গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ, আজ তাঁর জন্মদিন
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০১:০২ পিএম
বাংলা সাহিত্যের এক অমর নাম হুমায়ূন আহমেদ। কথার জাদুতে কোটি পাঠকের হৃদয় জয় করা এই লেখক আজও জীবন্ত তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে। ১৩ নভেম্বর বাংলা সাহিত্যের এই কিংবদন্তির জন্মদিন।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জে মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। পিতা ফয়জুর রহমান আহমেদ একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং মা আয়েশা ফয়েজ।
পিতার সরকারি চাকরির সুবাদে তাঁর শৈশব দেশের নানা প্রান্তে কেটেছে। শৈশবে ডাকনাম ছিল ‘কাজল’, পরবর্তীতে পিতার ইচ্ছায় নামকরণ করা হয় হুমায়ূন আহমেদ।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর পিতা পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহীদ হন। এই ট্র্যাজেডি তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন লেখায় প্রতিফলিত হয়েছে।
বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
ছাত্রাবস্থাতেই সাহিত্যিক প্রতিভার উন্মেষ ঘটে। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ তাঁকে রাতারাতি আলোচনায় নিয়ে আসে। এরপর শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্প, দেয়ালসহ অসংখ্য জনপ্রিয় উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে অবদান রাখে।
তাঁর সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্র দুটি বাঙালি সংস্কৃতিতে চিরস্থায়ী হয়ে আছে। হিমুর ভাববিলাসী জীবনধারা ও মিসির আলির যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ পাঠকের কল্পজগতে এক বিশেষ স্থান দখল করেছে।
সাহিত্যের পাশাপাশি নাটক ও চলচ্চিত্রেও হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন যুগান্তকারী নির্মাতা। তাঁর নাটক প্রচারের সময় রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যেত। উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো ‘এইসব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, আজ রবিবার’।
চলচ্চিত্রে ‘আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, ঘেটুপুত্র কমলা’ তাঁকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেয়।
দীর্ঘ চার দশকের সৃষ্টিশীল জীবনে তিনি অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪)সহ অসংখ্য সম্মাননা। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইয়র্কে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর দেহ শায়িত আছে নুহাশপল্লীতে।