Logo
Logo
×

ইসলাম

পৃথিবীতে জান্নাতী ও জাহান্নামী লোকেদের চিনবেন যেভাবে

Icon

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৫ এএম

পৃথিবীতে জান্নাতী ও জাহান্নামী লোকেদের চিনবেন যেভাবে

হাদিস এমন এক অমূল্য উৎস- যাতে মানুষের সৃষ্টি, স্বভাব, নৈতিকতা, রাষ্ট্রনীতি এবং সমাজজীবনের সূক্ষ্মতম দিকগুলোকে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। বহু হাদিসে মানুষের সহজাত পবিত্রতা, শয়তানের প্ররোচনা, হালাল–হারামের সীমানা, দুনিয়া ও আখিরাতের পরীক্ষা; এসব বিষয় অত্যন্ত গভীরভাবে ব্যাখ্যা এসেছে। নিচের দীর্ঘ হাদিসটি সেই ধারারই একটি অনন্য শিক্ষামূলক হাদিস যেখানে রসূলুল্লাহ (সা.) মানুষের জন্মগত ফিতরাহ, শয়তানের প্রতারণা, আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীদের দায়িত্ব, ন্যায়পরায়ণ শাসক ও কোমল-হৃদয় মানুষের মর্যাদা, এবং বিভিন্ন ধরনের গুনাহগারের কঠিন পরিণতি; সবকিছু একত্রে তুলে ধরেছেন। হাদিসটিতে মানবসমাজের জন্য কোনটি আদর্শিক পথ আর কোনটি বিপথগামিতার পথ তার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রপটও আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়েছে-

عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ الْمُجَاشِعِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ذَاتَ يَوْمٍ فِي خُطْبَتِهِ ‏"‏ أَلاَ إِنَّ رَبِّي أَمَرَنِي أَنْ أُعَلِّمَكُمْ مَا جَهِلْتُمْ مِمَّا عَلَّمَنِي يَوْمِي هَذَا كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حَلاَلٌ وَإِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا وَإِنَّ اللَّهَ نَظَرَ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ فَمَقَتَهُمْ عَرَبَهُمْ وَعَجَمَهُمْ إِلاَّ بَقَايَا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَقَالَ إِنَّمَا بَعَثْتُكَ لأَبْتَلِيَكَ وَأَبْتَلِيَ بِكَ وَأَنْزَلْتُ عَلَيْكَ كِتَابًا لاَ يَغْسِلُهُ الْمَاءُ تَقْرَؤُهُ نَائِمًا وَيَقْظَانَ وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي أَنْ أُحَرِّقَ قُرَيْشًا فَقُلْتُ رَبِّ إِذًا يَثْلَغُوا رَأْسِي فَيَدَعُوهُ خُبْزَةً قَالَ اسْتَخْرِجْهُمْ كَمَا اسْتَخْرَجُوكَ وَاغْزُهُمْ نُغْزِكَ وَأَنْفِقْ فَسَنُنْفِقَ عَلَيْكَ وَابْعَثْ جَيْشًا نَبْعَثْ خَمْسَةً مِثْلَهُ وَقَاتِلْ بِمَنْ أَطَاعَكَ مَنْ عَصَاكَ ‏.‏ قَالَ وَأَهْلُ الْجَنَّةِ ثَلاَثَةٌ ذُو سُلْطَانٍ مُقْسِطٌ مُتَصَدِّقٌ مُوَفَّقٌ وَرَجُلٌ رَحِيمٌ رَقِيقُ الْقَلْبِ لِكُلِّ ذِي قُرْبَى وَمُسْلِمٍ وَعَفِيفٌ مُتَعَفِّفٌ ذُو عِيَالٍ - قَالَ - وَأَهْلُ النَّارِ خَمْسَةٌ الضَّعِيفُ الَّذِي لاَ زَبْرَ لَهُ الَّذِينَ هُمْ فِيكُمْ تَبَعًا لاَ يَتْبَعُونَ أَهْلاً وَلاَ مَالاً وَالْخَائِنُ الَّذِي لاَ يَخْفَى لَهُ طَمَعٌ وَإِنْ دَقَّ إِلاَّ خَانَهُ وَرَجُلٌ لاَ يُصْبِحُ وَلاَ يُمْسِي إِلاَّ وَهُوَ يُخَادِعُكَ عَنْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ ‏"‏ ‏.‏ وَذَكَرَ الْبُخْلَ أَوِ الْكَذِبَ ‏"‏ وَالشِّنْظِيرُ الْفَحَّاشُ ‏"‏ ‏.‏ وَلَمْ يَذْكُرْ أَبُو غَسَّانَ فِي حَدِيثِهِ ‏"‏ وَأَنْفِقْ فَسَنُنْفِقَ عَلَيْكَ ‏"‏ ‏.‏

ইয়ায ইবনু হিমার আল মুজাশি’ঈ (রা.) হতে বর্ণিত।

(তিনি বলেন,) একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবাহ প্রদানকালে বললেন: সাবধান! আমার প্রতিপালক আজ আমাকে যা শিক্ষা প্রদান করেছেন, এ থেকে তোমাদেরকে এমন বিষয়ের শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন, যে বিষয়ে তোমরা সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞাত। তা হলো এই যে, আমি আমার বান্দাদেরকে যে প্রাচুর্য দিয়েছি তা সম্পূর্ণরূপে বৈধ। আমি আমার সকল বান্দাদেরকে একনিষ্ঠ (মুসলিম) হিসেবে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের নিকট শয়তান এসে তাদেরকে দীন হতে সরিয়ে দেয়।

আমি যে সমস্ত জিনিস তাদের জন্য বৈধ করেছিলাম সে তা হারাম করে দেয়। অধিকন্তু সে তাদেরকে আমার সাথে এমন বিষয়ে অংশীদার করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে, যে বিষয়ে আমি কোনো প্রমাণ পাঠাইনি। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীবাসীদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে কিতাবীদের কিছু লোক ছাড়া আরব-আজম সকলকে অপছন্দ করেছেন। অতঃপর তিনি বললেন: তোমাকে পরীক্ষা করার উদ্দেশে এবং তোমার দ্বারা অন্যদেরকে পরীক্ষা করার উদ্দেশে আমি তোমাকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছি এবং তোমার প্রতি আমি এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি যা পানি কখনো ধুয়ে-মুছে ফেলতে পারবে না।

ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থায় তুমি সেটা পাঠ করবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কুরা্ইশ সম্প্রদায়ের লোকেদেরকে জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ করেছেন। আমি তখন বললাম, হে আমার প্রতিপালক! আমি যদি এ কাজ করি তবে তারা তো আমার মাথা ভেঙ্গে রুটির মতো টুকরা টুকরা করে ফেলবে। আল্লাহ তাআলা বললেন, তারা যেমনিভাবে তোমাকে বহিষ্কার করেছে ঠিক তেমনিভাবে তুমিও তাদেরকে বহিষ্কার করে দাও। তুমি তাদের সাথে যুদ্ধ করো।

আমি তোমাকে সাহায্য করব। ব্যয় করো আল্লাহর পথে, তোমার জন্যও ব্যয় করা হবে। তুমি একটি সেনাদল প্রেরণ করো, আমি অনুরূপ পাঁচটি বাহিনী প্রেরণ করব। যারা তোমার আনুগত্য করে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যারা তোমার বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের সাথে যুদ্ধ করো। (এর পর রাসুল (সা.) বললেন)-

তিন শ্রেণীর মানুষ জান্নাতী হবে। এক প্রকার মানুষ তারা, যারা রাষ্ট্রীয় কর্ণধার, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী এবং নেক কাজের তাওফীক লাভে ধন্য লোক। দ্বিতীয় ঐ সকল মানুষ, যারা দয়ালু এবং আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কোমলচিত্ত। তৃতীয় ঐ শ্রেণীর মানুষ, যারা পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী, যাঞ্চাকারী নয় এবং সন্তানাদি সম্পন্ন লোক।

অতঃপর তিনি বললেন, পাঁচ ধরনের মানুষ জাহান্নামী হবে। এক- এমন দুর্বল মানুষ, যাদের মধ্যে পার্থক্য ক্ষমতা নেই, যারা তোমাদের এমন তাবেদার যে, না তারা পরিবার-পরিজন চায়, না ধনৈশ্বর্য। দুই- এমন খিয়ানাতকারী মানুষ, সাধারণ বিষয়েও যে খিয়ানাত করে যার লালসা কারো নিকটই লুক্কায়িত নেই। তিন- ঐ ব্যক্তি, যে তোমার পরিবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদের বিষয়ে তোমার সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা প্রতারণা করে। অবশেষে তিনি কৃপণতা, মিথ্যা বলা এবং গালমন্দ করার কথাও বর্ণনা করেছেন। তবে আবূ গাস্‌সান (রহঃ) তার হাদীসের মাঝে وَأَنْفِقْ فَسَنُنْفِقَ عَلَيْكَ অর্থাৎ "তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় কর, আমিও তোমার জন্য ব্যয় করব" বাক্যটি উল্লেখ করেননি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার