে নির্বাচনকালে সরকার দায়িত্বে রাখতে চায় না, যাকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে।”

৫০ ডিসির ৪৩ জনই নতুন মুখ

গত ২৮ অক্টোবর থেকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে পদায়নের জন্য ‘ফিট লিস্ট’ তৈরির সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর ৮ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত চার ধাপে ৫০ জেলায় ডিসি নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই ৫০ জনের মধ্যে ৪৩ জনই নতুন, বাকি ৭ জন এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলি হয়েছেন।

নিয়োগপ্রাপ্ত ডিসিরা নিজ নিজ জেলায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রথম ধাপ: গত ৮ নভেম্বর রাতে ১৫ কর্মকর্তাকে ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়। এদের মধ্যে ৯ জন নতুন এবং ৬ জনকে অন্য জেলায় বদলি করা হয়।

নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন: সন্দ্বীপ কুমার সিংহ (বরগুনা), মো. আমিনুল ইসলাম (সিরাজগঞ্জ), মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (মাগুরা), আবু সাঈদ (পিরোজপুর), মিজ আফরোজা আখতার (সাতক্ষীরা), গোলাম মো. বাতেন (বাগেরহাট), স. ম. জামশেদ খোন্দকার (খুলনা), মো. ইকবাল হোসেন (কুষ্টিয়া) এবং ডা. শামীম রহমান (ভোলা)।

বদলি হওয়া কর্মকর্তারা হলেন: আহমেদ কামরুল হাসান (বাগেরহাট থেকে নোয়াখালী), আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন (কুষ্টিয়া থেকে হবিগঞ্জ), মো. আজাদ জাহান (ভোলা থেকে গাজীপুর), মোহাম্মদ শফিউল আলম (বরগুনা থেকে ঢাকা), মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম (সিরাজগঞ্জ থেকে গাইবান্ধা) এবং মো. তৌফিকুর রহমান (খুলনা থেকে বগুড়া)।

দ্বিতীয় ধাপ: ৯ নভেম্বর ১২ জন উপসচিবকে নতুন ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়। তারা হলেন: মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ (ঝিনাইদহ), মোহাম্মদ ইউসুপ আলী (জামালপুর), লুৎফুন নাহার (মেহেরপুর), মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা (কিশোরগঞ্জ), মো. মমিন উদ্দিন (ঝালকাঠি), মো. আরিফ-উজ-জামান (গোপালগঞ্জ), মোহাম্মদ কামাল হোসেন (চুয়াডাঙ্গা), কাজী মো. সায়েমুজ্জামান (পঞ্চগড়), মো. আল মামুন মিয়া (জয়পুরহাট), মো. সাইফুর রহমান (ময়মনসিংহ), নাজমুন আরা সুলতানা (খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা) এবং মো. নাজমুল ইসলাম সরকার (চাঁদপুর)।

এছাড়া শারমিন আক্তার জাহানকে নড়াইল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং মোহাম্মদ আবদুল ছালামকে মেহেরপুর থেকে নড়াইলে বদলি করা হয়।

তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপ: গত ১৩ নভেম্বর রাতে পৃথক দুই প্রজ্ঞাপনে আরও ২৩ জেলায় ডিসি পদে রদবদল করা হয়।

তৃতীয় ধাপে ১৪ জন নতুন ডিসি হলেন: শাহেদ মোস্তফা (পাবনা), মো. রেজাউল করিম (ঢাকা), মোহাম্মদ এনামূল আহসান (রংপুর), মোহাম্মদ আশেক হাসান (যশোর), সৈয়দ এনামুল কবির (মেহেরপুর), মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম (নোয়াখালী), মোহাম্মদ আলম হোসেন (গাজীপুর), মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা (গাইবান্ধা), অন্নপূর্ণা দেবনাথ (কুড়িগ্রাম), জাহাঙ্গীর আলম (মাদারীপুর), তৌহিদুজ্জামান পাভেল (মৌলভীবাজার), মো. খায়রুল আলম সুমন (বরিশাল), তাছলিমা আক্তার (বরগুনা) এবং নাজমা আশরাফী (রাঙ্গামাটি)।

চতুর্থ ধাপের প্রজ্ঞাপনে ৮ জন নতুন ডিসি হলেন: এস এম মেহেদী হাসান (লক্ষ্মীপুর), সৈয়দা নুরমহল আশরাফী (মুন্সীগঞ্জ), মো. সাইফুর রহমান (নেত্রকোনা), মো. শাহাদাত হোসেন মাসুদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (নওগাঁ), মো. আনোয়ার সাদাত (খাগড়াছড়ি), মু. রেজা হাসান (কুমিল্লা) এবং মো. রায়হান কবির (নারায়ণগঞ্জ)।

একই প্রজ্ঞাপনে নারায়ণগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞাকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়।

এসপি পদেও আসছে রদবদল

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ডিসি পদায়নের পর দ্রুতই পুলিশ সুপার (এসপি) পদেও পদায়ন করা হবে। নির্বাচনের আগে এসপি পদে বড় ধরনের পদোন্নতিসহ বিভিন্ন জেলায় নতুন এসপি নিয়োগ ও রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগেই অন্তত ১৫টি জেলার এসপি বদল হতে পারে বলে পুলিশের আইজিপির দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে, গত ৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশের ২৭৩ জন উপপরিদর্শককে (এসআই) পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪৮ জন নিরস্ত্র, ৯৭ জন সশস্ত্র এবং ২৮ জন সিটি ও ট্রাফিক সার্জেন্ট রয়েছেন। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের বিভিন্ন থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে পদায়ন করা হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনও (ইসি) কর্মকর্তাদের বদলি শুরু করেছে। গত ৮ নভেম্বর ইসির এক প্রজ্ঞাপনে ২৩ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়, যাদের মধ্যে ২১ জন নির্বাচন কর্মকর্তা এবং ২ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রয়েছেন।

বিতর্কমুক্ত কর্মকর্তা খুঁজছে সরকার

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কোনো ডিসি বা এসপিকে আগামী নির্বাচনে রাখা হবে না। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবও বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন।

তবে দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, পুলিশ বাহিনীতে এমন পুরনো সদস্য খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি ওই তিনটি নির্বাচনের কোনো একটিতেও দায়িত্ব পালন করেননি। আবার স্বল্পসংখ্যক নতুন সদস্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের মতো বড় আয়োজন সম্পন্ন করাও সম্ভব নয়।

জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক থাকায় বাহিনীটির সদস্যদের মধ্যে মনোবল কিছুটা কম। এ অবস্থার মধ্যেই তাদের আসন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

গত ১২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের যথাসম্ভব দায়িত্ব দেওয়া থেকে বিরত রাখার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

নির্বাচনকালে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ডিসিরা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় এসপিরা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এ পরিস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা মাঠ প্রশাসন ও পুলিশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার