সরকারি কর্মচারীদের নতুন পে স্কেল: বাস্তবায়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৩ পিএম
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। পে কমিশনের সদস্যরা বর্তমানে শেষ মুহূর্তের বিশ্লেষণ ও সমন্বয় কাজ সম্পন্ন করছেন।
গত ৩০ অক্টোবর বিভিন্ন সমিতি ও অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর, কমিশন এখন সব প্রস্তাব ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যাচাই করে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রস্তুত করছেন।
কারণ, ডিসেম্বরের মধ্যভাগ থেকে নির্বাচন সংক্রান্ত তফসিল, রোডম্যাপ ও অন্যান্য প্রস্তুতি শুরু হলে সরকারের পক্ষে নতুন বেতন কাঠামোর বাস্তবায়নের দিকে নজর দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
একই সঙ্গে বাজেট ঘাটতিও বড় বাধা হিসেবে কাজ করতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে, কমিশনের মেয়াদ আছে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
ফলে সরকার একদিকে নির্বাচনের চাপের মধ্যে থাকবে, অন্যদিকে কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা বৃদ্ধির দাবিতেও চাপের মুখে পড়বে।
ফলস্বরূপ, সুপারিশ প্রণয়নের পরও বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে পারে।
এর আগে পে কমিশনের সভাপতি ও সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান জানিয়েছিলেন, প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে চলছে এবং আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ে সুপারিশ জমা দেওয়া সম্ভব হবে।
তবে কমিশনের এক সদস্য উল্লেখ করেছেন, তাদের দায়িত্ব শুধুমাত্র সুপারিশ প্রদান পর্যন্ত, বাস্তবায়নের নয়।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আশা প্রকাশ করেছেন, যদি ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যে সুপারিশ জমা পড়ে, তবে দ্রুত সময়ে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
এদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দ্রুতই আসছে নবম জাতীয় পে স্কেল। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত ‘পে কমিশন’ ইতিমধ্যেই নতুন বেতন কাঠামো এবং বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা ভাতা এবং শিক্ষা ভাতার মতো মৌলিক প্রয়োজনগুলোর ওপর।
চিকিৎসা ভাতা
বর্তমানে একজন সরকারি কর্মচারী মাসে ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান।
নতুন পে স্কেলে এই ভাতাটি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে বলে জোরাল ইঙ্গিত মিলেছে। পে কমিশনের কাছে বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তাবনা জমা পড়েছে, যা থেকে এই ভাতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে:
১. প্রথম প্রস্তাব : চিকিৎসা ভাতা বর্তমানের ১,৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সরাসরি ২,৫০০ টাকা করা।
২. দ্বিতীয় প্রস্তাব : দ্রব্যমূল্যের চাপ বিবেচনা করে এই ভাতাটি বাড়িয়ে ৫,০০০ টাকা বা কিছু কিছু গ্রেডের জন্য ৬,০০০ টাকা করার সুপারিশও করা হয়েছে।
৩. তৃতীয় প্রস্তাব (সর্বোচ্চ) : কর্মচারীদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ হিসেবে চিকিৎসা ভাতা নির্ধারণ করা।
বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ : কমিশন শুধু চাকরির সময়কালের জন্য ভাতা বৃদ্ধি নয়, বরং অবসর-পরবর্তী সময়ের জন্যও চিকিৎসা সুবিধার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা
নতুন পে স্কেল নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তাতে সর্বনিম্ন (২০তম গ্রেডের) মূল বেতন ৩৫,০০০ টাকা করার একটি বড় প্রস্তাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ বেতনের সিলিং ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বা তারও বেশি করার দাবি জানানো হয়েছে।
শিক্ষা ও অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধি
চিকিৎসা ভাতার পাশাপাশি সন্তানের শিক্ষা ভাতা এবং টিফিন ভাতা-ও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর সুপারিশ করা হবে।
বর্তমান পে স্কেলের কিছু বৈষম্য দূর করে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন কাঠামো তৈরি করাই কমিশনের প্রধান লক্ষ্য।
কবে নাগাদ চূড়ান্ত ঘোষণা?
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পে কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই জমা দেওয়া হতে পারে। এরপর দ্রুততম সময়ে গেজেট আকারে নতুন পে স্কেল প্রকাশ ও কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে।