Logo
Logo
×

জাতীয়

এলাকাকে ব্যাটারিচালিত রিকশা মুক্ত করলো নিকুঞ্জবাসী

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০৭ পিএম

এলাকাকে ব্যাটারিচালিত রিকশা মুক্ত করলো নিকুঞ্জবাসী

রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকার চিত্র এখন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের জন্য অনুপ্রেরণার মতো। যেখানে আগে ব্যাটারিচালিত রিকশাকেন্দ্রীক সড়ক দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ছিল, সেখানে গত পাঁচ মাস ধরে নিকুঞ্জে একটিও দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, মারাত্মক দুর্ঘটনার কোনো দৃষ্টান্তও নেই। পথচারীরা বলছেন, একসময়কার উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হুমকি আর মৃত্যুর ভয়ে জবুথবু থাকা রাস্তায় এখন তারা নির্বিঘ্নে চলাচল করছেন। শিশু-কিশোররাও আনন্দের সঙ্গে সাইকেল চালাচ্ছে, দৌড়াচ্ছে।

গুলশান, বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় প্রশাসনের নানা স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও অবৈধ অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করা যখন অসম্ভব, তখন নিকুঞ্জবাসী তাদের ইস্পাত-কঠিন ঐক্য আর সীমাহীন সাহসের জোরে সড়কের এই ‘অভিশাপ’ থেকে মুক্ত হয়েছেন। চলতি বছর ৩০ এপ্রিল থেকে নিকুঞ্জ টানপাড়ার সর্বস্তরের জনগণের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ও সক্রিয় ভূমিকায় এ পরিবর্তন আসে। গত ছয় মাসে এই এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ঢুকতে পারেনি।

অনিরাপদ, অবৈধ ও নানা ভেজাল সৃষ্টিকারী ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো যখন অব্যাহতভাবে একের পর এক দুর্ঘটনার জন্ম দিচ্ছিল, তখন ত্যক্ত-বিরক্ত-অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন নিকুঞ্জবাসী। তাদের ক্ষোভ আর জেদ জন্ম দেয় ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে এক গণ-আন্দোলনের। এসব ত্রি-চক্র যানগুলো বিরুদ্ধে তারা মিছিল, মিটিং, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন।

নিকুঞ্জ টানপাড়া, জামতলা, সরকার বাড়ি ও পুরাতন বাজার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ব্যাটারিচালিত রিকশামুক্ত, শান্ত ও শৃঙ্খল পরিবেশ।

এলাকার কয়েকজন স্থানীয়ের সঙ্গে কথাও হয় এ ব্যাপারে। ফয়সাল ইমরান নামে এক বাসিন্দা তার স্বস্তির কথা জানান । তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের মাধ্যমে আমাদের পুরো এলাকা অভিশাপ মুক্ত হয়েছে। আমার ছোট ভাইকে এই রিকশার কারণে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গু হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়েছিল। এখন এই অবৈধ যান বন্ধ হয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত জারি থাকবে।

কোনোভাবেই আর নিকুঞ্জের রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে দেওয়া হবে না। নিকুঞ্জে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী খিলক্ষেত টানপাড়া কল্যাণ সোসাইটির আহ্বায়ক সিনিয়র সাংবাদিক জাহিদ ইকবাল। আন্দোলন ও শেষ পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এই সফলতা সহজ ছিল না। নিকুঞ্জে এই ‘মরণযান’ বন্ধ করতে গিয়ে আমাদের সীমাহীন যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। অনেক অনিশ্চিত সময় অতিবাহিত করতে হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক সাইনবোর্ডে অনেকেই হুমকি-ধমকি দিয়েছে; এমনকি সেনাবাহিনী ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে ব্যাটারি রিকশা চালু রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এলাকাবাসীর সুদৃঢ় মনোবল আর ঐক্যের কারণে তারা সফল হতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, একতা আর ঐক্য থাকলে অসম্ভবকে যে সম্ভব করা যায়, সেটি পুরো দেশবাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে নিকুঞ্জবাসী। এটি কেবল একটি স্থানীয় সাফল্য নয়, এটি একটি জনজাগরণের প্রমাণ।

খিলক্ষেত থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. শাহিনুর আলম মারফত বলেন, প্রায় ছয় মাস আগেও নিকুঞ্জ এলাকায় অটোরিকশার কারণে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটত। শিক্ষার্থী ও পথচারীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারতেন না। অটোরিকশা চালকরা নিয়ম-কানুন তোয়াক্কা না করে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাতেন। তাই এলাকার সচেতন নাগরিক, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, খিলক্ষেত টানপাড়া কল্যাণ সোসাইটির কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন— নিকুঞ্জ এলাকায় অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেই সিদ্ধান্ত সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কিছু রাজনৈতিক নেতা নিজেদের স্বার্থে অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে সুবিধা নিতে পুনরায় তা চালু করার চেষ্টা করেছিলেন। তখন আমরা থানায় একটি অবহিতকরণ আবেদন দিলে প্রশাসন আমাদের পাশে দাঁড়ায়। এখন এলাকাবাসী তার সুফল পাচ্ছেন, সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে চলাচল করতে পারছেন। আমি চাই, শুধু নিকুঞ্জ নয়, সারাদেশেই অটোরিকশা নিষিদ্ধ হোক। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে এবং দুর্ঘটনাও কমে যাবে।

নিকুঞ্জ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, নিকুঞ্জ এলাকায় প্রতিদিনই অটোরিকশার কারণে দুর্ঘটনা ঘটত। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা ও সোসাইটির সদস্যদের সম্মিলিত উদ্যোগে তা বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। এসব অটোরিকশার কারণে বহু বৃদ্ধ, পথচারী ও শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এখন সবাই নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছেন। আমাদের কলেজ থেকেও খিলক্ষেত মডেল থানায় একটি আবেদন দেওয়া হয়েছে, যাতে পুনরায় অটোরিকশা চালু না হয়।

প্যাডেল রিকশাচালক সেলিম বলেন, ব্যাটারি রিকশার কারণে আমাদের প্রায় না খেয়ে মরার অবস্থা হয়েছিল। তারা যাত্রী ছিনিয়ে নিত, আমরা কেউ যাত্রী পেতাম না। অদক্ষ ও কমবয়সী চালকরা উচ্ছৃঙ্খলভাবে অটোরিকশা চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাতেন, আর দোষ পড়ত রিকশাচালকদের ঘাড়ে। এখন অটোরিকশা বন্ধ হওয়ায় মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারছে, আর আমাদের রোজগারও বেড়েছে।

খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, অটোরিকশা বন্ধে নিকুঞ্জ এলাকাবাসীর এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। যদিও কিছু ব্যক্তি পুনরায় অটোরিকশা চালুর দাবি তুলেছেন, তবুও এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে থানায় একাধিক অবহিতকরণ আবেদন জমা দিয়েছেন। তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা তাদের পাশে রয়েছি। এখন এই এলাকায় দুর্ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে। এলাকাবাসীরাই এই এলাকার প্রকৃত মালিক ও অধিবাসী। তারা যতদিন এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে চান, ততদিন তা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার