যেভাবে পর্নো তারকা হয়ে ওঠে বাংলাদেশি দম্পতি

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৭ এএম

আজিম-বৃষ্টি দম্পতি। দু’জনের বয়সই ২৮। আজিমের জন্ম চট্টগ্রামে আর বৃষ্টির মানিকগঞ্জে। প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেনি দু’জন। সংসারে অভাব অনটন ছিল প্রবল। অর্থের অভাব মেটাতে গিয়ে তারা নিজেরাই পর্নো ভিডিও তৈরি শুরু করে। পরে পর্নো সাইটে আপ করে দেয়। ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় তাদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। এক সময় তারা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভিডিও তৈরি করে। ঘরে বসে ভিডিও তৈরি করে দেশ ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের ভিডিও চাহিদা বাড়তে থাকে।
২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরমে তাদের প্রথম ভিডিও প্রকাশ হয়। পরবর্তী এক বছরে তাদের প্রকাশিত মোট ১১২টি ভিডিও ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। বিনিময়ে তাদের অর্থের চাহিদাও মিটতো আবার এই অঙ্গনে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। পর্নো ভিডিও তৈরি করে তারা এখন বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে।
একসময় পর্নোতারকাদের আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে তাদের অবস্থান। আর ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পারফর্মারদের মধ্যে তাদের অবস্থান অষ্টম। এই দম্পতি শুধু নিজেরাই পর্নো ভিডিও তৈরি করতো না। তাদের বিরুদ্ধে আরও মানুষদের অন্ধকার এ জগতে সম্পৃক্ত করার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে তাদেরকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর আলোচনায় আসেন তারা। বিষয়টি সামাজিক ও নৈতিকভাবে উদ্বেগজনক এবং একইসঙ্গে বেআইনি হওয়ায় সিআইডি’র এলআইসি এবং সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিট দ্রুততার সঙ্গে এই পর্নোতারকা যুগলকে সোমবার ভোরে বান্দরবন থেকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল, সিমকার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ পর্নো ভিডিও তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।
সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বলেছেন, একাধিক আন্তর্জাতিক পর্নো ওয়েবসাইটে তারা নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতো। এভাবে খোলাখুলি প্রচারণার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রাম, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেও তারা প্রচারণা চালাতো। এসব প্রচারণায় ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হওয়ার জন্য অন্যদের প্রচুর করে বিভিন্ন বার্তা প্রকাশ করতো তারা।
আগ্রহীরা নতুন ক্রিয়েটর হওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে টেলিগ্রামের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে নতুনদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করাও ছিল তাদের কাজ। টেলিগ্রাম চ্যানেলে নতুন ক্রিয়েটর অ্যাড করলে নগদ অর্থ প্রদান করার বিজ্ঞাপন দিতো। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে না পারা এ যুগল দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসলেও অনলাইনে রয়েছে তাদের বিলাসবহুল জীবনধারার অনেক ছবি।
সিআইডি জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজুকরণসহ তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে আনা হবে। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদ্ঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডি’র তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ওই দম্পতিকে বান্দরবান সদরের রোয়াংছড়ি বাসস্টেশন সংলগ্ন ঠিকাদার সেন্টু ও মিন্টুর ভাড়া বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডি’র একটি টিম। ওই ভবনের ম্যানেজার সৌরভের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ১৩ তারিখে ফল ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে পাঁচতলা ভবনে দু’জনকে রুম ভাড়া দেয়া হয়। নিয়মানুসারে আইডি কার্ডসহ সবকিছু নিয়ে মাসে দশ হাজার টাকা ভাড়া রাখা হয়। কোথাও বের হলে দু’জনই হেলমেট পরে বের হতেন। কিন্তু তারা যে এসব অবৈধ কাজে জড়িত সেটি জানতাম না। আর গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আরও একজন এসেছে।