Logo
Logo
×

জাতীয়

আকাশজুড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার উঁকি, এক অভূতপূর্ব শরতের সকাল

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম

আকাশজুড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার উঁকি, এক অভূতপূর্ব শরতের সকাল

শরতের শান্ত ভোরে ঠাকুরগাঁওয়ের আকাশে যেন হঠাৎ খুলে গেল এক মহাজাগতিক ক্যানভাস। উত্তর দিগন্তের ধূসর মেঘের পর্দা ভেদ করে মহিমান্বিত কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফে মোড়ানো চূড়া যখন উঁকি দিল, সেই দৃশ্য দেখে মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ল আপামর জেলাবাসীর চোখে।  

এই অলৌকিক দৃশ্য বছরের খুব সীমিত কিছু দিনে বিশেষত শরতের আকাশ যখন মেঘমুক্ত ও ঝকঝকে থাকে, কেবল তখনই বাংলাদেশের মাটি থেকে দেখা সম্ভব। দীর্ঘ মেঘাচ্ছন্ন দিনের বিরতি টেনে শুক্রবার ভোরের পরিষ্কার আকাশ যেন সেই দুর্লভ সুযোগ এনে দিয়েছিল। 

সদর উপজেলার বুড়িরবাঁধ, চিলারং ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বালিয়াডাঙ্গীর লাহিড়ী ফাঁসিদহ পর্যন্ত নানা এলাকা থেকে মানুষ দল বেঁধে ছুটে আসে এই হিমালয়-কন্যাকে এক ঝলক দেখতে।

সকাল হতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভরে ওঠে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবিতে আর ভিডিওতে। পরিবার নিয়ে রাস্তার ধারে, বন্ধুদের সঙ্গে ক্যামেরা হাতে—প্রত্যেকের চোখে একই বিস্ময়! দূর বরফে মোড়ানো হিমালয়কে এত কাছে, এত স্পষ্ট দেখার আনন্দ যেন এক উৎসবের রূপ নেয়।

বুড়িরবাঁধে দেখা মেলে স্কুলশিক্ষক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তার চোখে তখনো আনন্দের উজ্জ্বলতা। তিনি বলেন, বইয়ে পড়েছি, ছবিতে দেখেছি; কিন্তু চোখের সামনে এত স্পষ্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা—এ যেন এক অলৌকিক দৃশ্য। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য যেন আমাদের সব ক্লান্তি দূর করে দিল। ছাত্রদের এই মহিমা দেখাতে পেরে তিনি নিজেকেও সৌভাগ্যবান মনে করেন।

একই এলাকার তরুণী মৌসুমী আক্তার বলেন, মনে হচ্ছে সিনেমার দৃশ্য। হাত বাড়ালেই যেন স্পর্শ করা যাবে। ছবি তুলি, কিন্তু আসল রঙ আর বিস্ময় ধরে রাখা যায় না। প্রতিটি মুহূর্ত মনে থাকবে চিরকাল।

বালিয়াডাঙ্গীর ফাঁসিদহ এলাকার কলেজছাত্র রিয়াজুল ইসলাম তখন ফেসবুক লাইভে উত্তেজনায় কাঁপছেন, অনেকে বিশ্বাসই করেন না, বাংলাদেশ থেকে হিমালয় দেখা যায়। আজ প্রমাণ হলো। চোখে দেখার আনন্দ ছবি বা ভিডিওতে পাওয়া যায় না। বরফে মোড়ানো চূড়া, আকাশের নীলিমা, লালচে আভা—সব মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব অনুভূতি।

স্থানীয় ফটোগ্রাফার আব্দুস শাহীন বলেন, সকাল আটটা থেকে ৯টা পর্যন্ত ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের সেরা সময়। দূরে বরফ ঢাকা শিখরগুলো যেন আকাশের ক্যানভাসে আঁকা এক জীবন্ত শিল্পকর্ম। প্রতিটি শিখরের রেখা, আলো, ছায়া—মানুষের চোখকে মুগ্ধ করে।

ঠাকুরগাঁওয়ের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে মন্তব্য করেন, আজ সকালে মুহূর্তে ঠাকুরগাঁও যেন নতুন রূপে ভাসছে। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে মানুষ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। ফোনে ছবি তোলা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার—সবকিছুই যেন ছোট্ট চেষ্টা প্রকৃতির এই মহিমা ধরে রাখার।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম আবহাওয়াগত কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, কয়েক দিন ধরে আবহাওয়া ছিল মেঘলা। আজ সকাল থেকে আকাশ পরিষ্কার হওয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। শরতের এ সময়টাতেই এমন সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এটি প্রকৃতির এক অনন্য উপহার।

জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা এই বিরল দৃশ্যের জন্য জেলাবাসীকে সৌভাগ্যবান মনে করেন। তিনি বলেন, পরিবেশ সচেতনতা ও আবহাওয়া ঠিক থাকলে এমন দৃশ্য বারবার দেখা যায়। মানুষের চোখে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য অনন্য এক উপহার।

অসাধারণ পরিচ্ছন্ন আকাশ আর শরতের স্নিগ্ধ আলোয় ঠাকুরগাঁওবাসীর স্মৃতিতে এক দুর্লভ আনন্দের মুহূর্ত তৈরি করে কাঞ্চনজঙ্ঘার এই উঁকি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার