Logo
Logo
×

জাতীয়

রাস্তার পাশের পুরি-পেঁয়াজু-ফাস্টফুডের দোকানকেও নিতে হবে নিবন্ধন

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৮ এএম

রাস্তার পাশের পুরি-পেঁয়াজু-ফাস্টফুডের দোকানকেও নিতে হবে নিবন্ধন
রাস্তার পাশের রেস্টুরেন্ট, ফলের জুস, পানীয়, পিঠা-পুলি, পুরি-পেঁয়াজুসহ সব ধরনের ফাস্টফুডজাতীয় সরাসরি খাওয়ার উপযোগী বাহারি খাদ্য ব্যবসায়ীদের তদারকির আওতায় আনতে চায় সরকার। এজন্য এ ধরনের ব্যবসায়ীদের নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) নিতে হবে।

বিষয়টি বাস্তবায়নে ‘নিরাপদ খাদ্য (রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা, ২০২৫’ এর খসড়া করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এতে জবাবদিহির মধ্যে আসবেন সব শ্রেণির খাদ্য ব্যবসায়ী।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, অনেক খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। এদের তদারকির মধ্যে আনতে নিরাপদ খাদ্য আইনের অধীনে কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েটি প্রবিধানমালা করছে। এর একটি হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য (রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা। বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীদের নিবন্ধন ও লাইসেন্সের আওতায় আনতে এটি করা হচ্ছে। ছোট ব্যবসায়ীদের শুধু নিবন্ধন নিলেই হবে। নিবন্ধন নেওয়ার পর খাদ্যনিরাপদ করতে এ ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।

খসড়া প্রবিধানমালা অনুযায়ী, ছোট ব্যবসায়ীদের নিবন্ধন নিতে কোনো টাকা লাগবে না, তবে নবায়নে ১০০ টাকা ফি দিতে হবে। নিবন্ধন না নিলে সর্বোচ্চ এক বছরের জেল বা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড পেতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) জাকারিয়া বলেন, ‘প্রবিধানমালা অনুযায়ী খাদ্য ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে নিবন্ধন নিতে হবে। এটা করার মানে হচ্ছে এর মাধ্যমে যাতে আমরা জানতে পারি কারা কারা খাদ্যপণ্যের ব্যবসা করছে। বিশেষ করে আমরা ছোট ব্যবসায়ীদের তালিকার মধ্যে আনবো।’

তিনি বলেন, ‘যারা রাস্তার পাশে ছোট ছোট দোকান করে খাবার বিক্রি করছেন, তারা কারও কাছে রিপোর্ট করেন না। তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা নিবন্ধন নিলে সুবিধা হবে, আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারবো, মনিটরিং করতে পারবো।’

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘একেবারে ছোট ব্যবসায়ী যারা প্রবিধানমালার তফসিল-১ এ অন্তর্ভুক্ত, আমরা তাদের বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন দেবো। এটা ঠিক ওই অর্থে কোনো ধরনের লাইসেন্স দেওয়া নয়। তারা যাতে আমাদের আওতার মধ্যে থাকে, প্রশিক্ষণ হলে যাতে আমরা তাদের ডাকতে পারি।’ ‘আমাদের আইনে (নিরাপদ খাদ্য আইন) যাদের কথা বলা হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স লাগবে। যে সব খাদ্য ব্যবসায়ী সরকারি অন্য কোনো দপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়েছে, আমাদের কাছ থেকে তাদের লাইসেন্স নিতে হবে না। ফর্টিফায়েড খাদ্যের ক্ষেত্রে তেল ও লবণ ছাড়া (সরকারি দুটি দপ্তর থেকে তারা লাইসেন্স নেয়) অন্য ক্ষেত্রে কারও লাইসেন্স নেই। আমরা সেগুলোকে লাইসেন্স দেবো।’

জাকারিয়া আরও বলেন, ‘বিশেষ খাদ্য বা কোনো খাদ্য ওষুধ না খাদ্য হিসেবে সংজ্ঞায়িত হবে- সেই অনুযায়ী লাইসেন্সি কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত হবে। এমন কিছু বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত লাগবে। সেটার জন্য আমরা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ করছি। এসব বিষয়ে নিষ্পত্তি করতে হবে।’

প্রবিধানমালাটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মতামত পাওয়া গেছে, এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য শিগগির পাঠানো হবে বলেও জানান নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।

খসড়া প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, ‘খাদ্যপণ্য বা খাদ্য উপকরণ উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত, সরবরাহ বা বিক্রি সংশ্লিষ্টদের নাম ও ঠিকানা সংরক্ষণে খাদ্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বা জড়িত হতে আগ্রহী সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তবে তফসিল-১ এ বর্ণিত ব্যবসার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশন নিতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না।’

যেসব খাদ্য ব্যবসার ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক
তফসিল-১ অনুযায়ী বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশনের আওতাভুক্ত খাদ্য ব্যবসার মধ্যে রয়েছে- সরাসরি খাবার উপযোগী খাবার প্রস্তুতকারী/পরিবেশনকারী এমন সব খাদ্য ব্যবসা (যেমন- রেস্টুরেন্ট, বেকারি, ফলের জুস, পানীয়, পিঠা, পুলি, পুরি, পেঁয়াজু ইত্যাদি; সব ধরনের ফাস্ট ফুড, ক্যাটারিং সার্ভিস ইত্যাদি)। মোড়কাবদ্ধ বা প্যাকেট করা সব ধরনের খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ।

এছাড়া সব ধরনের আইসক্রিম ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ, মিষ্টি প্রস্তুত ও বিক্রির কারখানা এবং দোকান, পাইকারি মুদি খাদ্য ব্যবসা, কাঁচা ও তাজা খাদ্য এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য আমদানি ছাড়া সব ধরনের খাদ্য আমদানি, সরকারি ছাড়া অন্য সব খাদ্য মজুত ও সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত খাদ্যগুদাম, সংরক্ষণাগার ও কোল্ড স্টোরেজকে নিবন্ধন নিতে হবে।

পাইকারি বা বাণিজ্যিক ভোজ্যতেল উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, আমদানি ও বিপণন, ভোজ্য লবণ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ, বিশেষ ধরনের খাদ্য (যেমন- শিশুদের খাদ্য, বয়স্ক বা বিশেষ রোগে আক্রান্তদের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত খাদ্য) উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, আমদানি ও বিপণন, সব ধরনের সমৃদ্ধ খাদ্য (ফর্টিফায়েড ফুড) উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও আমদানির ক্ষেত্রেও নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।

নিবন্ধন নিতে হবে এমন ব্যবসার মধ্যে আরও রয়েছে- স্বাস্থ্য সহায়ক খাদ্য বা সম্পূরক খাদ্য, বিশেষ পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত খাদ্য, চিকিৎসাজনিত কারণে বিশেষ পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত খাদ্য, প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও আমদানি/রপ্তানি। একাধিক ধাপে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ (যেমন- শুঁটকি, গুড়, কুমড়ার বড়ি, মিষ্টান্ন ইত্যাদি)।

রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ ও নবায়নে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ তিন বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়া রেজিস্ট্রেশন সনদ হস্তান্তর অথবা পরিবর্তন করা যাবে না। রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে ৯০ দিন আগে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। নিবন্ধনে কোনো টাকা লাগবে না, তবে নিবন্ধন নবায়নে ১০০ টাকা ফি দিতে হবে।

রেজিস্ট্রেশন ছাড়া এসব খাদ্য ব্যবসা পরিচালনা করলে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ এর ৩৮ ধারার লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং আইনের ৫৮ বা ক্ষেত্রমতে ৫৯ ধারার বিধান অনুযায়ী দণ্ড পেতে হবে বলে প্রবিধানমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনের ওই ধারার (৩৮ ধারা) লঙ্ঘনের শাস্তি ছয় মাস থেকে এক বছরের জেল বা এক থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড পেতে হবে। একই অপরাধ আবার করলে এক বছরের জেল বা চার লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।

যেসব ব্যবসার ক্ষেত্রে নিতে হবে লাইসেন্স
খসড়া প্রবিধিতে বলা হয়েছে, খাদ্য ব্যবসার লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তফসিল-২ এ বর্ণিত খাদ্য ব্যবসা পরিচালনা করিতে পারবেন না।

স্বাস্থ্য সহায়ক খাদ্য বা সম্পূরক খাদ্য, বিশেষ পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত খাদ্য, চিকিৎসাজনিত কারণে বিশেষ পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত খাদ্য, প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক খাদ্য, নিউট্রাসিউটিক্যাল এবং এমন অন্যান্য খাদ্য, জৈব খাদ্য, অভিনব খাদ্যের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে।

এছাড়া খাদ্য ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে যে খাদ্য-স্থাপনায় ওই ব্যবসা পরিচালনা করা হবে সেই খাদ্য-স্থাপনার (প্রিমিসেস) লাইসেন্স নিতে হবে। খাদ্যপণ্য উৎপাদন বা আমদানির জন্য প্রতিটি খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে উৎপাদন/আমদানি লাইসেন্স নিতে হবে।

খাদ্যপণ্য উৎপাদন/আমদানি লাইসেন্স প্রাপ্ত কোনো খাদ্যপণ্য কোনো ব্র্যান্ড নামের আওতায় বাজারজাত করতে হলে এমন প্রতিটি খাদ্যপণ্যের নিবন্ধন নিতে হবে বলে খসড়া প্রবিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার