কানাডার জাল ভিসার ফাঁদ, যুক্তরাজ্যে বসে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:১০ এএম
কানাডার ভিসা দেয়ার কথা বলে কারো থেকে নিয়েছেন ২০ লাখ কিংবা কারো থেকে ৬০ লাখ টাকা। এভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। বিনিময়ে সবাইকে দিয়েছেন জাল ভিসা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটের শাহেদ যুক্তরাজ্য রাষ্ট্রে বসে ভয়াবহ এই প্রতারণা ফাঁদ পেতেছেন। প্রতারণা করতে ছাড় দেননি নিজের স্ত্রীকেও।
নোয়াখালীর এই গৃহবধূ নিজের সন্তানকে নিয়ে কানাডায় পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন ভাগ্য বদলের। তাইতো নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করে একটি এজেন্সিকে ৩৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন।
এর কিছুদিন পর কাঙ্ক্ষিত সেই ভিসাও চলে এসেছিলো, আত্মীয় পরিজনের থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হয়েছিলেন কানাডার পথে। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো, কিন্তু বিপত্তি বাঁধে এয়ারপোর্টে গেলে।
দালাল চক্রের দেয়া এই ভিসাটি ফেক বলে সিল মেরে দিয়েছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
এই জাল ভিসার সূত্র ধরেই আমাদের অনুসন্ধানের শুরু। জানা যায়, এই চক্রের ফাঁদে পড়েছে আরো বহু মানুষ। এই যেমন নোয়াখালীর নাইমুল ইসলাম। মাদ্রাসায় চাকরির পাশাপাশি মসজিদে ইমামতিও করতেন।
তিনিও পরিবারসহ কানাডায় গিয়ে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধার-দেনা করে তিনিও এজেন্সিকে দিয়েছিলেন ৩৫ লাখ টাকা। বিনিময়ে তারও মিলেছে জাল ভিসা।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কানাডায় যাওয়ার আশায় তারা সবাই ঢাকার মুন্সি এয়ার ট্রাভেলসে টাকা ও পাসপোর্ট জমা দেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ট্রাভেলসের মালিক সামিউল ইসলাম নামের একজন।
তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি একটি দুটি নয় এমন ৫টি পরিবারের ভিসার জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়েছেন। এসব টাকা ও পাসপোর্ট তিনি দিয়েছেন সিলেটের শাহেদ নামের এক ব্যক্তির প্রতিনিধিকে।
শাহেদ প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সবগুলো জাল ভিসা দিয়েছে বলেও দাবি করেন এজেন্সির মালিক।
কে এই শাহেদ। এবার তার মুখোমুখি হতে চাই আমরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহেদের বাড়ি সিলেটে। এখন থাকেন যুক্তরাজ্যে। বিদেশে বসেই দেশের মাটিতে জাল ভিসার ভয়াবহ এই জাল বিস্তার করেছেন তিনি।
বহু মানুষের থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে প্রতারণা করতে নিজের স্ত্রীকেও ছাড় দেননি শাহেদ। ভিসা দেয়ার কথা বলে স্ত্রী ও তার আত্মীয়দের থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ৬০ লাখ টাকা। বিনিময়ে তাদের কেও দিয়েছেন জাল ভিসা।
শাহেদকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন এই নারী। কিন্তু টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর তিনি জানতে পারেন তাদের বিয়ের সব কিছুই ভুয়া। কাবিনের কাগজও জাল। শাহেদ অন্য এক নারীকে বিয়ে করে চলে গেছেন যুক্তরাজ্যে।
শাহেদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে ভয়ানক বিপাকে পড়েছেন এই নারী। চাইলেন সঠিক বিচার। বিদেশে বসে কাদের সহায়তাও এতো মানুষের থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেন শাহেদ?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে শাহেদের অন্যতম সহযোগী তারই ফুফাতো ভাই রেওয়ানুল আলম রাহাত, মা জাহানারা বেগম, বন্ধু ইমরান হুসাইন, বান্ধবী মনি বেগম ও ফারহানাজ খন্দকার নামের এক নারী।
মনোনয়ন কেন্দ্র করে সহিংসতা, বিএনপির চার নেতা বহিষ্কারমনোনয়ন কেন্দ্র করে সহিংসতা, বিএনপির চার নেতা বহিষ্কার
শাহেদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় মামলা করেছেন মুন্সি এয়ার ট্রাভেলসের মালিক সামিউল ইসলাম।
ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে শাহেদের অন্যতম সহযোগী রেওয়ানুল আলম রাহাত, তার মা জানাহারা বেগমসহ চারজন। রাহতের বাড়ি থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে একাধিক পাসপোর্টসহ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত। শাহেদকে দেশে ফিরিয়ে কঠিন শাস্তি নিশ্চিতের দাবি ভুক্তভোগীদের।