ওই পর্নো-তারকা যুগলের কার্যক্রম যেভাবে চলছে

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম

২৮ বছর বয়সী এক নারী—যার নাম ইংরেজিতে ‘বি’ দিয়ে শুরু এবং ‘ই’ দিয়ে শেষ— নিজেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বাংলাদেশের এক নম্বর মডেল’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তবে বাস্তবে, তিনি আন্তর্জাতিক পর্নো ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইটগুলোর একটিতে ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত তিনি বিশ্বব্যাপী পারফর্মারদের মধ্যে অষ্টম স্থানে রয়েছেন।
তার প্রথম ভিডিওটি আপলোড করেন ২০২৪ সালের ১৭ মে তারিখে। চলতি অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি মোট ১১২টি ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যা একত্রে ২৬৭ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ পেয়েছে।
পর্নো ওয়েবসাইটগুলো যেসব বাংলাদেশি নারী পারফর্মার রয়েছেন তারা তাদের পরিচয় ও চেহারা গোপন রাখলেও, বি তার ভিডিওতে মুখ উন্মুক্ত রাখেন এবং তার সঙ্গী— যার নাম ইংরেজিতে ‘এ’ দিয়ে শুরু এবং ‘এম’ দিয়ে শেষ— তার সঙ্গেও একত্রে পর্নো ভিডিওতে হাজির হন।
‘বি’ এবং ‘এ’ কেবল একটি প্ল্যাটফর্মেই সীমাবদ্ধ নন; তাদের ভিডিওগুলো একাধিক আন্তর্জাতিক পর্নো ওয়েবসাইটে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। তারা নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একাউন্টগুলোকে খুবই পরিকল্পিতভাবে তাদের কনটেন্ট প্রচারের জন্য ব্যবহার করেন। সম্প্রতি ‘দ্য ডিসেন্ট’ নামে একটি সংবাদমাধ্যম তাদের এক প্রতিবেদনে তাদের বিষয়টি সামনে আনে।
আলোচিত সেই বাংলাদেশি পর্নো তারকা যুগলকে অবশেষে বান্দরবান থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরআগে সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।
জাতীয় পরিচয়পত্রে ওই পর্নো-তারকা যুগল যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন তা পুলিশ সামনে এনেছে। ওই নারীর জাতীয় পরিচয়পত্র লেখা রয়েছে, ওই নারী মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা। তবে ওই ঠিকানায় গেলে দেখা যায়- সেটি তার প্রথম স্বামীর বাড়ি, যিনি পেশায় একজন জেলে। তার সাবেক শ্বশুর নিশ্চিত করেন, ওই নারী তার পুত্রবধূ ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘একদিন তার পুত্রবধূ বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, আট বছর হয়ে গেছে, আর ফিরে আসেনি’।
জানা গেছে, ওই নারীর বাবার বাড়ি একই উপজেলার ভিন্ন একটি গ্রামে। মেয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই নারীর বাবা জানান, এক বছর আগে তিনি তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।
ওই নারীর বাবা আরও বলেন, ‘আমরা গত এক বছর ধরে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখিনি। আমি তাকে ত্যাজ্য করেছি’।
অন্যদিকে পুরুষ সদস্যটির জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী, তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বিষয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘সে অন্ধকার জগতের মানুষ। ওর কারণে আমাদের গ্রামের নাম খারাপ হচ্ছে’।
যেভাবে চলছে তাদের কার্যক্রম
তদন্তে দেখা গেছে, ‘বি’-এর নামে তৈরি একটি যৌথ টেলিগ্রাম চ্যানেল ২২ মে ২০২৪ সালে খোলা হয়, যেখানে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার সদস্য রয়েছেন। এই চ্যানেলটি ‘বি’ এবং ‘এ’ যৌথভাবে পরিচালনা করেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চ্যানেলটি খোলা হয়েছে ‘বি’ এর নামে নিবন্ধিত একটি রবি নম্বর (শেষ তিন সংখ্যা ৩৪৫) ব্যবহার করে, এবং মূল অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করছেন ‘এ’, যার রবি নম্বরের শেষ তিন সংখ্যা ৫৮৪।
এ চ্যানেলে নিয়মিত তাদের পর্নোগ্রাফিক ভিডিও সংক্রান্ত কনটেন্ট শেয়ার করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর এ একটি পোস্টে ইংরেজিতে লিখেছিলেন: ‘নতুন ভিডিও প্রকাশ হয়েছে, উপভোগ করো ছেলেরা।’
প্রতিবার নতুন ভিডিও প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তারা লিংকটি ওই চ্যানেলে এবং অন্যান্য সোশাল প্লাটফর্মের তাদের একাউন্টে শেয়ার করেন।
৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘দ্য ডিসেন্ট’ প্রায় ৭০টি ভিডিও লিংক সংগ্রহ করেছে, যা বিভিন্ন পর্নো ওয়েবসাইটে তাদের প্রোফাইল থেকে এসেছে।
২৪ মে ২০২৫ সালে এ টেলিগ্রামে দুটি ছবি শেয়ার করেন, যেখানে একটি পর্নো ওয়েবসাইটের একাউন্ট থেকে ১,৫০,০০০ টাকার সমপরিমাণ লেনদেনের স্ক্রিনশট দেখা যায়। তিনি ক্যাপশনে ইংরেজিতে লিখেছিলেন: ‘টাকাই শক্তি।’
১৪ জুন ২০২৫-এ, তিনি ‘বি’ এর পর্নো প্রোফাইলের ড্যাশবোর্ডের একটি ছবি শেয়ার করেন, যেখানে ২০২৪ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আয় দেখা যাচ্ছে ১৫ হাজার ৭০৩ মার্কিন ডলার (প্রায় ২০ লাখ টাকা)।
এক সপ্তাহ পর, ২১ জুন, তিনি আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে লেখা ছিল: ‘একটি ভিডিও থেকে আয় ১,০০,০০০ টাকা,’ এবং প্ল্যাটফর্মটিকে ধন্যবাদ জানান।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এগুলো বিচ্ছিন্ন পোস্ট নয়। একই গ্রুপে ‘বি’ ও ‘এ’ আরও অন্তত দশটি পোস্টে তাদের আয়ের স্ক্রিনশট দেখিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন।
১২ অক্টোবর এ টেলিগ্রাম গ্রুপে ‘বি’ এর ফেসবুক ড্যাশবোর্ডের ছবি শেয়ার করেন। পরবর্তীতে আমাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা সেই ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেন, যা আসলেই ‘বি’ ও ‘এ’ পরিচালনা করে।
রিভার্স সার্চের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এই অ্যাকাউন্টগুলো থেকেই প্রথম কনটেন্টগুলো এসেছে।
‘বি’ এর ফেসবুক আইডিতে প্রায় ৪৯ হাজার ফলোয়ার এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ১২ হাজারের বেশি অনুসারী রয়েছে। উভয় একাউন্টের বায়ো অংশে তিনি নিজেকে পর্নো ক্রিয়েটর হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, সরাসরি তার ওয়েবসাইটের লিংক যুক্ত করেছেন এবং দাবি করেছেন, ‘বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান মডেল।’
২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ৩৫৬টি পোস্ট ছিল, যার প্রথমটি প্রকাশিত হয়েছিল ৩ মে ২০২৪ সালে। এ পোস্টগুলোর অনেকগুলোতেই তার পর্নো কনটেন্ট প্রচার করা হয়েছে এবং অনুসারীদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিতে আহ্বান করা হয়েছে।
অন্য পোস্টগুলোতে তিনি বিলাসী ও স্বাধীন জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরেছেন, যেখানে প্রায়ই মাদক ও গাঁজার মতো উপকরণ দেখা যায়।
১০টির বেশি পোস্টে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের ছবি দেখা গেছে, এবং প্রায় সমান সংখ্যক পোস্টে মোটরবাইক ও প্রাইভেট কারের ছবি রয়েছে। প্রায় সব পোস্টেই টাকা এবং নিজের বড় আয়ের প্রসঙ্গ সামনে আনা হয়েছে। এ পোস্টগুলো দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে যোগ দিতে।