Logo
Logo
×

জাতীয়

এইচএসসির ফলের অপেক্ষায় সাড়ে ১২ লাখ পরীক্ষার্থী

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫১ এএম

এইচএসসির ফলের অপেক্ষায় সাড়ে ১২ লাখ পরীক্ষার্থী

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে বৃহস্পতিবার সকালে, যার অপেক্ষায় রয়েছেন দেশের প্রায় সাড়ে ১২ লাখ পরীক্ষার্থী।  এদিন সকাল ১০টায় 'বড় ধরনের আনুষ্ঠানিকতা' ছাড়াই এ ফল প্রকাশ করতে যাচ্ছে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ড। সকালে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ফল পাবেন পরীক্ষার্থীরা। একই সময়ে ফল মিলবে অনলাইনেও; শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে।

গত ২৬ জুন শুরু হয় এইচএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছিলেন।

চলতি বছর নয়টি সাধারণ বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ জন, যা গত বছরের চেয়ে ৭২ হাজার ৮৮৩ জন কম। ৪ হাজার ৮০৮টি প্রতিষ্ঠানের এসব শিক্ষার্থী ১৬০৫টি কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ১০২ জন, যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৯৭৪ জন কম। ২ হাজার ৬৮২টি মাদ্রাসার এসব পরীক্ষার্থী ৪৫৯টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষায় অংশ নেন।

আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ভোকেশনাল, ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজার ৬১১ জন, যা গত বছরের তুলনায় ৭ হাজার ২৫ জন কম। ১ হাজার ৮২৪টি প্রতিষ্ঠানের এসব পরীক্ষার্থী ৭৩৩টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষায় বসেন।

গত ১৯ আগস্ট এইচএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়। ২১ থেকে ৩১ অগাস্টের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। ১৯ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিন পূর্ণ হবে। রেওয়াজ মেনে লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা হচ্ছে।

'বাড়তি নাম্বার মিলবে না’

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় একযোগে কলেজগুলোতে এবং ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা বোর্ডগুলোর মোর্চা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির। খন্দোকার এহসানুল ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানও।

তিনি বুধবার রাতে বলেন, "সকালেই সব শিক্ষার্থী ফল পেয়ে যাবেন।" বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে ফলের পরিসংখ্যান নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, "এ সভায় ফলের নানা পরিসংখ্যান সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হবে।"

এবার ‘গ্রেস মার্কিং’ থাকছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "যেমন পরীক্ষা শিক্ষার্থীরা দিয়েছেন, তেমনই ফল পাবেন। এসএসসির মত উচ্চমাধ্যমিকেও আমরা প্রধান পরীক্ষকদের বলেছিলাম, গ্রেস মার্কিং বা ভালো গ্রেডের জন্য দয়া করে যেন খাতায় বাড়তি নম্বর না দেওয়া হয়। তাই যে পরীক্ষার্থী খাতায় যেমন লিখেছেন, তেমনই নম্বর পাবেন।"

এদিকে ফল প্রকাশ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সভাকক্ষে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরারও ব্রিফিংয়ে আসবেন বলে বুধবার রাতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ফল মিলবে যেভাবে

ঢাকা বোর্ডের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওয়েবসাইটে গিয়ে (www.educationboardresults.gov.bd) রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা ‘রেজাল্ট শিট’ সংগ্রহ করতে পারবেন।

আর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে (www.dhakaeducationboard.gov.bd) রেজাল্ট কর্নারে গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন দিয়ে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক রেজাল্ট শিটও ডাউনলোড করা যাবে।

এছাড়া এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানতে পারবেন পরীক্ষার্থী। এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে বোর্ডের ইংরেজি নামের প্রথম তিন অক্ষর (ঢাকা বোর্ডের ক্ষেত্রে dha, রাজশাহী বোর্ডের ক্ষেত্রে raj, মাদ্রাসা বোর্ডের ক্ষেত্রে mad) স্পেস দিয়ে রোল নম্বর স্পেস দিয়ে পাসের সাল টাইপ করে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।

পাসের হার ও জিপিএ-৫ 'কমার শঙ্কা"

খাতায় 'গ্রেস মার্ক' না দেওয়া হলে এইচএসসি ও সমমানে পাসের হার ও জিপিএ ৫ কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করছেন দীর্ঘ দিন উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করা সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদা।

তিনি বর্তমানে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ ইংরেজি বিভাগে কর্মরত থাকায় গত কয়েক বছর ধরে দায়িত্ব নিচ্ছেন না।

বুধবার রাতে তিনি বলেন, "গ্রেস মার্ক দেওয়ার কালচারটা শুরু থেকেই ছিল, এটা আসলে পরীক্ষকদের মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। অনেক পরীক্ষক অনেকটা মায়া করেই ৩২ বা ৩১ পাওয়া পরীক্ষার্থীর নম্বর বাড়িয়ে দিতেন।

"আমি যখন পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছি, তখন কয়েকবার দেখেছি এ বিষয়ে পরীক্ষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে কখনও তা আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হত না।

তিনি বলেন, “এখন বোর্ড থেকে যদি গ্রেস মার্ক না দিতে বলা হয়, তার প্রভাব জিপিএ ৫ কিংবা পাসের হারে প্রতিফলিত হওয়াটা অস্বাভাবিক না।"

গতবছর জুলাই অভ্যুত্থানের পর এইচএসসি ও সমমানের কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল দেওয়া হয়েছিল তুলে ধরে তিনি বলেন, "সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে ফেল করার সুযোগ নাই, সে বিবেচনাতেও গতবারের থেকে এবার পাসের হার কিছুটা কমতে পারে।"

গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছিলেন ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।

এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১৪ শতাংশ।

এর আগে ২০২৩ সালে এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ; তাদের মধ্যে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন।

'ফল খারাপ হতেই পারে’

ফল খারাপ হওয়ায় প্রতিবছরই দু-একজন শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা কিংবা নানা অঘটন ঘটানোর খবর সংবাদমাধ্যমে আসে।

শিক্ষার্থীদের এ ধরনের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইআর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

খাতা পুনরীক্ষণের আবেদন শুরু শুক্রবার

আগামী শুক্রবার থেকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন গ্রহণ করা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির।

ঢাকা বোর্ড বলছে, ১৭ থেকে ২৩ অক্টোবর ওয়েবসাইটের (https://rescrutiny.eduboardresults.gov.bd) মাধ্যমে খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন নেওয়া হবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার