বুধবার ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করছেন ১৫ সেনা কর্মকর্তা

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৬ এএম

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত দুটি গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন ঢাকা সেনানিবাসে আটক ১৫ সেনা কর্মকর্তা।
সেনাবাহিনী সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বুধবার আত্মসমর্পণ করবেন তারা।
ট্রাইব্যুনালের একজন আইনজীবী বলেন, ‘আইনের চোখে সবাই সমান। তাই, প্রসিকিউশন আশা করে যে হেফাজতে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আদালতে হাজির হবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী এমএইচ তামিম বলেন, ‘আটক সেনা কর্মকর্তারা বুধবার ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে, আইন অনুযায়ী তাদের আত্মসমর্পণের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’
‘অভিযুক্তরা হাজির হয়ে জামিন চাইলে, ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করতে পারেন বা তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশও দিতে পারেন।’
অন্যদিকে সেনা কর্মকর্তারা যে সেনা হেফাজতে রয়েছেন সে বিষয়টি এখনো ট্রাইব্যুনালকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন এই প্রসিকিউটর।
ট্রাইব্যুনাল ও সেনাবাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু সেনাবাহিনী ১৫ কর্মকর্তাকে আটকের ঘোষণা দিয়েছে এবং যেখানে তাদের রাখা হয়েছে সেই ভবনটিকে অস্থায়ী কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে, তাই আইন অনুযায়ী বুধবার তাদের ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হবে।
তারা আত্মসমর্পণ করলে প্রসিকিউশন তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে অনুমতি চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে, জেল গেটে বা সেফ হাউসে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতিও মিলতে পারে। তবে জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই ধরনের মামলায় জামিন পাওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে সংঘটিত দুটি গুমের ঘটনাসহ তিনটি মামলায় অভিযোগ গঠনের পর, গত ৮ অক্টোবর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। তাদের মধ্যে ২৫ জন বর্তমান ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা।
বুধবারের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
সাধারণত, এই ধরনের পরোয়ানা কার্যকরের জন্য পুলিশ প্রধানের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু যেহেতু এ মামলায় কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত উভয় ধরনের সামরিক কর্মকর্তারা জড়িত, তাই পরোয়ানার একটি অনুলিপি সেনাপ্রধানের কাছেও পাঠানো হয়। যেন তিনি এ বিষয়ে অবগত থাকেন এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করতে পারেন।
পাশাপাশি ১৩টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরেও পরোয়ানা পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ বিষয়ে গত ১১ অক্টোবর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২৫ জন কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তাদের মধ্যে ১৫ জন হেফাজতে আছেন। একজনের অবসরের প্রক্রিয়া চলছে এবং মেজর জেনারেল কবির আহমেদ নিখোঁজ রয়েছেন। বাকি আটজন এরই মধ্যে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনী সংবিধানের প্রতি অনুগত থেকে বাংলাদেশের সকল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামানের ব্রিফিংয়ের পর ১৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার হিসেবে ঘোষণা করে।
মামলা ও অভিযুক্ত
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দুটি গুম, গোপন আটক ও নির্যাতনের মামলায় মোট ২৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে পাঁচজন বেসামরিক এবং ২৩ জন কর্মরত ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
বেসামরিক ব্যক্তিরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সাবেক মহাপরিচালক হারুন-অর-রশিদ ও খুরশীদ হোসেন।
দুটি মামলাতেই শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্ত বেশিরভাগ সেনা কর্মকর্তাই প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) এবং র্যাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অভিযুক্ত ডিজিএফআইয়ের পাঁচ সাবেক প্রধান হলেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আকবর হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. সাইফুল আবেদিন এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল হামিদুল হক।
অন্য অভিযুক্তরা হলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (সিটিআইবি) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সারওয়ার হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবির আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিক এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিক।
ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোখসুরুল হককেও আসামি করা হয়েছে। সিটিআইবি ডিজিএফআইয়ের একটি ইউনিট।
এছাড়া গুম ও নির্যাতনের দুটি মামলায় অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুব আলম, কর্নেল কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মোশিউর রহমান জুয়েল, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেমকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তৃতীয় মামলায়, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্তরা হলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তা—লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদওয়ানুল ইসলাম, মেজর রাফাত বিন আলম মুন, ডিএমপির খিলগাঁও বিভাগের সাবেক এডিসিসি মো. রাশেদুল ইসলাম এবং রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাশিউর রহমান। দুিই পুলিশ কর্মকর্তাই পলাতক রয়েছেন।