বাড়িভাড়ার দাবিতে ঘরছাড়া শিক্ষকরা, রাত কাটছে খোলা আকাশের নিচে

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪৪ এএম

বাড়িবাড়া ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ঘর ছেড়ে ঢাকায় আন্দোলনে এসেছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তবে সরকার দাবি পূরণে সাড়া না দেওয়ায় তারা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার (১২ অক্টোবর) দিনগত রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কাটাচ্ছেন তারা। খোলা আকাশের নিচে পলিথিন বিছিয়ে ঘুমাচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগররা। মাথার নিচে নেই বালিশ।
চাঁদপুর থেকে আসা আবদূর রহিম নামে একজন শিক্ষক বলেন, শিক্ষকতা করতে এসে সারাটা জীবনই কষ্টে কাটলো। এক-দুই রাত বাইরে ঘুমানোর চেয়েও সারা বছর বেশি কষ্টে থাকি। অর্থকষ্টের কাছে রাতে বাইরে ঘুমানোর কষ্ট কিছুই না।
তিনি আরও বলেন, এখানে অনেক মশা। চারপাশে বিশ্রী দুর্গন্ধ। তারপরও কষ্টের রাত কাটানোর পর যদি বাড়িভাড়াটা সরকার বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমরা খুশি মনে ক্লাসে ফিরে যাবো।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে আসা ইংরেজির শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স করেছি আমি। শখের বসে অন্য পেশা ছেড়ে শিক্ষকতায় আসা। কত আশা ছিল৷ কিছুই পূরণ হয়নি৷ দিন যত গড়িয়েছে, কষ্ট বেড়েছে আর আশা ফুরিয়েছে৷
আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, প্রায় ১৩ বছর চাকরি করছি৷ এরপর আজকে বাড়িভাড়া ভাতার দাবিতে রাস্তার ফুটপাতে রাত কাটাতে হচ্ছে৷ এ দেশে জন্ম নেওয়াটা অথবা শিক্ষকতা করাটা পাপ। সেই পাপ মোচন করছি।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী রাতে বলেন, রাতে শহীদ মিনারে আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। জোটের নেতারা আমরা সবাই এখানে আছি। আমাদের সম্মানিত শিক্ষকরাও আছেন৷ আমরা এবার খালি হাতে বা শুধু মুখের আশ্বাসে ঘরে ফিরবো না।
অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী আরও বলেন, রাতেও অবস্থান চলছে, আগামীকাল দিনেও চলবে। পাশাপাশি সারাদেশের যে ৩০ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; সেখানে আগামীকাল থেকে পূর্ণ কর্মবিরতি করা হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কেউ ক্লাসে ফিরবে না।
জানা যায়, দেশের প্রায় সাড়ে ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বর্তমানে মাসিক ১০০০ টাকা করে বাড়িভাড়া ভাতা পান। এ ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষকরা। এ নিয়ে একাধিকবার তাদের আশ্বস্তও করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে গত ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবসে শতাংশ হারে বাড়িভাড়া না বাড়িয়ে ৫০০ টাকা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষকরা। তারা রোববার (১২ অক্টোবর) থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী—রোববার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের ডেকে আশ্বস্ত করা হয়। তবে তাতে সন্তুষ্ট না শিক্ষকরা। তার এ বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
তবে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক ছেড়ে তারা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নেন। শিক্ষকদের একটি পক্ষ শহীদ মিনারে গেলেও অন্য পক্ষটি প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান চালিয়ে যেতে অনড় থাকেন। এর প্রেক্ষিতে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে শিক্ষকদের ওপর জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরে তাদের লাঠিচার্জ করা হয়।
এতে তিনজন শিক্ষক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপসাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া আরও ছয়জন শিক্ষককে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। যদিও রাতে তাদেরকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।