৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিবিরের জয়-জয়কার

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:২৮ পিএম

দেশের চার স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলগুলো। চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ পদে বিজয়ী হয়ে শিবিরের প্রার্থীরা এবার ছাত্ররাজনীতিতে তাদের শক্ত অবস্থান নতুন করে জানান দিয়েছে।
ডাকসু নির্বাচন
৬ বছর পর এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে প্রথমবারের মত ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেল। এর আগে অনেকবার অংশ নিলেও সংগঠনটি ঢাবিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি। তবে এবার ভিপি-জিএস, এজিএসসহ ২৮টি পদের ২৩টিতেই বিজয়ী হয় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা।
৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রশিবির প্যানেলের আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) পান ১৪ হাজার ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান ৫ হাজার ৭০৮ ভোট পান।
জিএস পদে একই প্যানেলের এস এম ফরহাদ হোসেন এবং এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান বড় ব্যবধানে বিজয়ী হন। এছাড়া আরও ২০ পদে বিজয় লাভ করেছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। প্যানেলের বাইরে বাকি পাঁচ পদে জয়ী হয়েছেন অন্য প্রার্থীরা।
প্রসঙ্গত, এবার ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ৪৭১ জন। আর ১৮টি হল সংসদে নির্বাচন হয়েছে ১৩টি পদে। হল সংসদের ২৩৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৩৫ জন।
ডাকসুতে মোট ভোটার ছিল ৩৯ হাজার ৮৭৪। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন আর ১৩টি ছাত্র হলে ২০ হাজার ৯১৫ জন ভোটার ছিল।
ডাকসুর দুইদিন পরেই ১১ সেপ্টেম্বর ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন।
ডাকসুতে বড় সাফল্যের পর এখানেও সেই ধারা অব্যাহত রাখে শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্রার্থীরা। জাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে জিএস, এজিএসসহ ২০টিতে শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি পাঁচটি পদের মধ্যে ভিপিসহ তিনটিতে স্বতন্ত্র এবং দুটিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।
যদিও এ নির্বাচনের আটটি প্যানেলের মধ্যে ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জন করে। প্রগতিশীল রাজনীতির আধিক্য হিসাবে পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবিরের এমন জয়ে বিস্মিত প্রশাসনসহ শিক্ষার্থীদের অনেকেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত ঐক্য জোটের মাজহারুল ইসলাম। জাকসুতে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদ দুটি। দুটিতেই ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন। তারা হলেন-এজিএস (পুরুষ) ফেরদৌস আল হাসান ও এজিএস (নারী) আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পর জাকসুতেও বড় জয় পায় ইসলামী ছাত্রশিবির।
জাকসুতে মোট ভোটার ছিল ১১ হাজার ৮৯৭ জন। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন প্রায় ৫৪৮ জন প্রার্থী।
দীর্ঘ তিন যুগ পর এবার ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ও হলসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষ ১৯৯০ সালে চাকসুর নির্বাচন হয়েছিল। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এর আগে ডাকসু ও জাকসুতেও অভূতপূর্ব সাফল্য দেখায় ছাত্রশিবির। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চাকসুতেও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি-জিএসসহ ২৬ পদের মধ্যে ২৪টিতেই জয়লাভ করে ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের প্রার্থীরা।
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের বাইরে এজিএস পদে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক এবং সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের তামান্না মাহবুব প্রীতি।
ভিপি পদে বিজয়ী ছাত্রশিবিরের ইব্রাহীম পান ৭৯৮৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় পান ৪৩৭৪ ভোট।
জিএস পদে বিজয়ী ছাত্রশিবিরের সাঈদের ভোটসংখ্যা ৮০৩১। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শাফায়েত হোসেন পান ২৭৩৪ ভোট।
চাকসু নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন ৯০৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৬টি পদের বিপরীতে ৪১৫ জন, হল সংসদে ৪৭৩ জন এবং হোস্টেল সংসদে ২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২৭ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ ও ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন।
৩৫ বছর পর এবার ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন (১৪তম) হয়েছিল ১৯৯০ সালের ২৯ জুলাই। রাকসু নির্বাচনের আগে দেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় পায় তাদের ছাত্র প্রতিনিধি, যেখানে ছিল ছাত্রশিবিরের একক আধিপত্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫-এ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৩ পদের মধ্যে ২০টিতেই জয়লাভ করে ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট। তবে জিএসসহ ৩টি পদ তারা হাতছাড়া করে। এই তিনটি পদের মধ্যে কেবল ক্রীড়া সম্পাদক পদে নার্গিস খাতুন জয়ী হয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেল থেকে।
এর বাইরে বাকি দু'জনের একজন নির্বাচিত হয় জিএস পদে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাহউদ্দিন আম্মার, যিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আলোচিত সমন্বয়ক ছিলেন। আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ তোফা।
ভিপি পদে জাহিদ পান ১২,৬৮৭ ভোট, আর ছাত্রদলের আবীর পান ৩,৩৯৭ ভোট। এজিএস পদে এস এম সালমান সাব্বিরের ভোট ৬,৯৭১ এবং ছাত্রদলের এষা পান ৫,৯৪১ ভোট।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৭টি হলের মধ্যে ৬টি মেয়েদের এবং ১১টি ছেলেদের। মোট ভোটার ছিলেন ২৮,৯০৯ জন, যাদের মধ্যে ২০,১৮৭ জন ভোট দিয়েছেন। ভোটের হার ছিল ৬৯.৮৩ শতাংশ।