Logo
Logo
×

জাতীয়

শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে, ক্লাসের বাইরে প্রাথমিকের ১ কোটি শিক্ষার্থী

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪৫ পিএম

শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে, ক্লাসের বাইরে প্রাথমিকের ১ কোটি শিক্ষার্থী
বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী—আজ রোববার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে এ কর্মবিরতি শুরু করেছেন তারা।

এতে সাড়ে ৬৫ হাজারেরও বেশি বিদ্যালয়ের প্রায় এক কোটি শিশু শিক্ষার্থীর ক্লাস বন্ধ হয়ে গেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এলেও শিক্ষকরা পাঠদান বন্ধ রেখেছেন। বাধ্য হয়ে ক্লাস না করেই ফিরে যেতে হচ্ছে শিশুশিক্ষার্থীদের।

দশম গ্রেডে বেতন-ভাতাসহ তিন দফা দাবিতে গত শনিবার (৮ নভেম্বর) থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন সহকারী শিক্ষকরা। ১৫ নভেম্বরের পর তাদের কর্মবিরতি কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা ছিল।

তবে অবস্থান কর্মসূচির প্রথমদিনে শাহবাগে ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার ঘটনায় তা এগিয়ে এনেছেন শিক্ষকরা। ফলে আজ থেকেই সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেয় ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’।

পরিষদের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘ঢাকায় যেভাবে আমাদের শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হয়েছে, তাতে প্রাথমিক শিক্ষকসমাজ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমাদের অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা রক্তাক্ত, অনেকের হাত-পায়ে বুলেটের স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছে। তারা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। কয়েকজনকে আটক করে রাখা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই দেশের সব বিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকরা। যৌক্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। তারপরও যদি সরকার দাবি মেনে না নেয়, তাহলে প্রয়োজনে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’

বার্ষিক পরীক্ষার বাকি তিন সপ্তাহ, ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে ‘শঙ্কা’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে বিদ্যালয়ে তৃতীয় প্রান্তিক বা বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই হিসাবে মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি আছে পরীক্ষার। এমন সময়ে শিক্ষকরা দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নামায় এবং সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন অভিভাবকরা।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রজব আলী। তার সন্তান মোহাম্মদপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। এবার বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে সে। কিন্তু শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণায় সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তিনি।

রজব আলী বলেন, ‘১৫-১৬ বছর পর এবার বৃত্তি পরীক্ষা চালু হচ্ছে। আমার মেয়েটা বৃত্তি দেবে। কিন্তু শিক্ষকরা ধর্মঘট (কর্মবিরতি) ডাকায় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা তো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন চলতে থাকলে প্রস্তুতি নিতে পারবে না। এমন হলে তো বৃত্তি পরীক্ষায় ভালো করা মেয়েটার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়বে।’
এক বছরে দ্বিতীয় দফায় প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি

এবারই প্রথম নয়, চলতি বছর আরও একবার টানা কর্মবিরতি পালন করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গত ৫ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মদিবসে এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এরপর ১৭ মে থেকে দুই ঘণ্টা এবং ২১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত আধাবেলা কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা।

২৬ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেন সহকারী শিক্ষকরা। টানা চারদিন কর্মবিরতির পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের আশ্বাসে ১ জুন থেকে ক্লাসে ফিরে যান তারা। তবে সেই আশ্বাস বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। ফলে আবারও রাস্তায় নেমেছেন তারা।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতা আবুল কাশেম বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন দশম গ্রেডের দাবি জানালেও তা সম্ভব নয় বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এরপর শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডের জন্য আন্দোলনে নামেন। সেই দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেজন্য শিক্ষকরা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন।’

১১তম গ্রেড থেকে আবার দশম গ্রেডের দাবি কেন তোলা হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার একটি নতুন পে-স্কেল করছে। একটি কমিশন এটা নিয়ে কাজ করছে। পে-কমিশনের কাছে প্রাথমিকের শিক্ষকরা তাদের দাবি জানালেও তাতে পাত্তা দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা পে-কমিশনের কার্যক্রম সামনে রেখে দশম গ্রেডের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছে।’

দশম গ্রেড যৌক্তিক নয়, ১১তম গ্রেডের সুপারিশ
দীর্ঘদিনের দাবি, মামলা-রিটের পর সম্প্রতি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে এখনই সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে আনা সম্ভব নয়। এটি যৌক্তিকও নয় বলে মনে করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

তিনি বলেছেন, ‘বেশিরভাগ সহকারী শিক্ষক মনে করেন দশম গ্রেডের এ দাবি যৌক্তিক নয়। প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষকদের সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে তাদের দশম গ্রেডে আনা; এটি সম্ভব নয়। একবারে ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে আনার কোনো যুক্তিই নেই।’
‘তারা যেন ১১তম গ্রেড পেতে পারেন, সেজন্য আমরা কাজ করছি। তাদের এ মুহূর্তে আন্দোলনে যাওয়াটাও যৌক্তিক নয়’—যোগ করেন বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দিতে সুপারিশ করেছি। এটি অর্থ মন্ত্রণালয় যদি অনুমোদন করে, তাহলে তারা ১১তম গ্রেড পাবে। এর বাইরে আমাদের হাতে আর কিছু নেই।’

বার্ষিক পরীক্ষার আগে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে শিক্ষার্থীরা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। এবার শিক্ষার্থীরা কিছুটা দেরিতে বই পেয়েছে। এরমধ্যে কয়েকবার শিক্ষকরা ঢাকায় এসেছেন, আন্দোলন করেছেন। মে মাসজুড়ে তাদের কর্মবিরতি কর্মসূচি ছিল। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি অনেক বাড়বে। এটা সত্যিই আশঙ্কাজনক।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার