১৯৯৬ সালের পর যে আসনে আর কখনো দলীয় মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৮ এএম
খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী আব্দুল আলিমের গাওয়া জনপ্রিয় গান— ‘পরের জায়গা পরের জমিন, ঘর বানাইয়া আমি রই’ কথাটি যেন হুবহু মিলে যায় সিলেট-৫ আসনের বিএনপি নেতাকর্মীদের মনের অবস্থার সঙ্গে। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী খুব কমই দেখা গেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাদ দিলে এ আসনে কখনও সংসদ সদস্য পায়নি বিএনপি। বেশিরভাগ সময়েই দলটি শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দিয়েছে, যা স্থানীয় নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের কারণ।
ভারত সীমান্তঘেঁষা জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯ হাজার ৯৫৬ জন। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ চারবার, জাতীয় পার্টি তিনবার, স্বতন্ত্র দুইবার এবং বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোট একবার করে জয়ী হয়। জোট রাজনীতি শুরু হওয়ার পর থেকেই এ আসন বিএনপির জন্য কার্যত ‘বঞ্চনার প্রতীক’।
১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব আবুল হারিছ চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও দু’বারই পরাজিত হন।
এরপর জোট রাজনীতিতে এ আসন জামায়াতকে ছেড়ে দেয় বিএনপি, এবং প্রায় তিন দশক ধরে স্থানীয় নেতারা প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাননি।
কানাইঘাটের বীরদল ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রায় ৩০ বছর ধরে আমাদের প্রার্থী নেই। জোটের অন্য প্রার্থীদের ভোট দিতে হয়, কিন্তু তাতে আমাদের দলের কেউ এমপি হয় না। মনে হয় যেন ‘পরের জায়গা, পরের জমিন’।”
একই আক্ষেপ জকিগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাসুক আহমদের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে উবায়দুল্লাহ ফারুক নামে একজনকে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনের পর আর তাকে এলাকায় দেখিনি। শুধু আমরা মামলা খেয়েছি, হামলার শিকার হয়েছি।’
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সেলিমের দাবি, ‘এ আসনে বিএনপির অবস্থান শক্ত। এখানে ধানের শীষের প্রার্থী দিলে জয় নিশ্চিত।’
এ আসনে এবার ১৬ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে রয়েছেন, যার মধ্যে ১২ জনই বিএনপির। তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ তাপাদার ও কেন্দ্রীয় মহিলা দলের প্রচার সম্পাদক লুৎফা খানম চৌধুরী স্বপ্না।
এছাড়া পাঁচজন প্রবাসী মনোনয়ন প্রত্যাশীও রয়েছেন। তারা হলেন— ব্যারিস্টার সামিরা তানজিম চৌধুরী, মো. জাকির হোসেন, ড. জাকি মোস্তফা টুটুল, অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন ও শরীফ আহমদ লস্কর।
মনোনয়নপ্রত্যাশী মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, ‘একবার ছাড় দিলে সারাজীবন ছাড় দিতে হয়। ১৯৯৬ সালে কেন ছাড় দেওয়া হয়েছিল, তা জানা নেই। তবে আশা করি এবার কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি গুরুত্ব দেবেন।’
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও আরব আমিরাত বিএনপির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই আমার চাওয়া-পাওয়া, আমার সবকিছু হলো ধানের শীষ কেন্দ্রিক। এ অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত। দীর্ঘদিন বিএনপির কোনো প্রার্থী এখানে, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কোনো নেতা পাঠাতে পারিনি। সে সুযোগও হয়নি। এবার সুযোগ এসেছে, নতুন বাংলাদেশে আমরা বিএনপির প্রার্থী চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘অন্যকে বর্গা চাষী না করা, এতে বিএনপি পরিবার ও এলাকার মানুষ কষ্ট পাবে। তারপরও ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, তিনি যা ভালো মনে করবেন তাই করবেন। তাই আমরা মাথা পেতে নেব।’
মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি ধানের শীষের প্রার্থী, বিএনপির প্রার্থী আমরা এই আসনে চাই। এটা শুধু আমাদের নয়, এলাকার মানুষেরও দাবি। দল বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আমার বিশ্বাস।’