টাইফয়েড টিকার কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণায় বিস্ময়কর তথ্য

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৩ পিএম

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি। গত রোববার (১২ অক্টোবর) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয় রাজধানীর আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা কেন্দ্র থেকে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি প্রায় ৫ কোটি শিশুকে এ টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। মাসব্যাপী এ ক্যাম্পেইনে শিশুদের বিনামূল্যে ইনজেকটেবল টাইফয়েড টিকা দেওয়া হচ্ছে।
এ কর্মসূচিটি সফলের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রচারে বলা হয়েছে— 'টিকাটি নিরাপদ ও কার্যকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যাচাই করা এবং সৌদি হালাল সেন্টার কর্তৃক হালাল সনদপ্রাপ্ত'।
এর আগে পাকিস্তান ও নেপালেও শিশুদের এই টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নেপালে এই টিকার কার্যকরিতা নিয়ে ২০ হাজার শিশুর মধ্যে একটি গবেষণা চালানো হয়েছে। বিশ্বখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছে। সেখানে বিস্ময়কর তথ্য উঠে এসেছে।
ল্যানসেটের গবেষণায় বলা হয়েছে— দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে টাইফয়েডের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি পাকিস্তানে সেফালোস্পোরিন অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট টাইফয়েড ছড়িয়েছিল। এ পরিস্থিতিতে টাইফয়েড থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হতে পারে ভ্যাকসিন।
টিকা দেওয়ার পর প্রায় এক বছর ধরে সব শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখা হয়। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া টাইফয়েড রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করে দুদলের মধ্যে তুলনা করা হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, যারা টাইফয়েড কনজুগেট টিকা (টিসিভি) পেয়েছিল, তাদের মধ্যে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার হার নাটকীয়ভাবে কম, মাত্র ৭ জনের টাইফয়েড শনাক্ত হয়। বিপরীতে মেনিনজাইটিস টিকা পাওয়া কন্ট্রোল গ্রুপের মধ্যে ৩৪ জন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এ তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে, এই টিকার কার্যকারিতা ৭৯ শতাংশ। অর্থাৎ টিকাটি টাইফয়েড হওয়ার ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে আনে।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, টিকাটি প্রথম বছরে ৮১ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছরে ৭৯ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। 'টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি)' নামের এই টিকা ৯ মাস বয়সি শিশু থেকে শুরু করে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত সবার জন্য নিরাপদ। টিকা দেওয়ার পর সামান্য জ্বর বা ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা ছাড়া বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা যায়নি।
টাইফয়েড একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা মূলত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ২০১৯ সালের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হন এবং তাদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ মারা যায়। আক্রান্তদের একটি বড় অংশই শিশু ও কিশোর বয়সি।
টাইফয়েড টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
টিকা দেওয়ার পর কিছু মৃদু ও সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। টিসিভি টিকা পাওয়া শিশুদের মধ্যে ৯ শতাংশের সামান্য জ্বর এসেছিল। এ ছাড়া ইনজেকশনের জায়গায় হালকা ব্যথা, ফোলাভাব বা লাল হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও দেখা যায়। তবে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই এসব উপসর্গ সেরে যায়। এ গবেষণার ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ইতিমধ্যে টাইফয়েড-প্রবণ দেশগুলোকে তাদের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে টিসিভি অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিডের জন্য বুস্টার ডোজ পর্যন্ত নিয়েও অনেকে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। সে কারণেই টিকা নিয়ে 'এক ধরনের অনাস্থা' কারও কারও মধ্যে দেখা যাচ্ছে। তবে টাইফয়েডের টিকা নিয়ে 'উদ্বেগ কিংবা অনাস্থার' কোনো কারণ নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, দেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সি শিশু, কিশোর-কিশোরীদের বিনামূল্যে এ টিকা দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে সরকার এবং ১৮ দিনের এই টিকাদান ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য হচ্ছে— ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া।