Logo
Logo
×

জাতীয়

বদলিতে ‘একক ক্ষমতা’ নিলো মন্ত্রণালয়, শিক্ষা ক্যাডারে ক্ষোভ

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২২ এএম

বদলিতে ‘একক ক্ষমতা’ নিলো মন্ত্রণালয়, শিক্ষা ক্যাডারে ক্ষোভ
সরকারি কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নে একক ক্ষমতা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতদিন প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে বদলি করতে পারতেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) মহাপরিচালক। সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে বদলি করতো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু অনলাইন বদলির নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এখন সব ধরনের বদলি ও পদায়ন করবে মন্ত্রণালয়।

বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট নন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নেতারা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের কাজ বদলি করা না। সব জায়গায় যখন বিকেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে, সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করছে। এতে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারদের ক্ষোভ বাড়ছে।

চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত ভালো কিছু বয়ে আনে না উল্লেখ করে তারা জানান, মন্ত্রণালয় নীতি-নির্ধারণ করবে। কিন্তু তাদের যদি বদলি নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়, সেটা অপ্রত্যাশিত। এছাড়া এমন সিদ্ধান্তে সচিবালয়ে ভিড় ও তদবির বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি সূত্র জানায়, সম্প্রতি শিক্ষা ক্যাডারদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে দুই দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রাথমিকভাবে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে বদলির নিয়ন্ত্রণ চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

দ্বিতীয় দফা বৈঠকে সহকারী অধ্যাপক পর্যন্ত বদলির নিয়ন্ত্রণ মাউশির কাছে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই নীতিমালা পরিবর্তন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বদলি-পদায়নের সব ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কাছে একেবারে অপ্রত্যাশিত।

কী আছে বদলি-পদায়নে ‘ক্ষমতা’ নিয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতেশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সরকারি কলেজের শিক্ষক বদলি/ পদায়ন নীতিমালা, ২০২৫’ গত ৩০ জুন থেকে কার্যকর হয়েছে। এর আওতায় প্রভাষক থেকে অধ্যাপক এবং অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদ পর্যন্ত বদলি ও পদায়নের আবেদন এখন থেকে সম্পূর্ণ অনলাইনে করতে হবে। আবেদনকারীদের নিজের পিডিএস (হালনাগাদ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট) নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন জমা দিতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত সব পদের বদলি ও পদায়নের ক্ষমতা থাকবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে। অধ্যক্ষ বা প্রতিষ্ঠানপ্রধানের মাধ্যমে প্রতিটি আবেদন অনলাইনে অগ্রায়ন (পরবর্তী ধাপে পাঠানো) করতে হবে। কোনো আবেদন পেন্ডিং রাখা যাবে না।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অনলাইন ব্যতীত অন্য কোনো উপায়ে পাঠানো আবেদন বিবেচনা করা হবে না। প্রতিটি আবেদন প্রতি ১৫ দিন অন্তর মূল্যায়ন করে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। একজন শিক্ষক একবার আবেদন করলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে পুনরায় আবেদন করতে পারবেন না।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, বদলির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক তদবির, আধাসরকারি পত্র (ডিও লেটার) বা অন্য কোনোভাবে চাপ প্রয়োগকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে। অসম্পূর্ণ বা হালনাগাদহীন পিডিএস গ্রহণ করা হবে না। বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

অনলাইনে বদলিতেও অনিয়মের সুযোগ আছে!অনলাইনে বদলি-পদায়নের মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনার কথা বলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এক্ষেত্রেও অনিয়মের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। মাউশির এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, অনলাইনেও অনেক ধরনের অনিয়ম-জালিয়াতির সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ডিজিটালি কর্তৃত্ব রাখার নানান মাধ্যমের বিষয়েও আমরা জানি। বদলি-পদায়নের ক্ষমতা দেখানোর বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ শাখা-১-এর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও সব বদলি নিজেদের হাতে রাখার পক্ষে নন। শিক্ষা উপদেষ্টা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আগ্রহে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার ও শিক্ষা সচিব রেহেনা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার