প্রেস সচিবের বক্তব্য শুনে ‘অসুস্থ’ বোধ করার কথা বললেন নূর খান

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২৪ এএম
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মনে করেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে চিত্র গণমাধ্যমে দেখা যায়, বাস্তবতা তার চেয়ে অনেক ভালো। ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বুধবার বিকেলে মানবাধিকার সংগঠন সপ্রাণ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রতিবেদনের একটা বড় সমস্যা হলো পত্রিকাগুলোর রিপোর্টের ওপর নির্ভর করা। যে পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়, সেই রিপোর্ট কতটা বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের ঘটনাগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করার কথাও বলেন প্রেস সচিব।
বৈঠকে শফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জ থাকার পরও অন্তর্বর্তী সরকার ভালো কাজ করছে। বক্তব্যের শেষে জরুরি কাজ থাকায় বৈঠক ত্যাগ করেন তিনি।
তবে প্রেস সচিবের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেন একাধিক বক্তা। গুমসংক্রান্ত কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান বলেন, ‘সরকারের বয়ান শুনে অসুস্থ বোধ করছি।’ তিনি বলেন, যে অভিযোগটা তিনি দিয়ে গেলেন যে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সব পরিসংখ্যান নেয় পত্রিকা থেকে। সরকারের প্রশাসন যে রিপোর্ট করে সেটি সত্য, আর মানবাধিকারকর্মী এবং সাংবাদিকেরা যে রিপোর্ট করেন, সেটার সত্যতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন প্রতিনিধির কাছ থেকে এ ধরনের বয়ান শুনতে হলো।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী এক বছরে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বুধবার বিকেলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী এক বছরে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বিএনপি নেতা সাইমুম পারভেজ বলেন, প্রেস সচিব সংবাদপত্রের তথ্য থেকে মানবাধিকার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তবে শেখ হাসিনার সময়কার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকেই জানা গেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করতে হলে নতুন করে প্রতিষ্ঠান গড়া এবং নতুন রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তুলতে হবে কি না—এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।
সাইমুম পারভেজ বলেন, ‘উনি (প্রেস সচিব) যে বলেছেন রিয়েলিটি ইজ বেটার, সেটা মনে হয় ঠিক না। রিয়েলিটি ইজ নট বেটার।’
প্রেস সচিব ‘প্রবঞ্চনামূলক’ কথাবার্তা বলেছেন বলে অভিযোগ করেন মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন। তিনি বলেন, কথায় কথায় ইউএন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি নিয়ে আসতে বলা, তাদের দিয়ে গবেষণা করাতে বলা, অনুসন্ধান করিয়ে দেখানো যে দেশের প্রতিবেদনগুলো মিথ্যা—সরকারের এমন কথা বলা বন্ধ করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন বলেন, ‘শফিক ভাই যে লেন্সে দেখলেন আসলে পৃথিবীকে, বাংলাদেশকে, আবু সাঈদকে কিন্তু এই লেন্সে পুলিশ দেখেছিল এবং তাদের সেই লেন্সে তখন আবু সাঈদকে আন্দোলনকারীরাই হত্যা করেছিল। সরকারে বসার পর সবাই যদি পুলিশের যে ভাষ্য, সেটাকেই একমাত্র সত্য বলে ধরে নিতে চায়, তাহলে আমাদের বোধ হয় চিন্তার খুব বড় একটা কারণ আছে।’