সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে―বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বিএনপি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার জন্য এক সহযাত্রীকে চড় মেরেছেন একজন বিএনপি নেতা! যা প্রকৃত অর্থে সঠিক নয়।

রোববার (৯ নভেম্বর) তথ্য যাচাইকারী একটি সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সহযাত্রীকে চড় দেয়া ওই ব্যক্তির নাম আবদুল সুবহান। অস্বাভাবিক আচরণের কারণে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে উড্ডয়নের আগে জেদ্দায় বিমান থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে তাকে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম।

এর আগে গত ৭ নভেম্বর রাতে ‘ডাক্তার আইজউদ্দিন’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশ করা হয় ১০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি। যেখানে দেখা যায়, একটি বিমানের মধ্যে একজন টুপি পরা ব্যক্তি আরেকজন যাত্রীকে চড় মেরেছেন এবং তাদের দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যেই আরেক যাত্রী টুপি পরা ব্যক্তিকে পেছন থেকে টেনে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘বিএনপির অত্যাচারে দেশ ছেড়েছি বলায় যুবকের গালে থাপ্পড় দিচ্ছেন বিএনপি নেতা রফিক আজাদ! মব চলছে মাটিতে-পানিতে এবং আকাশে।’ আর এই ভিডিওটি এ পর্যন্ত তিন শতাধিক শেয়ার হয়েছে। কমেন্ট এসেছে ষাটটিরও বেশি। আবার অন্যান্য একাধিক ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্ট থেকেও শেয়ার করা হয়েছে ভিডিওটি।

এ ঘটনার সত্যতার যাচাইয়ের জন্য ভিডিওর একাধিক কিফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একই দৃশ্যযুক্ত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যার ক্যাপশনে লেখা ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যাত্রীদের হাতাহাতি।’ পোস্টে বিভিন্ন ব্যক্তির মন্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আবদুর রহমান সেলিম নামের এক ব্যক্তি ওই ফ্লাইটে ছিলেন জানিয়ে মন্তব্য করেছেন। তার প্রোফাইলে গত ৫ নভেম্বর সৌদির জেদ্দায় অবস্থিত আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে সিলেটের উদ্দেশে যাত্রার একটি ট্রাভেলিং ট্যাগ যুক্ত পোস্টও খুঁজে পাওয়া গেছে। 

আবদুর রহমান জানিয়েছেন, একই ফ্লাইটে ছিলেন তিনি। বিমান উড্ডয়নের আগ থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন ওই যাত্রী। গালিগালাজও করছিলেন। আবার বিমানের মধ্যে বারবার সিজদাহ দিচ্ছিলেন তিনি। তাকে কোনোভাবেই সিটে বসানো যাচ্ছিল না। এ কারণে প্রায় এক ঘণ্টা দেরি হয় ফ্লাইটে। একপর্যায়ে বিমানে থাকা অন্য যাত্রী বিষয়টি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলে অস্বাভাবিক আচরণকারী ওই যাত্রী চড় মারেন তাকে। পরবর্তীতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা এসে বিমান থেকে নামিয়ে দেয় তাকে এবং তার ফ্লাইট বাতিল করে।

আবদুর রহমান আরও জানান, ওই ফ্লাইটের নম্বর হচ্ছে BG 236. যা গত ৫ নভেম্বর সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে বাংলাদেশের সিলেটের উদ্দেশে রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে যাত্রার জন্য নির্ধারিত ছিল।

এদিকে বিমানের ভেতর অস্বাভাবিক আচরণকারী ব্যক্তির সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বিমান বাংলাদেশের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বিমান বাংলাদেশ জেদ্দার স্টেশন মাস্টারের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত স্টেটমেন্ট প্রদান করে। এ কর্মকর্তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আরেকজন যাত্রীকে চড় দেয়া ওই ব্যক্তির নাম আবদুল সুবহান। গত ৫ নভেম্বর সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে সিলেটের উদ্দেশে আসা বিজি ২৩৬ (BG 236) ফ্লাইটের ২২ডি নম্বর সিটের যাত্রী ছিলেন। অস্বাভাবিক আচরণ ও মানসিক সমস্যার জন্য অন্যসব যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিমান থেকে নামিয়ে দেয়া হয় তাকে।

আর বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রদান এসব তথ্য বিমানে থাকা আরেক যাত্রী আবদুর রহমানের বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যায়। এ জন্য বিমান বাংলাদেশের জেদ্দা স্টেশন ম্যানেজারের স্বাক্ষরিত কাগজপত্র, জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের দেয়া তথ্য এবং একই বিমানে থাকা অন্য যাত্রীর তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে―ছড়িয়ে পড়া দাবিটি মিথ্যা ও অসত্য। অর্থাৎ, বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটে সহযাত্রীকে চড় দেয়া ব্যক্তি বিএনপি নেতা নন রফিক আজাদ নন এবং তার নাম আবদুল সুবহান।