মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম উচ্চারণ করলেই আমরা দরুদ ও সালাম পাঠ করি। কিন্তু কেন আমরা তা পাঠ করি? এর প্রকৃত কারণ জানলে তা শুধু নবীজির প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি করবে না, বরং বুঝতে সাহায্য করবে যে মহানবী (সা.) কত মহান ছিলেন।
আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ পাঠান। ৪৯ হে মুমিনগণ! তোমরাও তার প্রতি দরূদ পাঠাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সুরা আল-আহযাব আয়াত : ৫৬)
বিখ্যাত আলেম শায়খ আস-সাদি বলেন, এ আয়াতে মহানবী (সা.)-এর পূর্ণতা, মর্যাদা ও আল্লাহর কাছে তার উচ্চস্থান স্পষ্ট হয়। আল্লাহ ফেরেশতাদের সামনে তার প্রশংসা করেছেন; কারণ তিনি তাকে ভালোবাসেন। ফেরেশতারাও তার প্রশংসা করেন, তার জন্য দোয়া করেন এবং তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ফেরেশতারা পাপমুক্ত তারা মহানবী (সা.)-এর জন্য দোয়া করেন এবং আল্লাহ তায়ালাও নবীজির প্রশংসা করেছেন— এ বিষয়টি মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা ও অবস্থান স্পষ্ট করে।
শায়খ আস-সাদি আরও বলেন, আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন, হে মুমিনরা, তোমরাও তার ওপর দরুদ ও সালাম পাঠ করো। এর মাধ্যমে মূলত মানুষকে আল্লাহ ও ফেরেশতাদের অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নবীর হকের একটি অংশ আদায় হবে এবং তা ঈমান সম্পূর্ণ করবে এর মাধ্যমে নবীকে ভালোবাসা ও সম্মান জানানো হবে, সওয়াব অর্জন হবে এবং গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভ করবে।
কখন দরুদ পাঠ করা সুন্নত?
একটি মাত্র ক্ষেত্রে দরুদ পাঠ করা বাধ্যতামূলক। আর তাহলো নামাজের শেষ বৈঠকে (তাশাহহুদের পর)। এর বাইরে অন্যান্য সময় দরুদ পাঠ করা মুস্তাহাব বা সুন্নত।
এসব সময়ের মধ্যে রয়েছে—
- মহানবী (সা.)-এর নাম শুনলে।
- আজান শোনার পরে।
- দোয়া করার সময়।
- জানাজার নামাজে।
- জুমার খুতবায়।
- মসজিদে ঢোকা বা বের হওয়ার সময়।
- জুমার পুরো দিন জুড়ে।
- ধর্মীয় জ্ঞানশেখানো বা কাউকে ইসলামের পথে আহ্বানের সময়
- বিবাহের চুক্তির সময়।
- দুঃসময়, কষ্ট বা মানসিক চাপের সময়।
দরুদ পাঠের ফজিলত
- দরুদ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশ পালন করা হয়। এটাই দরুদ পাঠের সবচেয়ে বড় ফজিলত।
- দরুদ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ ও ফেরেশতাদের অনুসরণ করা হয়।
- দরুদ পাঠের মাধ্যমে দশগুণ রহমত পাওয়া যায়।
এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত পাঠান, তার দশটি গুনাহ মুছে দেন, এবং তার মর্যাদা দশ গুন বাড়িয়ে দেন। (মুসলিম)
দরুদ মাঠের মাধ্যমে কিয়ামতের দিন মহানবী (সা.)-এর শাফায়াত লাভ হবে। মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে দশবার এবং সন্ধ্যায় দশবার দরুদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার শাফায়াত লাভ করবে। (আল-আলবানি)
দরুদ মাঠের মাধ্যমে দুশ্চিন্তা দূর হয় ও গুনাহ মাফ হয়। হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বললাম—
হে আল্লাহর রাসূল! আমি (আমার দোয়াতে) আপনার উপর দরুদ বেশি পড়ি। অতএব আমি আপনার প্রতি দরুদ পড়ার জন্য (দোয়ার) কতটা সময় নির্দিষ্ট করব?’ তিনি বললেন, তুমি যতটা ইচ্ছা কর। আমি বললাম, ‘এক চতুর্থাংশ?’
তিনি বললেন, যতটা চাও। যদি তুমি বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, অর্ধেক (সময়)? তিনি বললেন, তুমি যা চাও; যদি বেশি কর, তাহলে তা ভাল হবে। আমি বললাম, দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যা চাও (তাই কর)। যদি বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য উত্তম।
আমি বললাম, আমি আমার (দোয়ার) সম্পূর্ণ সময় দরুদের জন্য নির্দিষ্ট করব! তিনি বললেন, তাহলে তো এ কাজ তোমার দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার পাপকে মোচন করা হবে। (তিরমিজি)