চট্টগ্রামে ‘চাঁদার দাবিতে’ ভবনে তালা দিলেন এনসিপি নেতারা
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪১ এএম
চট্টগ্রামের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদের একটি ছয় তলা ভবন ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকে রাখা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব শাখা জাতীয় যুব শক্তির একদল নেতা-কর্মী চাঁদার দাবিতে বাণিজ্যিক ভবনটিতে তালা দিয়ে রেখেছেন।
ভবনটির নাম এসএইচআর টাওয়ার। এর অবস্থান আগ্রাবাদের শেখ মুজিব সড়কে। ভবনটির মালিক শেখ হাফিজুর রহমান। তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয়।
সোমবার বিকালে এনসিপি চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের আহ্বায়ক আবু নাইম এবং জাতীয় যুব শক্তি চট্টগ্রাম শহর শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব সজীব ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটি দল ভবনটিতে যায়। সেখানে তারা নিজেদের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মী বলে পরিচয় দেয়।
ভবনে প্রবেশের পর এনসিপি সদস্যরা সেখানে অবস্থিত ‘শিপিং করপোরেশন অব ইন্ডিয়া’র কার্যালয় দেখতে পান। প্রতিষ্ঠানটি যেহেতু ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, স্বাভাবিকভাবেই সেখানে ছিল ভারতের পতাকা। এনসিপির সদস্যরা এই পতাকা দেখে সংস্থাটির বিরুদ্ধে বৈশ্বিক হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলেন।
এসময় নাইম ও সজীব শিপিং লাইনের কর্মীদের বলেন, কর্মীরা যেন এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত তাদের (এনসিপির) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
এসময় এনসিপি ও যুব শক্তির নেতাদের মধ্যে ভবনটি তালাবদ্ধ করা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ভবন তালাবদ্ধ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতেই ওয়াসা মোড় এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় দ্বন্দ্বে জড়ায় এনসিপি। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে ওই রাতেই দুই পক্ষ একটি অনানুষ্ঠানিক মীমাংসায় পৌঁছায়।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, হাতাহাতির ঘটনায় আহতরা একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দুই পক্ষই আমাদের জানিয়েছে যে তারা মামলা না করে নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করবে।’
তবে ভবনে তালা মারা বা শিপিং লাইনের অফিসে গিয়ে ইসকন সম্পৃক্ততা খুঁজে বের করার মতো ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সজীব ভূঁইয়া। অবশ্য তিনি এটা স্বীকার করেছেন যে, জুলাই ফাউন্ডেশনের জন্য অফিসের জায়গা চাইতে ওই ভবনে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাঁদা দাবি করিনি; আমরা ফাউন্ডেশনের জন্য একটি ফ্লোর চেয়েছিলাম।’
তার দাবি, ওই অফিসটির ভেতরে তারা ভারতের জাতীয় পতাকা, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর পতাকা এবং শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বড় প্রতিকৃতি দেখতে পান।
সজীব বলেন, ‘এসব দেখে আমাদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।’
সেকারণে বিষয়গুলোর ‘যাচাই-বাছাই এবং ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন’ না হওয়া পর্যন্ত ভবনের ভেতরের সবকিছু অক্ষত রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও স্বীকার করে নেন তিনি।
এর ধারাবাহিকতায় শিপিং করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে রাতে এনসিপির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং উভয় পক্ষ আলোচনায় বসে।
অভিযোগ উঠেছে, ওই আলোচনায় বুধবারের একটি অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন এনসিপির নেতারা। যে অনুষ্ঠানের কথা তারা বলেছেন সেটিতে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত থাকবেন বলেও জানানো হয়।
আলোচনায় মীমাংসা না হওয়ায় সোমবার রাতেই এসএইচআর টাওয়ারের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন এনসিপি-যুব শক্তির নেতারা।
ওই বাণিজ্যিক ভবনটিতে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে কয়েকটি শিপিং এবং ট্রাভেল এজেন্সি। মঙ্গলবার সকালে এসব অফিসের কর্মচারীরা দরজায় অতিরিক্ত তালা দেখতে পান, যার ফলে তারা ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি।
মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভবনটি তালাবদ্ধ ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভবনটিতে তারা কাউকে প্রবেশ করতে বা ভবন থেকে বের হতে দেখতে পাননি। এমনকি এমনকি ভবনের নিয়মিত নিরাপত্তা কর্মীরাও ছিলেন অনুপস্থিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, ‘ভবন তালাবদ্ধ করার ঘটনাটি সত্য। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। এ বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
সবশেষ মঙ্গলবার বিকালে এনসিপির নেতা এবং শিপিং লাইনের কর্মীরা শহরের এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্যান্টিনে আলোচনার জন্য বসেন। তাদের দিকে নজর রাখছিলেন টাইমসের দুই প্রতিবেদক।
সেখানে আগের সংঘর্ষে আহত হয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা একজন এনসিপি প্রতিনিধিকে অংশ নিতে দেখা যায়।
তবে, ভবনের মালিক দলটির দাবি পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আলোচনা ভেস্তে যায়।
এরপর, এনসিপি নেতারা শিপিং করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার অফিসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন এবং কর্মীদের কাজ করতে বাধা দেন।
মঙ্গলবার রাতে প্রতিষ্ঠানটির একজন প্রতিনিধি জানান, তারা অফিসের চাবি ফেরত পেয়েছেন। তবে এনসিপির নেতারা তাদের ওই ভবনে প্রবেশ না করার বিষয়েও সতর্ক করে দিয়েছেন।
ভবন তালাবদ্ধ করার এই ঘটনা দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলটি এরই মধ্যে সদস্যদের চাঁদাবাজি এবং নানা উচ্ছৃঙ্খল কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে রয়েছে। এই ঘটনা নতুন দল এনসিপির ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ন করল।