Logo
Logo
×

জাতীয়

সিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা ফাঁসের নেপথ্যে কারা

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৪ এএম

সিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা ফাঁসের নেপথ্যে কারা

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপির) অভ্যন্তরীণ গোপন নির্দেশনা বারবার ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই নির্দেশনার অয়্যারলেস রেকর্ড চলে যাচ্ছে বাইরে। অপারেশনাল তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বেকায়দায় রয়েছে সিএমপি। 

সর্বশেষ মঙ্গলবার সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দেখা মাত্রই ব্রাশফায়ারের নির্দেশনা দেন। এ নির্দেশনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তা বাইরে চলে আসে। গণমাধ্যমও তা লুফে নেয়। এর আগে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযানের একটি নির্দেশনাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর নেপথ্যে কারা রয়েছে-সেই প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে।

৫ নভেম্বর নগরীর চালিতাতলীর খোন্দকারপাড়ায় চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগে সন্ত্রাসীর গুলিতে মারা যান তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা। গুলিতে আহত হন এরশাদ উল্লাহ নিজেও। পরদিন একই এলাকায় এক অটোরিকশা চালককে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর জেরেই সিএমপি কমিশনার মঙ্গলবার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন। 

এদিকে নগর পুলিশের শীর্ষ কর্তার গোপন নির্দেশনা বা অয়্যারলেস বার্তা কীভাবে, কার মাধ্যমে ফাঁস হলো তা বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। পুলিশের মধ্য থেকেই কেউ এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে সিএমপি ধারণা করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পুলিশ সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে অপরাধীদের গ্রেফতার ও অপরাধ দমনে। আর এ কাজ করতে পুলিশকে নানামুখী কর্মকৌশল বা স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে হয়। এসব পরিকল্পনা অত্যন্ত গোপনে হাতে নেওয়া হয়। যাতে পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগেন। অন্তর্বর্তী সরকারের ১৫ মাস হলেও আওয়ামীপন্থি সিন্ডিকেটের পুলিশ কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। 

সিএমপির পুলিশ সদর দপ্তরসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত থেকে তারা কৌশলে সরকারের গোপন তথ্য পলাতক কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে ফাঁসও করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামীপন্থি পুলিশ কর্মকর্তাদের তথ্য ফাঁসের কারণেই জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ভাটা পড়েছে। শুধু তাই নয়, পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা নানাভাবে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন তাদেরও সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে আওয়ামীপন্থি পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, সিএমপি কমিশনারের সংবেদনশীল গোপন বেতার বার্তা ফাঁস হওয়া ভালো লক্ষণ নয়। এমন বার্তা ফাঁসের পর অনেক সদস্য একে অপরকে সন্দেহ করতে শুরু করেন। এতে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙে যায়। নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়। অয়্যারলেস বার্তা সাধারণত কমিশনার থেকে প্রতিটি বিভাগ, জোন, থানা ও টহল টিম পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। এর বাইরে যাওয়ার মানে হচ্ছে ভেতরের কেউ সচেতনভাবে ওই বার্তা রেকর্ড করছে বা সরবরাহ করছে। এমন ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কয়েক দফায় সিএমপি কমিশনার বেতার বার্তায় নির্দেশনা দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘শটগান হবে না, চায়না রাইফেলও বাদ, এখন এসএমজি ব্রাশফায়ার মুডে থাকবে।’

এর আগে ১২ আগস্ট সিএমপি কমিশনার আরেকটি অয়্যারলেস বার্তায় বাহিনীর দায়িত্বরত সদস্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন, অস্ত্রধারী দেখা মাত্রই গুলি চালাতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে ওই বার্তা ছড়িয়ে পড়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন সিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তা। পরে বক্তব্য ফাঁস করার অভিযোগে অমি দাশ নামে এক কনস্টেবলকে গ্রেফতার করা হয়। অমি দাশ পুলিশের টেলিকম ইউনিটের কনস্টেবল ছিলেন। তিনি প্রেষণে সিএমপির খুলশী থানায় কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টে মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল।

সর্বশেষ বার্তা ফাঁস করার সঙ্গে কারা জড়িত, চিহ্নিত করা গেছে কিনা এ বিষয়ে সিএমপির গণসংযোগ শাখার সহকারী কমিশনার আমিনুর রশীদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার