Logo
Logo
×

জাতীয়

২ মাসে জামায়াতের সঙ্গে ৩০ মিশন-সংস্থার কর্মকর্তাদের বৈঠক

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১০ এএম

২ মাসে জামায়াতের সঙ্গে ৩০ মিশন-সংস্থার কর্মকর্তাদের বৈঠক

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। গত দুই মাসে এমন অন্তত ৩০টি বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী সংসদ নির্বাচন, মানবাধিকার ইস্যু এবং নির্বাচনের পরে জামায়াতের ভূমিকা কী হবে, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

অভ্যুত্থানের পর অন্যতম বড় রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠা জামায়াতের নেতারা দাবি করছেন, এসব বৈঠকের মধ্য দিয়ে দলটি সম্পর্কে বিদেশিদের নেতিবাচক ধারণা ভেঙে যাচ্ছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনের পর সরকার বা বিরোধী দল —যে অবস্থানেই জামায়াত থাকুক না কেন, দেশকে তারা কোন দিকে নিতে চায়, তা বোঝার চেষ্টা করছেন বিদেশিরা।

বৈঠকের বিষয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘বিদেশি কূটনীতিকেরা মনে করেন, ভবিষ্যতে জামায়াতকে রাষ্ট্র পরিচালনারও দায়িত্ব দিতে পারে এ দেশের জনগণ। কাজেই জামায়াত কী চায়, কীভাবে চায় এবং ভবিষ্যতে কী হবে —এগুলো তারা বোঝার চেষ্টা করছেন।’

সর্বশেষ বুধবার জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের বসুন্ধরার কার্যালয়ে ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। একই দিনে জামায়াতের আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আবদেল ওহাব সাইদানি।

জামায়াত জানিয়েছে, বৈঠকে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, আগামী সংসদ নির্বাচন, গণতন্ত্রের বিকাশ ও টেকসইকরণ, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।

জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, গত দুই মাসে অন্তত ৩০টি বিদেশি মিশন-সংস্থার কূটনীতিক ও কর্মকর্তারা জামায়াতের আমিরসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এসব বৈঠকের ছবি ও আলোচনার বিষয়বস্তু সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াও দলটির ফেসবুক পেজে তুলে ধরা হয়েছে।

জামায়াতের প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ বাড়ার কারণ কী জানতে চাইলে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘বিদেশি কূটনীতিকদের আগ্রহের প্রধান কারণ, এই দলের প্রতি জনগণের আগ্রহ। তারা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, জামায়াতের জনসমর্থন অনেক। আলোচনায় তাদের যেমন স্বার্থ আছে, আমাদেরও আছে। আমাদের স্বার্থ হলো, আমরা চাই এই দেশগুলোর সঙ্গে যেন একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে এবং তারা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করেন।’

শুধু জামায়াত নয়, বিদেশি কূটনীতিকেরা দেশের আরেক বড় দল বিএনপি এবং তরুণদের নতুন দল এনসিপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনীতির মাঠে লক্ষণীয়ভাবে সক্রিয় জামায়াত নেতাদের সঙ্গে তাদের বৈঠকগুলো রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

কূটনীতিকদের সঙ্গে যেকোনো রাজনৈতিক দলের বৈঠককে খুব সাধারণ ঘটনা হিসেবেই দেখছেন বিএনপির নেতারা। তবে এসব বৈঠকের মধ্য দিয়ে আগ্রহ-অনাগ্রহের মানদণ্ড মানতে নারাজ তারা। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘যখন নির্বাচন হবে, তখন বোঝা যাবে যে আগ্রহের জায়গা বেড়েছে নাকি বাড়ে নাই।’ একই প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘এটাকে অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকেরা আলোচনা করছেন। আমাদের সঙ্গেও কূটনীতিকেরা বসছেন।’

জামায়াতের আমির এবং দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে গত ৪ সেপ্টেম্বর ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ৯ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, ১০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক ও অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার সুসান রাইল, ১১ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জি. খোজিন, ১৬ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ও চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, ১৭ সেপ্টেম্বর চায়নিজ পিপলস ফরেন অ্যাফেয়ার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ঝো পিংজিয়ানের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল, ২৮ সেপ্টেম্বর ইইউ ইলেকশন অবজারভেশন মিশনের প্রতিনিধিদল ও স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিস্তিয়াগা ওচোয়া ডি চিনচেত্রু সাক্ষাৎ করেন।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস একিঞ্চি, যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যদূত ব্যারোনস রোজি উইন্টারটন এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস জামায়াত আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

এর বাইরে গত মাসে সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার ডেরেক লোহ ইউ-সে, ভুটানের রাষ্ট্রদূত দাশো কারমা হামু দর্জি, আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মার্সেলো কার্লোস সেসাসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

বিদেশিরা জামায়াত নেতাদের কাছে কী জানতে চাইলে দলটির নেতারা জানান, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের রাজনৈতিক চালচিত্রের সম্ভাব্য পরিবর্তন এবং ইসলামপন্থী রাজনীতির ভবিষ্যৎ চিত্র জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এসব বৈঠকের মধ্য দিয়ে সে বিষয়ে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করছে দেশগুলো।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের বিজয় জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে কি না, তা-ও বোঝার চেষ্টা করছেন দেশগুলোর কূটনীতিকেরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণাও এ থেকে খুব আলাদা কিছু নয়। তারা বলছেন, জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে দলটির অবস্থান এবং ভোটের পরে তাদের ভূমিকা কী হবে, কূটনীতিকেরা সে বিষয়ে ধারণা নিচ্ছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মো. আব্দুল আলীম বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের পরে জামায়াতকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে, নির্বাচনের পরে জামায়াতের অবস্থানটা কেমন হবে—সেটি বিরোধী দল কিংবা সরকারি দল, যেদিকেই হোক।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার