Logo
Logo
×

জাতীয়

নিজেরাই প্রশিক্ষণ দিয়ে বিনা খরচে কর্মী নেবে জাপান

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

নিজেরাই প্রশিক্ষণ দিয়ে বিনা খরচে কর্মী নেবে জাপান
• ৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ কর্মী নেবে জাপান• দুই দেশের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক সই• নরসিংদীর টিটিসিতে প্রশিক্ষণ দেবেন জাপানের প্রশিক্ষকরা • প্রশিক্ষণের পর স্কিল ওয়ার্কার টেস্ট নেওয়া হবে• কৃতকার্যরাই বিনা খরচে জাপানে যেতে পারবেন

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান। দেশটিতে যেতে উন্মুখ বাংলাদেশি কর্মীরা। উদীয়মান সূর্যের এই দেশটিতে বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কর্মসংস্থানের পথ আরও প্রশস্ত হচ্ছে।

সম্প্রতি জাপানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরে দেশটি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এসব অভিবাসনপ্রত্যাশী শ্রমিকদের জাপানি ভাষা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

গত ১ জুন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বলেন, জাপানে কর্মী পাঠানো এবং দেশটির ম্যানপাওয়ার মার্কেট নিয়ে কাজ করার অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জাপান পাঁচ বছরে এক লাখ লোক নিতে চায়। এ বিষয়ে কাজ করা হবে। এছাড়া জাপানে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে ভিসা জটিলতা তৈরি হতো তা সমাধানেও আলোচনা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে গত ২৯ মে জাপানের টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসে জাপানে কর্মশক্তি পাঠাতে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিএমইটির সঙ্গে কেডিএস, এনবিসিসি ও জেবিবিআরএর দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ফাইল ছবি: পিআইডি

গত ২৯ মে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরের সময় তিনটি জাপানি কোম্পানির সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। এই সমঝোতা স্মারকটি হচ্ছে জাপানের সঙ্গে দক্ষতা ও ভাষা উন্নয়নে মানবসম্পদ বিষয়ক স্মারক।

এই সমঝোতা স্মারকের প্রথমটি বিএমইটি ও কাইকম ড্রিম স্ট্রিট (কেডিএস) এবং দ্বিতীয়টি বিএমইটি, জাপানের ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কোঅপারেটিভস (জাপানে ৬৫টির বেশি কোম্পানির একটি ফেডারেশন এনবিসিসি) ও জাপান বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সির (জেবিবিআরএ) মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৯ মে জাপানের টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসে ‘বাংলাদেশ সেমিনার অন হিউম্যান রিসোর্সেস’-এ বক্তব্য দেন। ফাইল ছবি: পিআইডি

জাপানের প্রশিক্ষকরাই দেবেন প্রশিক্ষণ
সমঝোতা স্মারকের ফলে জাপানের প্রশিক্ষকরা নরসিংদীর মনোহরদীতে অবস্থিত টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে (টিটিসি) ভাষা ও দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন। প্রশিক্ষণের পর কর্মীদের স্পেসিফায়েড স্কিল ওয়ার্কার টেস্ট (এসএসডব্লিউ) নেওয়া হবে। যারা কৃতকার্য হবেন তারা বিনা খরচে জাপানে যেতে পারবেন।
এ বিষয়ে বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আশরাফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সমঝোতা স্মারকের আওতায় তারা (জাপান) প্রশিক্ষণ দেবে, তারাই পরীক্ষা নেবে। তারা এসে ট্রেনিং দেবে, এটা খুবই ভালো দিক।

আশরাফ হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন সেহেতু আমরা এক লাখ কর্মী তৈরি করবো। তবে এক লাখ দক্ষ কর্মী জাপানে পাঠানো আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা বিশ্বাস করি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবো। এরই মধ্যে আমরা আমাদের কাজ শুরু করেছি।’

কোন কোন সেক্টরে কর্মী যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘আমি এখনো সমঝোতা স্মারক হাতে পাইনি। এই যে এক লাখ লোক নেবে, স্কিল কী কী হবে? সেই অনুযায়ী কর্মীদের দক্ষ করার ক্ষমতা আমাদের আছে কি না, সেটা এখন জরুরি। এমওইউর কপি হাতে পেলে বিস্তারিত জানাতে পারবো।’

বিএমইটির প্রশিক্ষণ পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সালাহউদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম অবস্থায় তারা নরসিংদীর ট্রেনিং সেন্টার নির্বাচন করেছে। পরে দেশের অন্যান্য ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ দিতে পারে।

জাপানে অভিবাসন ও রেমিট্যান্স ধারা
বিএমইটির তথ্য মতে, জাপানে অনুমোদিত ৯৬টি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে মাত্র ৩০টি রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতি বছর কর্মী পাঠাচ্ছে। ২০০৪ থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২০ বছরে মাত্র পাঁচ হাজার ১৪ জন কর্মী জাপান যেতে পেরেছেন।
বিএমইটির তথ্য বলছে, আইএম জাপান নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০২ কর্মী জাপানে গেছেন।

তবে কর্মী কম গেলেও দেশটি থেকে উল্লেখযোগ্য রেমিট্যান্স আসছে বলে জানিয়েছে বিএমইটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছর জাপান থেকে ৬৪.৯৯ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ১১২.৯৯ মিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছে ৬৯.২৯ মিলিয়ন ডলার।

জাপান যেতে কর্মীদের দুর্বলতা ভাষা ও দক্ষতা
জাপানে যাওয়ার জন্য যে যোগ্যতা প্রয়োজন বেশিরভাগ কর্মী তা অর্জন করতে পারেন না। এজন্য খুব কম সংখ্যক কর্মী জাপান যেতে পেরেছেন বলে মনে করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

তাদের ভাষ্যমতে, জাপানে যেতে হলে কর্মীদের একদিকে যেমন জাপানি ভাষা শিখতে হয়, অন্যদিকে যে কোনো একটি বিষয়ে দক্ষ হতে হয়। জাপানের নিয়মনীতি খুবই কঠোর। অন্য দেশের সঙ্গে জাপানকে মেলানো যায় না। তাদের মানের সঙ্গে না মিললে তারা লোক নেয় না। তারা কখনো অদক্ষ লোক নেয় না। দক্ষ শ্রমিক ছাড়া জাপানে যাওয়া অসম্ভব।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. শহিদুল আলম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ভাষা ও নির্দিষ্ট কোনো কাজে দক্ষতা অর্জন করতে না পারায় বেশিরভাগ কর্মী জাপান যেতে পারেন না। তাই জাপানে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা বাড়াতেই জাপানি প্রশিক্ষক দিয়ে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার চিন্তা করেছে বাংলাদেশ সরকার।

যা বলছেন অভিবাসন বিশ্লেষকরা
সম্প্রতি নেওয়া এ উদ্যোগে জাপানে যে ধরনের কর্মী প্রয়োজন সে ধরনের কর্মী তৈরি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।

অভিবাসন সংশ্লিষ্টদের মতে, জাপানি প্রশিক্ষকরা সহজেই তাদের সরঞ্জামাদির সঙ্গে কর্মীদের পরিচিত করতে পারবেন এবং সেগুলো ব্যবহারে কর্মীদের দক্ষ করে তুলতে পারবেন।

তবে ভাষার ক্ষেত্রে ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ভাষা শেখে, কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার সময় শুনি অনেকে ঝরে পড়ে। এজন্য ভাষা শেখার কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের টিটিসিগুলোর ওই সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এখন যেহেতু তারা ভাষা শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে, তাই এ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হতে হবে। কোটা পূরণ করতে হবে।’

জানা গেছে, গত ২৯ মে জাপানের টোকিওতে ‘বাংলাদেশ সেমিনার অন হিউম্যান রিসোর্সেস’ শীর্ষক এক সেমিনারে পাঁচ বছরে এক লাখ কর্মী পাঠানো হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘জাপানে বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে অন্তর্বতীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে। এটা আমার জন্য সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ও প্রেরণার দিন। এটি শুধু কাজ করার জন্য নয়, বরং জাপানকে জানারও দ্বার উন্মোচন করবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার