১৫ সেনা কর্মকর্তাকে রাখা হতে পারে সাবজেলে

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৪৫ এএম

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সেনানিবাসে সাবজেল (উপকারাগার) করে সেখানে রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে এই সাবজেল থেকেই তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হতে পারে।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর আটক আসামিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নিয়ম রয়েছে। হেফাজতে থাকা ওই ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে, নাকি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেই তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে, সে বিষয়ে এখনো কেউ নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেননি।
জানতে চাইলে আজ রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, সেনানিবাসের ভেতর সাবজেল ঘোষণার বিষয়ে এখনো ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রস্তাব আসেনি।
এদিকে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে করা দুই মামলাসহ তিন মামলায় পরোয়ানাভুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার করার পূর্ণ আইনি ক্ষমতা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘গুমের মামলায় হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের বিষয়ে আইনি মতামত চাইলে আমরা দেব। তবে আইনের সাধারণ বিধান অনুযায়ী, গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আসামিকে আদালতে হাজির করতে হয়। এরপর আদালতই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেন।’
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ বলেননি যে সেনা কর্মকর্তারা আটক রয়েছেন। মিডিয়ার খবর আমরা আমলে নিচ্ছি না। যদি আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়, তাহলে অবশ্যই তাঁদের আদালতে হাজির করতে হবে, এটাই আইনের বিধান।’
তিনি বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ একটি বিশেষ আইন। এটি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশসহ শৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধ বিচারের জন্য তৈরি। এই আইনে যে অপরাধগুলোর বিচার করা হচ্ছে, সেগুলোর বর্ণনা বাংলাদেশের সাধারণ কোনো আইনে নেই। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর নিজস্ব আইনেও নেই। এই আইনটি আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত অপরাধ বিচার করতে সক্ষম। সংবিধান নিজেই বলেছে ১৯৭৩ সালের ট্রাইব্যুনাল আইন কোন ক্ষেত্রে সংবিধানের চেয়েও শক্তিশালী। অর্থাৎ এই আইনের কোনো বিধানকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না, সুপ্রিম কোর্টেও নয়, রিট পিটিশনেও নয়। তাই এই আইনের বিচারপ্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে, এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা এই দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট আসামি ৩০ জন। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন সেনাবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত বুধবার আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পরোয়ানা জারি হওয়া ২৫ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন চাকরিতে আছেন, পিআরএলে আছেন একজন। বাকি ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত। সেনাসদরের নির্দেশে ৯ অক্টোবর চাকরিরত ১৪ জন ও পিআরএলের একজন উপস্থিত হলে তাঁদের হেফাজতে নেওয়া হয়। চাকরিরত অপরজন মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ সেনাসদরে হাজির না হয়ে আত্মগোপন করেছেন।
সেনাসদর শনিবার সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ৯ অক্টোবর সকালে মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ বাসা থেকে বের হওয়া পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত ৯ জন এখন আর সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত নন। পুলিশ চাইলে তাঁদের গ্রেপ্তার করতে পারে। তাঁদের কেউ চাইলে সেনাসদরে আত্মসমর্পণও করতে পারেন।
সেনানিবাসে উপকারাগার স্থাপনের বিষয়ে সূত্র বলছে, সরকার চাইলে যেকোনো স্থাপনাকে কারাগার ঘোষণা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে আসামিরা কোথায় থাকবেন, তা আদালত নির্ধারণ করেন। এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার দুটি বাড়িকে সাবজেল ঘোষণা করে আটক রাখা হয়েছিল।
পরোয়ানাভুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের সেনা হেফাজতে রেখে বিচার করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এ ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।
আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ারা হাতে পাওয়ার পর সেনাবাহিনীকে তাদের হেফাজতে থাকা আসামিদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। অথবা পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করতে গেলে সেই সুযোগ দিতে হবে।