‘এই সরকার কমিশন করেছে, এই সরকারকেই পে স্কেল দিতে হবে’
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৪ পিএম
নতুন পে-স্কেল ঘোষণায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সাম্প্রতিক মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী সংগঠনের নেতারা। অর্থ উপদেষ্টা সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নতুন পে-স্কেল কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকার নেবে। তার এই বক্তব্যের পর কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন কয়েকটি কর্মচারী সংগঠন। তারা বলছেন, ‘তারা আজ বৈঠক ডেকেছেন, যেখানে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবির জানান, ‘যেহেতু এই অন্তর্বর্তী সরকারই পে কমিশন গঠন করেছে, তাই নতুন পে-স্কেলও এই সরকারকেই দিতে হবে।’ তিনি বলেন, নভেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে পে কমিশনের সুপারিশ জমা না পড়লে তারা কমিশনের ওপর চাপ বাড়ানো হবে। পাশাপাশি বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণেরও ইঙ্গিত দেন এই কর্মচারি নেতা।
তথ্যমতে, গত ১১ বছর পর নতুন পে-স্কেল দেওয়ার জন্য এই অন্তর্বর্তী সরকার পে কমিশন গঠন করে। কমিশনের মেয়াদ আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ইতোমধ্যে কমিশন অনলাইনে মতামত গ্রহণ, বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন ও সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। এসব সংগঠনের নেতাদের দাবি, কমিশন তাদের প্রস্তাবগুলো গ্রহণে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছিল, যা কর্মচারীদের মধ্যে আশা তৈরি করেছিল। তবে অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্যের পর এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরাও বলছেন, সরকারি আর্থিক সক্ষমতা নিশ্চিত না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নতুন সরকারের ওপর ছেড়ে দিতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম বলেন, নতুন অর্থবছরে সবকিছু ভেঙেচুরে অর্থনীতিকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাবে। সেই পরিকল্পনা থেকেই কমিশন গঠনের পর বলা হয়েছিল এই সরকারই নতুন বেতন স্কেল দেবে। কিন্তু আর্থিক জোগান নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়ে অর্থ উপদেষ্টা নতুন এই ঘোষণা দিয়েছেন।
ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, এই সরকার শেষ পর্যন্ত পে স্কেল ঘোষণার দায়িত্ব পরবর্তী সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে, এটাই অনুমেয় ছিল। সরকারের বিভিন্ন ব্যয় এবং ঋণের সুদ যে পরিমাণে পরিশোধ করতে হয়, সে তুলনায় আয় করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এই অবস্থায় অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। ফলে ৮০-১০০ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব না। পরবর্তীতে যে সরকার আসবে তাদের পক্ষেও অর্থনৈতিক কাঠামো ঠিক করে অন্তত এক বছরের মধ্যে এমন বেতন বাড়ানো কঠিন হবে।
দেশ এখন নির্বাচনমুখী মন্তব্য করে এই অধ্যাপক বলেন, নির্বাচন নিয়েও একটা ব্যয় আছে। গণভোট আলাদা করে হলে সেখানে বড় ধরনের ব্যয় হবে। সবকিছু মিলে এই সরকার চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন প্রণয়ন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।
তবে অবস্থা যাই হোক, দৃষ্টি এখন ৩০ নভেম্বরের দিকে; সেদিনের মধ্যেই পে কমিশন সুপারিশ জমা দিতে পারে কি না এবং পরবর্তীতে কর্মচারীরা কী পদক্ষেপ নেন, সেটিই এখন সরকারি চাকরিজীবীদের মূল ভাবনা।