সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিবেচনা করতে পারে সরকার
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪৭ পিএম
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্যাংক রেজ্যুলেশন অর্ডিনেন্স অনুযায়ী কোনো বিনিয়োগকে বিলুপ্ত করা হলে শেয়ারধারকগণ যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হতেন, তার চেয়ে অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হলে তাকে বাড়তি ক্ষতির সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রয়েছে।
পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকা সাধারণ বিনিয়োগকারী বা শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়ে আপাতত কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্যাংক রেজ্যুলেশন অর্ডিনেন্স অনুযায়ী কোনো বিনিয়োগকে বিলুপ্ত করা হলে শেয়ারধারকগণ যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হতেন, তার চেয়ে অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হলে তাকে বাড়তি ক্ষতির সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রয়েছে।
এ বিধান অনুযায়ী রেজ্যুলেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা স্বতন্ত্র পেশাদার মূল্যায়নকারী মাধ্যমে সম্পাদিত মূল্যায়নের ভিত্তিতে শেয়ারহোল্ডাররা কোনো ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য হলে তা পরিশোধ করা হবে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে, বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার ঘোষণা দিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারের মূল্য জিরো হওয়ার তথ্য তুলে ধরেন।
এরপর থেকে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করেন এবং তারা বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এরপরই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এফসিডিও- এর কারিগরি সহায়তা ও মতামতসমূহ বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ করা হয়েছে।
এ অধ্যাদেশে রেজল্যুশনে আওতাধীন ব্যাংকসমূহে আমানতকারী, শেয়ারহোল্ডারসহ বিবিধ পাওনাদারের অধিকারের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক কনসালটিং ফার্ম দ্বারা পরিচালিত একিউআর এবং বিশেষ পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণে দেখা যায় যে উল্লিখিত ব্যাংকগুলো বিশাল লোকসানে রয়েছে এবং তাদের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির (বিসিএমসি) সভায় '৫টি সংকটাপন্ন ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের রেজল্যুশন প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের লোকসানের দায়ভার বহন করতে হবে'- মর্মে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, 'বর্ণিত প্রেক্ষাপটে ব্যাংক রেজ্যুলেশন অর্ডিন্যান্স, ২০২৫- এর সংশ্লিষ্ট ধারা এবং বিসিএমসি- এর সিদ্ধান্ত বিবেচনায় পাঁচটি ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীগণের বা শেয়ারধারকগণের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয় বিবেচনার আপাতত কোনো সুযোগ নেই। তবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগণের/শেয়ারধারকগণের স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।
প্রসঙ্গত, গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে এই পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে চিঠি দেয়।
চিঠিতে ব্যাংক কোম্পানি আইনের কাঠামোর আওতায় ব্যাংকগুলোকে 'টিকে থাকতে অক্ষম' ঘোষণা করা হয়। যদিও সম্পূর্ণ একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আশ্বস্ত করেছে যে ক্ষুদ্র আমানতকারীরা (২ লাখ টাকা পর্যন্ত) তাদের অর্থ তুলে নিতে পারবেন এবং এক মাসের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। বৃহৎ আমানতকারীরা পর্যায়ক্রমে তাদের টাকা ফেরত পাবেন। এর পরেরদিন বৃহস্পতিবার একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা সংকটাপন্ন পাঁচ ইসলামি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।
এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে পাঁচটি পৃথক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, আজ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই পাঁচটি ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের লেনদেন স্থগিত থাকবে। একীভূত হতে যাওয়া এই পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে জানায়, এখন থেকে এসব ব্যাংক চলবে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আওতায়। প্রশাসক হিসেবে কোন ব্যাংকে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং তাদের কাজ কী হবে, তা ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রশাসকেরা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ধাপে প্রত্যেক আমানতকারীকে আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ফেরত দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ওই পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার। আর আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ ৫ ব্যাংকের মধ্যে চারটির মালিকানায় ছিল এস আলম। একটির মালিকানায় ছিলেন নজরুল ইসলাম মজুমদার।