Logo
Logo
×

জাতীয়

এইচএসসির ফলে বিপর্যয়: স্নাতকে ফাঁকা থাকবে পৌনে ১১ লাখ আসন

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১৩ এএম

এইচএসসির ফলে বিপর্যয়: স্নাতকে ফাঁকা থাকবে পৌনে ১১ লাখ আসন

চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় ফলে বিপর্যয়ের কারণে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে পৌনে ১১ লাখ আসনই ফাঁকা থাকবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেশ কিছু কলেজ ও জোড়াতালি দিয়ে চলা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংকটে পড়বে।

অবশ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকছেই। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কিছুটা কম। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সূত্র এসব জানিয়েছে।

এ বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন। দেশের উচ্চশিক্ষা দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ মিলিয়ে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে মোট আসনসংখ্যা ১৮ লাখ ৭ হাজার ৫৭৬টি। এই হিসাব অনুযায়ী এবার উত্তীর্ণ হওয়া সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্নাতক পর্যায়ে আসন ফাঁকা থাকবে ১০ লাখ ৮০ হাজার ৬১৬টি।

তথ্য বলছে, বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন না। তবে আগের বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কম হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কিছুটা কম।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘আশা করছি, প্রতিবারের মতো এবারও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে প্রতিযোগিতা হবে। তবে তা হবে তুলনামূলক কম। পাসের সংখ্যা কম থাকায় মানহীন অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর সংকটে পড়বে।’

চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন শিক্ষার্থী। উত্তীর্ণ হয়েছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন। তাঁদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা রেকর্ডসংখ্যক কমেছে। এর মধ্যে পাসের হার গত বছরের তুলনায় ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমেছে। একই সঙ্গে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন। ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ওই বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন শিক্ষার্থী।

ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তরপত্র যথাযথ মূল্যায়ন, শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষায় খারাপ ফল এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে ফলাফলে বিপর্যয় হয়েছে। ২০০৪ সালের পর এই প্রথম এইচএসসির ফলে পাসের হার এত কম। ওই বছর পাসের হার ছিল ৪৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। পরের বছর ২০০৫ সালে পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। মূলত ২০০৫ সাল থেকেই পাসের হার বাড়তে শুরু করে।

ইউজিসির তথ্যমতে, ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে আসনসংখ্যা ৫০ হাজার ৪৪৫টি, সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন রয়েছে ৪ হাজার ৩৫০টি, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৩৪০টি, সরকারি ডেন্টাল কলেজে ৫৪৫টি, বেসরকারি ডেন্টালে ১ হাজার ৩৫০ জন, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে ৩৫০টি, ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স কোর্সে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৯টি, পাস কোর্সে ১ হাজার ১৬০টি, ঢাকার সরকারি ৭ কলেজে ২৩ হাজার ৬৩০টি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান), স্নাতক কারিগরি/সমমান পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি কলেজে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫টি, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন মাদ্রাসায় ৬৪ হাজার ৫২৯টি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৭ হাজার ৫৯৩টি, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০টি, টেক্সটাইল কলেজে ৭২০টি, মেরিন কলেজে ৬৬০টি, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ৩ হাজার ৭৯০টি, আন্তর্জাতিক বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০০টি, নার্সিং ও মিডওয়াইফারিতে ৫ হাজার ৬০০টি আসন রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের প্রধান লক্ষ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। এবার এসব প্রতিষ্ঠানে আসন রয়েছে ৫৫ হাজার ৩৫০টি। এর বাইরে কিছু শিক্ষার্থী ‘নামকরা’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত বিষয়ে পড়তে ভর্তি হন। তাঁরা জানান, ঢাকার সরকারি সাত কলেজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কিছু ভালো কলেজেও শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ নেবেন। তবে সংকটে পড়বে জোড়াতালি দিয়ে চলা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেশ কিছু কলেজ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার