আলোচিত বেগমপাড়ায় কার কয়টি বাড়ি-ফ্ল্যাট

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২৪ পিএম

কানাডার বেগমপাড়া নিয়ে প্রথম বড় আলোচনা শুরু হয় ২০২০ সালে। তখন অনেক প্রভাবশালী বাংলাদেশি, বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরা দুর্নীতির অর্থ পাচার করে স্ত্রী-সন্তানদের কানাডায় পাঠিয়েছেন বলে তথ্য সামনে আসে। সেখানে তারা কিনেছেন ফ্ল্যাট-বাড়ি, গড়েছেন বিলাসবহুল জীবন।
তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে জানান, রাজনৈতিক ব্যক্তির চেয়ে বেশি সম্পদ পাচার করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা। এ ছাড়া কিছু ব্যবসায়ীও আছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তখন সরকারের কাছে ২৮ জনের তালিকা চায়। ওই বছরের ২৩ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দেশের বাইরে অর্থ পাচারে জড়িতদের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্য তদন্ত সংস্থা কাজ করছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য চান হাইকোর্ট। দুদক জানায়, শতাধিক ব্যক্তি প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন। তবে পরে এ নিয়ে তদন্ত কার্যত বন্ধ হয়ে যায় তৎকালীন সরকারের চাপেই।
তালিকায় থাকা ২৮ জনের মধ্যে বেশির ভাগই সাবেক আমলা। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। কানাডার মন্ট্রিল ও টরন্টোয় তার চারটি বাড়ি রয়েছে।
বিসিএস ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা আবু আলম শহীদ খান, তিনি স্থানীয় সরকার সচিব হিসেবে অবসরে যান (বর্তমানে কারান্তরিন)। টরন্টোয় তার বাড়ি রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, টরন্টোয় তার তিনটি ফ্ল্যাট আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, যিনি এনবিআরের চেয়ারম্যানও ছিলেন (বর্তমানে কারাবন্দি)। মিসিসাগায় তারও বিলাসবহুল দুটি বাড়ি রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ, কানাডায় রয়েছে তার তিনটি বাড়ি। সাবেক বিমান সচিব মহিবুল হক, কানাডায় রয়েছে তার তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট। সাবেক সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরের মন্ট্রিলে রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের টরন্টোয় রয়েছে তার পাঁচটি বাড়ি এবং ফ্ল্যাট।
সাবেক সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মন্ট্রিলে রয়েছে তিনটি বাড়ি। সাবেক সচিব জাহাংগীর আলমের কানাডায় দুটি বাড়ি। সাবেক সচিব এম. নিয়াজ উদ্দিনের দুটি বাড়ি এবং একটি খামারবাড়ি।
সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার হালদার তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক। নাফিস সরাফতের রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট এবং বিনিয়োগ (শেয়ার)। শহীদ ইসলাম পাপলুর রয়েছে তিনটি বাড়ি ও বিনিয়োগ। সাবেক এমপি তানভীর ইমামের রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের তিনটি বাড়ি রয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খানের রয়েছে একটি ফ্ল্যাট। নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের রয়েছে চারটি বাড়ি এবং বিনিয়োগ। শামীম ওসমানের রয়েছে একটি বাড়ি। পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদে মেয়ের নামে দুটি বাড়ি রয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি বিচারপতি এস কে সিনহার মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের তিনটি বাড়ি ও বিনিয়োগ রয়েছে।
এ তালিকায় কয়েকজন ব্যবসায়ীও রয়েছেন। তাদের পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য কানাডায় থাকেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি ও তার পরিবারের নামে আছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, এসব ব্যক্তি কানাডায় রাজকীয় জীবনযাপন করছেন, যদিও তাদের বৈধ আয়ের উৎস নেই। ফলে স্থানীয় কমিউনিটিতে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও উদ্বেগ। সোমবার (৬ অক্টোবর) দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।