অবরোধে উত্তপ্ত খাগড়াছড়ি, ১৪৪ ধারা জারি

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৫৭ এএম

খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকে শনিবার সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দুপুরে অবরোধকারীদের সঙ্গে স্থানীয় বাঙালিদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়। এ সময় অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুপুর ২টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য খাগড়াছড়ি পৌরশহর, জেলা সদর ও একটি উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। জেলা সদরে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।
এদিকে সকাল থেকে অবরোধের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙামাটির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া জেলা সদরের সঙ্গে দীঘিনালা, পানছড়ি, রামগড়, মহালছড়ি, গুইমারাসহ ৯ উপজেলার সড়ক যোগাযোগও অচল হয়ে পড়ে। অবরোধের সমর্থনে ভোরে খাগড়াছড়ি সদরের চেঙ্গী স্কয়ার, জিরোমাইল, স্বনির্ভরসহ বেশকিছু জায়গায় পিকেটিং করতে দেখা যায়। অবরোধকারীরা সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে টায়ারে আগুন দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে সড়ক থেকে তা অপসারণ করে। তবে পৌর শহরে হালকা যান ইজি বাইক, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করেছে।
পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল জানান, অবরোধে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দুপুরের পর উপজেলা ইউএনও সংলগ্ন এলাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি হয়। পরে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে উত্তেজিত দুই পক্ষকে আমরা সরিয়ে দিই। নতুন করে যাতে সহিংসতা না ঘটে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
জানা যায়, দুপুরে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মাঝে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আদেশ দেন জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার। তবে ১৪৪ ধারা জারির পরও বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মহাজনপাড়ায় পাহাড়ি-বাঙালি দফায় দফায় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়েছে। পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একই কারণে গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আইরিন আকতার।
খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন মো. ছাবের বলেন, ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনায় ২৩ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২১ জন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন। দুইজন খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিজিবি খাগড়াছড়ি ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মো. হাসনুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
আটকা পড়েছেন তিন হাজার পর্যটক : এদিকে অবরোধের কারণে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন সাজেকগামী পর্যটকরা। সাজেকের সঙ্গে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় আটকা পড়েছেন প্রায় তিন হাজার পর্যটক। যারা শুক্রবার বেড়াতে গিয়েছিলেন, তারা শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি ফিরতে পারেননি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা দীঘিনালায় অবস্থান করছিলেন।
এছাড়া সাজেকগামী অন্তত এক হাজার পর্যটক খাগড়াছড়িতে আটকা পড়েছেন। সাজেক যেতে না পেরে তারা খাগড়াছড়িতে অবস্থান করছেন। বেড়াতে আসা পর্যটক আশুতোষ, সাইদুল ও রাকিব একই রকম তথ্য দিয়ে বলেন, অবরোধের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এখানে এসে আটকা পড়েছি। সাজেকে যাওয়ার পর্যটকবাহী গাড়ি ছাড়ছে না। অনেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
মঙ্গলবার খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালায় এক স্কুলছাত্রী বাড়ি ফেরার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় শয়নশীল নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে ৬ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।