Logo
Logo
×

আইন-আদালত

পথ কুকুর বা বিড়াল মারার শাস্তি কী?

Icon

জাগো বাংলা ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২০ এএম

পথ কুকুর বা বিড়াল মারার শাস্তি কী?

পাবনার ঈশ্বরদীতে সদ্যজাত আটটি কুকুর ছানা বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে মেরে ফেলার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন বেশ আলোচিত। সন্তান হারিয়ে মা কুকুরের ছোটাছুটি এবং আর্তনাদের ভিডিও অসংখ্যবার শেয়ার হয়েছে। 

এরআগে এ মাসের শুরুতেও বগুড়াতেও একটি বিড়ালকে জবাই করে হত্যা ও পোড়ানোর ঘটনায় বেশ আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এমন নিষ্ঠুরতার আরও নজির রয়েছে বাংলাদেশে।  

এর পর অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, মালিকবিহীন এসব পথকুকুর বা বিড়ালকে হত্যা, নির্যাতন বা আঘাত করলে দেশের আইনে আদৌ শাস্তির বিধান আছে কি না? পথকুকুরের নিরাপত্তা বা আইনি প্রতিকার সাধারণ ব্যক্তি নিজে চাইতে পারবে কি না? না কি পুলিশই নিজে থেকে ব্যবস্থা নিতে পারবে? 

পথবিড়াল বা কুকুরের হত্যার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি সরাসরি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটির একজন সদস্য মো. এমরান হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রাণি আইন যেটা আছে সেটাতো আসলে খুবই দুর্বল। আমরা জিডি করার পরে পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলেছিলাম। তারা বরাবরই বলছিলে এটা ধর্তব্যের বাইরে অপরাধ। 

বাংলাদেশে প্রাণি নির্যাতন সম্পর্কিত প্রায় একশ বছরের পুরোনো ১৯২০ সালের ‘দ্য ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস অ্যাক্ট’ বাতিল করে ২০১৯ সালে প্রাণি কল্যাণ আইন প্রণয়ন করা হয়।

আইনজীবীরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত মামলা গ্রহণ করবে না।

অর্থাৎ, চাইলেই যে কোনো ব্যক্তি এই ধরনের অপরাধের জন্য আইনি প্রতিকার বা মামলা করতে পারবেন না। আইনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ব্যতীত, কোনো আদালত এই আইনের অধীন কৃত কোনো অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ করিবেন না। 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাকিব মাহবুব বিবিসি বাংলাকে বলেন,  এইটার (আইনের) প্রয়োগ সিটিজেনের হাতে না। এখানে কর্তৃপক্ষের সংজ্ঞায় আছে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার নিকট থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অধিদপ্তরের কোনো ভেটেরিনারি সার্জন। মানে অধিদপ্তরের লোক ছাড়া আপনি মামলা করতে পারবেন না। মূলত প্রাণি কল্যাণ আইনের বাধা এখানে। 

এই আইনের (পেনাল কোড) ৪২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি প্রাণি হত্যা করে বা ক্ষতি করে এবং যে কোনো প্রাণির মূল্য যদি ৫০ টাকা বা তার বেশি হয় তাহলে ওই ব্যক্তির পাঁচ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

এই আইনজীবী আরও বলছেন, একটা রাস্তার কুকুর বা বিড়ালের মূল্য কিভাবে নির্ধারণ হবে? সেতো কারো মালিকানাধীন গবাদি পশু না। সেক্ষেত্রে এই ধারাও প্রমাণ করা কষ্টকর। এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে আসলে আপনি প্রমাণ করতে পারবেন না। 

ফলে এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের প্রাণি কল্যাণ আইন থাকলেও তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

‘কেননা সেখানেই মালিকবিহীন প্রাণি হত্যা করা যাবে না সেটা বলা হয়েছে। সেটা বলছে ঠিকই কিন্তু প্রয়োগ আবার নাগরিকের কাছে দেয় নাই। প্রয়োগ আবার অধিদপ্তরের কাছে। কর্তৃপক্ষ এমন কোনো মামলা করেছে তা আমার জানা নাই।’ 

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলো আদালত।

ঢাকার সিটি কর্পোরেশন ২০১৪ সালেই কুকুর নিধন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে কুকুরকে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়। পরে ২০১৯ সালের নতুন প্রাণি কল্যাণ আইনে নিধন বা অপসারণ করা যাবে না বলে বিধান রাখা হয়েছে বলে জানান আইনজীবীরা। 

প্রাণি হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি কী?

প্রাণির প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ করা, সদয় আচরণ প্রদর্শন করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের প্রাণি কল্যাণ আইনটি প্রণয়ন করা হয়। আইনজীবীরা বলছেন, এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ নন-কগনিজেবল বা অ-আমলযোগ্য এবং জামিনযোগ্য।

পোষ্য এবং মালিকবিহীন দুই ক্যাটাগরিতে প্রাণিকে ভাগ করা হয়েছে এই আইনে।এই আইনে উল্লেখিত কোনো কারণ ব্যতীত মালিকবিহীন কোনো প্রাণিকে নিধন বা অপসারণ করা যাবে না।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, মালিকবিহীন কোনো প্রাণি, যেসব কুকুর বা বিড়াল পোষা নয়, এমন পথকুকুর বা বিড়াল এমন প্রাণীকে কেউ যদি হত্যা করে তবে সেটা হবে অপরাধ, এই অপরাধে শাস্তির বিধানও আছে। 

প্রাণির প্রতি কী কী আচরণ নিষ্ঠুর হিসেবে বিবেচনা করা হবে তা এই আইনের ছয় ও সাত ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। অঙ্গহানি করা এবং বিষ প্রয়োগে প্রাণি হত্যাকেও অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

তবে কোনো প্রাণি সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকলে বা অনিরাময়যোগ্য অসুস্থ হলে, তাকে বাঁচিয়ে রাখা নিষ্ঠুরতা বলে মনে হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিক্রমে ব্যথাহীন মৃত্যু ঘটানো যাবে।

এ ছাড়া পোষ্য বা পথকুকুর বা বিড়ালকে হত্যা, নির্যাতন বা তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করার আইনে সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন মনজিল মোরসেদ।

‘যদি কেউ এ সমস্ত ঘটনা করে তবে তার জন্য ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা দশ হাজার টাকা জরিমানা। আর যদি দ্বিতীয়বার করে তাহলে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা.. এই শাস্তির বিধানটাও আছে।’ 

পোষ্য এবং মালিকানাবিহীন বা পথকুকুর বা বিড়াল উভয়ের জন্যই এই শাস্তি প্রযোজ্য। তিনি জানান, এই আইনের অধীনে প্রাণির প্রতি যেসব অপরাধের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর বিচার করতে পারবে ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মোবাইল কোর্টও।

বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী, প্রাণি হত্যার সর্বোচ্চ সাজা দুই বছরই বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী। 

সূত্র: বিবিসি বাংলা। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার