মানবপাচার মামলা বায়রার নেতাকে গ্রেপ্তারের পর জিম্মায় মুক্তি
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৩৩ এএম
মানবপাচার ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা এক মামলায় জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠনের (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ছেড়ে দিয়েছে বনানী থানা পুলিশ। সোমবার (১০ নভেম্বর) রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সরোয়ার বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে মামলার সঙ্গে আসামীর সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় এবং অসুস্থতা বিবেচনায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাকে আইনজীবীর জিম্মায় ছাড়া হয়েছে। তিনি নির্ধারিত তারিখে আদালতে আত্মসমর্পন করবেন সেই শর্তে তাকে গ্রেপ্তার করে রাখা হয়নি।’
পুলিশের পক্ষ থেকে এই দাবি করা হলেও বায়রার একাধিক সদস্য ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গ্রেপ্তার আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার পেছনে মোটা অঙ্কের লেনদেন হয়েছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
থানা পুলিশ জানিয়েছে, যথাযথ নিয়ম মেনে এবং পুলিশের উর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলোচনা করেই তাকে ছাড়া হয়েছে।
বায়রার সাবেক নেতা ফখরুল ইসলাম এবং তার সহযোগী জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ৪ নভেম্বর বনানী থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। আরইউএল ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার মো. রুবেল হোসেন এই মামলাটি করেছেন। মামলায় প্রায় ৩ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজহারে রুবেল হোসেন উল্লেখ করেন, ফখরুল ইসলাম ও জসিম উদ্দিন তাকে মালয়েশিয়ার নিউ ভিশন গ্রীন ল্যান্ড এসএনডি, চাই চাং ফুড ইন্ডাস্ট্রি এসএনডিসহ ভালো ভালো কোম্পানিতে শ্রমিক পাঠানোর মিথ্যা আশ্বাস দেন। মৌখিক চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৭ মে ৫৫ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় প্রেরণের জন্য কর্মীপ্রতি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে নগদ মোট ৩ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা তিনি আসামিদের হাতে তুলে দেন। এরপর আসামিরা মোট ২৮ জন কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠালেও, চুক্তি মোতাবেক কোম্পানিতে কাজ না দিয়ে তাদেরকে অন্য জায়গায় নিয়ে আটকে রাখে, ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্যাতন করে এবং পুনরায় টাকা দাবি করে। বাদির চাপের মুখে শ্রমিকদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেও, আসামীরা কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি।
এজহারে আরও বলা হয়, বর্তমানে আসামিদের কাছে বাদীর পাঠানো ২৮ জন কর্মীর সমস্যা সমাধান বা তাদের দেশে ফেরত আনার খরচ বাবদ এবং অন্যদের জন্য জমা দেওয়া আরও ১ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। আসামীরা সেই টাকা ফেরত না দিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
মামলা হওয়ার পর বনানী থানার এসআই সাগর শাহরিয়া পুলিশের ইমিগ্রেশন শাখায় আবেদন করেন। যেখানে তিনি জানান, ফখরুল ইসলাম ও তার সহযোগী জসিম উদ্দিন যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে আদালত ইমিগ্রেশন পুলিশকে আদেশ দিয়েছে। এই দুজনকে বিদেশ গমনাগমনের সময় ইমিগ্রেশন বা বিমানবন্দরে আটক করা বিশেষ প্রয়োজন।
আদালতের আদেশ ও থানা পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০ নভেম্বর ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ।