Logo
Logo
×

জাতীয়

তিন শর্তে আলোচনায় রাজি প্রাথমিকের শিক্ষকরা

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১০ এএম

তিন শর্তে আলোচনায় রাজি প্রাথমিকের শিক্ষকরা

মো. মাহাবুবুর রহমানসহ আটক পাঁচ শিক্ষকের মুক্তি, আহত শিক্ষকদের উন্নত চিকিৎসা এবং আগের দাবিগুলো পূরণের নিশ্চয়তা পেলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি।

শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের অন্যতম মুখপাত্র ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি চাই না। কিন্তু শিক্ষকরা যেভাবে নিপীড়িত হয়েছেন তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটা মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশের হামলায় একজন শিক্ষকের দুটি পা ভেঙে গেছে। কয়েকজন শিক্ষকের আঘাত এতটাই গুরুতর যে তারা চোখে দেখছেন না। শতাধিক শিক্ষকের রক্তক্ষরণ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শাহবাগ থানায় আটক শিক্ষক মাহাবুব “প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ”-এর পাঁচজন আহ্বায়কের অন্যতম একজন। তাকে আটকে রেখে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বাকি চারজনকে নিয়ে অনশনে বসেছেন। আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থানরত শিক্ষকরা তাদের মুক্তির দাবিতে রাত ১২টায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেছি।’

সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষকরা চাকরি ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা, প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি এবং চাকরির ১০ম ও ১৬তম বছরে উচ্চতর গ্রেডের নিশ্চয়তার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।

শিক্ষকদের চারটি পৃথক সংগঠন একত্রিত হয়ে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ ব্যানারে একটি মোর্চা গঠন করে আন্দোলন শুরু করে।চারটি সংগঠন হলো–প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) এবং সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ।

শনিবার সন্ধ্যায় মোর্চার সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন এবং শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’

পূর্বঘোষিত তিনটি দাবি পূরণের লক্ষ্যে শুক্রবার রাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হন শিক্ষকরা। শনিবার বিকালে শাহবাগে ‘কলম বিসর্জন’ কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ ব্যারিকেড দিলে তারা জাদুঘর প্রাঙ্গণে থেমে যান। পরে শিক্ষকরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে যাত্রার ঘোষণা দেন। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও জল কামান নিক্ষেপ করে।

এরপরেই ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর সভাপতি আবুল কাশেম কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

শিক্ষক নেতাদের দাবি, পুলিশের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক বলেন, ‘বিকালের পর আহতরা একে একে অন্তত ১১০ জন এসেছেন। আহতদের মধ্যে শিক্ষক, পুলিশ সদস্য, রিকশাচালক ও সাংবাদিক রয়েছেন। গুরুতর বা সামান্য আহতদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, আহতদের অধিকাংশই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। তবে অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন।

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আন্দোলনকারীরা প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করায় তাদের বাধা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ থেকে ছয়জন শিক্ষককে থানায় রাখা হয়েছে।’

অন্যদিকে রমনা জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম জানান, আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতাদের বুঝিয়ে শহীদ মিনারে ফেরত পাঠানো হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ একদল শিক্ষক ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। তখন তাদের সরিয়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।

শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (গণমাধ্যম) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বিবৃতিতে জানান, এদিন বিকাল ৪টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে।

এদিকে দুপুরে খুলনায় এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার আন্দোলনরত শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দেওয়া হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এখন তারা ১০ম গ্রেড দাবি করে যে আন্দোলন করছে, তার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির বিষয়ে সহকারী শিক্ষকদের দাবির ব্যাপারেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একমত নয়। সরকারের নীতি হলো ৮০ শতাংশ পদে বিভাগীয় পদোন্নতি এবং ২০ শতাংশ পদে নতুন নিয়োগ।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছরই প্রধান শিক্ষকদের চাকরি ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি পে কমিশনে আলোচনাধীন।

প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো আমরা ১৩তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছি। এতে জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে উঠেছে।’

আন্দোলনের শুরুর দিকে শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সরকার যেন দ্রুত ১১তম গ্রেডের গেজেট দেয়, সেজন্যই তারা ১০ম গ্রেডের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। ১১তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি হলেই তারা খুশি মনে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন বলেও জানান।

কিন্তু শনিবারের পুলিশি হামলার পর সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন শিক্ষকরা। এদিন রাত সাড়ে ১২টায় তারা ঘোষণা দেন, আটক শিক্ষকদের মুক্তি, আহতদের উন্নত চিকিৎসা এবং পূর্বঘোষিত তিন দাবি পূরণ না হলে তারা অবস্থান ধর্মঘট থেকে সরবেন না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার