Logo
Logo
×

ইসলাম

স্ত্রী নাকফুল না পরলে স্বামীর হায়াত কমে যায়, কথাটি কি সঠিক?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৯ এএম

স্ত্রী নাকফুল না পরলে স্বামীর হায়াত কমে যায়, কথাটি কি সঠিক?

আমাদের সমাজে কিছু বিশ্বাস এমনভাবে গেঁথে বসে আছে, যেন এগুলো ধর্মেরই অংশ। বিশেষ করে বিয়ের পর নারীদের জন্য চুড়ি, নাকফুল কিংবা সিঁদুর পরা নিয়ে বহু অলিখিত নিয়ম রয়ে গেছে। কেউ যদি এই অলংকার না পরে, তাহলেই শুরু হয়ে যায় ফিসফাস—‘ওর স্বামীর কিছু হয়ে যাবে না তো?’, ‘সংসারে অশান্তি নেমে আসবে’, ‘স্বামীর হায়াত কমে যেতে পারে’ ইত্যাদি। এর পেছনে ধর্মীয় ব্যাখ্যা কী, সেটা খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করে না অনেকেই।

বিশেষ করে নাকফুল নিয়ে এমন কুসংস্কার ছড়িয়ে আছে যে, স্ত্রীর নাকফুল না পরা নাকি স্বামীর জীবনের ওপর প্রভাব ফেলে! অথচ ইসলাম কোনোদিন এমন দাবি করেনি। বরং এসব মনগড়া ধারণা ইসলাম স্পষ্টভাবে নাকচ করেছে। ধর্মে কোথাও বলা হয়নি, অলংকার না পরলে বরকত উঠে যাবে, রিজিকে টান পড়বে কিংবা কারও জীবন হুমকির মুখে পড়বে। এসব নিছক সমাজের বানানো কুসংস্কার, যার কোনো ভিত্তি কোরআন-হাদিসে নেই।

ইসলাম বরাবরই বাস্তবসম্মত ও সরল জীবনব্যবস্থার ওপর জোর দেয়। অলংকার পরা ইসলাম অনুমোদন করে বটে, তবে সেটা একান্তই রুচির ব্যাপার।

চলুন, এ বিষয়ে কোরআন-হাদিসের ভাষ্য জেনে নিই—

‘স্ত্রী নাকফুল না পরলে স্বামীর আয়ু কমে যায়’—ইসলামের দৃষ্টিতে এ রকম ধারণা ভ্রান্ত, মনগড়া কুসংস্কার। কারও এ রকম বিশ্বাস থাকলে তা পরিত্যাগ করা আবশ্যক। কারণ, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকের হায়াত নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে কারও মৃত্যু হবে না। রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘কোনো প্রাণী আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মারা যায় না, তা নির্দিষ্টভাবে লিখিত আছে। আর যে দুনিয়ার প্রতিদান চায়, আমি তা থেকে তাকে দিয়ে দিই, আর যে আখিরাতের বিনিময় চায়, আমি তা থেকে তাকেও দিই এবং আমি অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেব।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৪৫)

প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ব্যক্তির হায়াত ঠিক করে দিয়েছেন। স্ত্রীর নাকফুলের ওপরে স্বামীর হায়াত ঝুলে নেই। তার হায়াত আল্লাহ যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তা-ই তিনি ভোগ করবেন। এর একদিন আগেও মরবেন না। অতএব স্ত্রী নাকফুল পরুক আর না পরুক তাতে স্বামীর হায়াতে কোনো ধরনের কমবেশি হবে না।’

নারীদের জন্য চুড়ি-নাকফুল পরা জরুরি?

ইসলামে চুড়ি বা নাকফুল পরা জরুরি নয়। আবার পরলে গোনাহও হবে না। তাই চুড়ি বা নাকফুল না পরার কারণে রিজিক বা আয়ুতে বরকত কমে যাওয়ারও কোনো কারণ নেই। কারণ, রিজিক কমানো-বাড়ানো একমাত্র আল্লাহর হাতে। কোরআনে বলা হচ্ছে, ‘পৃথিবীর প্রত্যেক জীবের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই (উল্লেখ) এক সুবিন্যস্ত কিতাবে (লওহে মাহফুজে) রয়েছে।’( সুরা হুদ : ৬)

নবীজি (সা.) কি চুড়ি-নাকফুল পরতে নিষেধ করেছেন?

ইসলামে নারীদের জন্য চুড়ি, নাকফুল, কানের দুল, গলার হার বা চেইন ইত্যাদি অলংকার পরিধান করা জায়েজ। আরবে জাহেলি যুগ থেকে নারীদের এ রকম অলংকার পরার প্রচলন ছিল। ইসলামও এই প্রচলন অনুমোদন করেছে। নবীজি (সা.) নারীদের অলংকার পরিধান করতে নিষেধ করেননি।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) এক ঈদের দিন বের হলেন এবং দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। আগে-পরে কোনো নামাজ পড়লেন না। তারপর বেলালকে (রা.) সঙ্গে নিয়ে নারীদের কাছে গেলেন। তাদের উপদেশবাণী শোনালেন এবং সদকা করতে উৎসাহ দিলেন। তখন নারীরা তাদের কানের দুল এবং হাতের চুড়ি খুলে দিতে লাগলেন। ( বোখারি : ১৪৩১)

এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, নারী সাহাবিরা কানে দুল ও হাতে চুড়ি পরতেন। নবীজি (সা.) তা অনুমোদন করেছেন। তাই এসব অলংকার পরিধান করা নিষিদ্ধ নয়। তবে, ইসলামে নারীদের অলংকার পরিধান করাকে আবশ্যক করা হয়নি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার