অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘পাঠদান বন্ধের’ ঘোষণা প্রাথমিক শিক্ষকদের
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৩ পিএম
১০তম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি আদায় এবং শাহবাগে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল রবিবার (০৯ নভেম্বর) দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি (পাঠদান বন্ধ) পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ। তিনি বলেন, ‘দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল থেকে শহিদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি সারা দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে ‘
এর আগে শামসুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘পুলিশ শিক্ষকদের উপর রাবার বুলেট ছুড়েছে। আমাদের অনেক শিক্ষক গুলিবিদ্ধ। সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেলের আঘাতে শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন।’
তিনি আরও, ‘আমাদের শতাধিক শিক্ষক আহত। অনেকের হাতে পায়ে, পেটে রাবার বুলেট ঢুকেছে। পিজি হাসপাতালে ভর্তি একজনের কপালের পাশে রাবার বুলেট বিদ্ধ। সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা দয়াকরে ঢাকা মেডিকেলে আসুন। আমাদের অনেক শিক্ষক ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি।’
এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি’ পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। এরপরই তিন দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শাহবাগের দিকে যাত্রা করেন প্রাথমিকের এ শিক্ষকরা। পরে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তারা জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাউন্ড-গ্রেনেড নিক্ষেপের পর শিক্ষকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। সাউন্ড গ্রেনেডের নিক্ষেপের ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো: দশম গ্রেড প্রদান: সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা প্রদান। উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান: ১০ বছর ও ১৬ বছর চাকরি পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদান সংক্রান্ত জটিলতা ও সমস্যার স্থায়ী সমাধান। শতভাগ পদোন্নতি: সহকারী শিক্ষকদের জন্য শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা প্রদান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি এবং এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০তম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে থাকা শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে এই পদক্ষেপে সহকারী শিক্ষকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময়সীমা দিয়েছে।
তাদের তিন দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। এছাড়া ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে তারা পরীক্ষা বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।