Logo
Logo
×

জাতীয়

লটারি পদ্ধতিতে মাধ্যমিকে ভর্তি চাচ্ছেন না শিক্ষকরা, কারণ কী?

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৬ এএম

লটারি পদ্ধতিতে মাধ্যমিকে ভর্তি চাচ্ছেন না শিক্ষকরা, কারণ কী?

২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় সাময়িকভাবে চালু হওয়া ডিজিটাল লটারি পদ্ধতি এখন সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ার ‘স্থায়ী নিয়ম’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছেন শিক্ষকরা। তাদের মতে, লটারি পদ্ধতিতে ভর্তি চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কমে যাচ্ছে, আর মেধার মূল্যায়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

গত ২৭ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি লটারি পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানিয়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষেও সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম লটারি পদ্ধতিতেই সম্পন্ন হবে।

শিক্ষকরা বলছেন, মেধাভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা না থাকায় একই শ্রেণিতে মেধাবী ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে পড়ছে, ফলে পাঠদানে ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

‘যে মনোযোগী, তারাও আগ্রহ হারাচ্ছে’

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক ও সমিতির সদস্যসচিব মো. আব্দুল মুবীন গণমাধ্যমে বলেন, ‘একই ক্লাসে মেধাবী ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীকে একসাথে সমানভাবে শেখানো কঠিন হয়ে পড়ে। আমি চল্লিশ মিনিট ক্লাস নেই, কখন এদেরকে বোঝাবো, কখন নিয়ন্ত্রণ করব। যে অল্প কয়েকজন মনোযোগী থাকে তারাও আগ্রহ হারায়।সরকারি সিদ্ধান্ত আমরা মানতে বাধ্য, কিন্তু আমরা বিষয়গুলো বলার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিভাবকরা প্রায়শই বলছেন— ভর্তি পরীক্ষা হলে, আমার বাচ্চা যদি কোয়ালিফাই না করে তাহলে আমি অন্তত বুঝতে পারব আমার বাচ্চার ঘাটতি আছে। যখন লটারির মাধ্যমে হয় তখন সে সুযোগ থাকছেই না বরং এই প্রক্রিয়া শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক সবার উপর মানসিকভাবে প্রভাব ফেলছে।’

প্রতিযোগিতা কমছে, ফলাফলেও প্রভাব পড়ছে

সবুজবাগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও সংগঠনের সমন্বয়ক আবদুস সালাম গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি এ বিদ্যালয়ে একসময় দেখেছি শিক্ষার্থীরা প্রচুর আগ্রহী পড়াশুনায়। সেসময় প্রচুর প্রতিযোগিতা ছিল, কিন্তু লটারি ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর এখন তা একদমই কমে যাচ্ছে। আমরা চাই, মেধা বিকাশের জন্য সব জায়গায় প্রতিযোগিতা তৈরি হোক।’

ময়মনসিংহের এক সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গণমাধ্যমে বলেন, ‘লটারি শুধু প্রথম শ্রেণির জন্য ঠিক আছে। কিন্ত অন্যান্য শ্রেনীতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা আগের শ্রেণিগুলো সম্পন্ন করেছে কি না তা যাচাই করা যায় না। একেবারে স্কুলেই যায়নি এমন শিক্ষার্থীও লটারিতে আবেদন করতে পারছে এবং ভর্তির সুযোগও পাচ্ছে। ফলে শ্রেণিকক্ষে মিশ্র অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষার্থী থাকছে। যারা পূর্ববর্তী শ্রেণিগুলো সম্পন্ন করেনি তাদের এগিয়ে নেওয়া একেবারেই দূরুহ ব্যাপার।’

‘লটারি নয়, ক্যাচমেন্ট ভিত্তিক ভর্তি প্রয়োজন’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘লটারি কিংবা ভর্তি পরীক্ষা কোনোটাই শিক্ষাব্যবস্থার জন্য যৌক্তিক না। বিশেষ করে, লটারি সিস্টেম বাজে সিদ্ধান্ত। বৈশ্বিক মানদন্ড ও নিয়ম অনুযায়ী আমাদের উচিত, ক্যাচমেন্ট এরিয়া অনুযায়ী ভর্তি করানো। অর্থাৎ বিদ্যালয়ের পাশে যারা থাকে তারা সে স্কুলে পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে, কিন্তু আমরা দিচ্ছি মাত্র ১.৭ থেকে ১.৯ শতাংশ। এই কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।’

অন্যদিকে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন,

‘শিক্ষার্থীদের ভর্তি সুযোগ মেধার ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে। লটারি দিয়ে তা সম্ভব নয়। ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার মান নির্ধারণ করা যাবে না।’ 

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, লটারি পদ্ধতি চালু থাকলে শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না। এতে শিক্ষার মান কমছে, শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ ও প্রতিযোগিতার পরিবেশও হারিয়ে যাচ্ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার