শাহজালালে সংকট কাটেনি, ফ্লাইট বিপর্যয়

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম

কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের পর সৃষ্ট সংকট এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। রোববার সকালেও ফ্লাইট ছাড়তে বিলম্ব হয়েছে। সকাল থেকেই সেখানে ভিড় করেছেন আমদানি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এরই মধ্যে কার্গো সেকশনে আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কমিটি গঠন করেছে সরকার।
ফ্লাইট ছাড়তে বিলম্ব হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন বিদেশগামী যাত্রীরা। বিশেষ করে ট্রানজিট যাত্রীদের বিড়ম্বনা চরম আকার ধারণ করেছে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাতের শিডিউলে থাকা অনেক ফ্লাইট আজ সকালে (রোববার) ছাড়তে হয়েছে। কোনো কোনো ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর ছেড়ে গেছে। সকালের ফ্লাইটগুলোও শিডিউল বিপর্যয় এড়াতে পারেনি। সকালের বেশ কিছু ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর ছাড়তে হচ্ছে।
এদিকে সকাল থেকেই কার্গো ভিলেজ এলাকায় ভিড় করেছেন আমদানি সংশ্লিষ্ট লোকজন।
প্রত্যক্ষদর্শী এক সিএন্ডএফ এজেন্ট জানান, বেলা আড়াইটায় কার্গো ভিলেজ অংশের কুরিয়ার সেকশন থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে, যা বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট সংলগ্ন। সেই আগুন ছড়িয়ে গিয়ে সবশেষ বিমানবন্দরের ভিআইপি গেট সংলগ্ন এলাকার ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল রাখার অংশে পৌঁছায়। ফলে পুড়ে যায় আমদানি করা প্রায় বেশির ভাগ মালামাল।
এদিকে কয়েকজন পোশাক উৎপাদক জানিয়েছেন, আমদানি ক্ষতির পাশাপাশি উৎপাদনে ব্যাঘাত এবং পুনরায় পণ্য পৌঁছে দিতে নতুন করে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
এর আগে, গতকাল শনিবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে এ আগুন লাগে। প্রায় সাত ঘণ্টা পর অর্থাৎ রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনের কারণে গতকাল বিকেলে শাহজালাল বিমানবন্দরে সাময়িকভাবে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, গতকাল ঢাকাগামী ৮টি ফ্লাইট চট্টগ্রামে, তিনটি সিলেটে এবং দুটি ভারতের কলকাতায় অবতরণ করে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিমানবন্দরে আটকা পড়ে। পরে রাত ৯টার দিকে বিমানবন্দর চালু হলে ফ্লাইট ওঠানামা শুরু হয়।
বিমানবন্দরে কর্মরত এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আগুন লাগার পরপরই দুর্ঘটনা এড়াতে হ্যাঙ্গারে থাকা কয়েকটি বিমান কিছুটা দূরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে দেখেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের পাশে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে লাগা আগুন দ্রুত পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন এতটা ভয়াবহ ছিল যে, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
বেবিচকের জনসংযোগ কর্মকর্তা কাওছার মাহমুদ বলেন, ঘটনার পরপরই বিমানবন্দর ফায়ার সেকশন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিট, নৌবাহিনী এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সম্মিলিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দুপুর আড়াইটার দিকে আগুন লাগার খবর পাই। এরপর দ্রুত ঘটনাস্থলে দমকলকর্মীদের পাঠানো হয়।
গতকাল সন্ধ্যার পর দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এ সময় তিনি জানান, যেখানে আগুন লাগে তার পুরোটাই আমদানি কার্গো। রপ্তানি কার্গো পুরোপুরি নিরাপদ আছে।
এদিকে কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এ কমিটিকে দ্রুততম সময়ে অগ্নিকাণ্ডের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারীকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব মো. রইচ উদ্দিন খান ও মো. তারেক হাসান, কাস্টম হাউস ঢাকার যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ কামরুল হাসান এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব পঙ্কজ বড়ুয়া (সদস্য সচিব)।
এর আগে, কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে গঠিত এ কমিটি সভাপতি চিফ (ফ্লাইট সেফটি) এবং সদস্য সচিব উপ-ব্যবস্থাপক (ইন্স্যুরেন্স)।
এ ছাড়া সদস্য হিসেবে আছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, মহাব্যবস্থাপক (কর্পোরেট সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি), চিফ ইঞ্জিনিয়ার (কোয়ালিটি এসুরেন্স), উপ-মহাব্যবস্থাপক (সিকিউরিটি), উপ-মহাব্যবস্থাপক (কার্গো-রপ্তানি)।
এই কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।