মোবাইল স্ক্রিনে আল্লাহর নাম বা কুরআনের আয়াত ব্যবহারের বিধান কী?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৭ পিএম
আল্লাহর নাম ও কুরআনের আয়াত মুসলমানের হৃদয়ের আলো, জীবনের দিশা। প্রযুক্তির যুগে আমরা অনেকেই ভালোবাসা থেকে মোবাইলের স্ক্রিনে এই বরকতময় লেখাগুলো ব্যবহার করি। কিন্তু পবিত্র বাণীর প্রতি শিষ্টাচার বজায় রাখা আমাদের ইমানের দাবি। তাই মোবাইল স্ক্রিনে আল্লাহর নাম বা কুরআনের আয়াত ব্যবহারের বিধান জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মোবাইল স্ক্রিনে আল্লাহর নাম ও কুরআনের আয়াত বা ক্যালিগ্রাফি ব্যবহারের বিধান হলো জায়েজ (অনুমোদিত), তবে এক্ষেত্রে আদব-শিষ্টাচার মানা শর্ত। ফিকহ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন— মোবাইল স্ক্রিনে আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত বা ক্যালিগ্রাফি রাখা মুলত জায়েয, কারণ এটি কাগজের মুসহাফ নয়; বরং স্ক্রিনের আলোতে সাময়িক টেক্সট। তবে অসম্মান, অপবিত্রতা, টয়লেটে প্রবেশ ইত্যাদি থেকে কঠোরভাবে বাঁচতে হবে।
মোবাইল-ফোনের ওয়ালপেপারে আল্লাহ তায়ালার নাম, কাবা শরীফের ছবি বা কোরআনের আয়াত লেখা ক্যালিগ্রাফি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেন এসবের অবমাননা না হয়। অবমাননা অর্থাৎ, মোবাইল স্ক্রিনে আল্লাহর নাম ভাসমান অবস্থায় রেখে মাটিতে রাখা, উপরে উল্লেখিত ক্যালিগ্রাফি রেখে মোবাইল পায়ের নিচে রাখা, কিংবা সেই অবস্থায় বাথরুমে যাওয়া। এ জাতীয় কিছু যেন না ঘটে।
আর যদি এমন অবমাননার আশঙ্কা থাকে, তাহলে এমন কোনো ওয়ালপেপার ব্যবহার করাই উচিৎ নয়, যাতে আল্লাহর নাম, কোরআনের আয়াত বা কাবা শরীফের ছবি থাকে।
১. কুরআন স্পর্শের শর্ত
আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন—
فِیۡ كِتٰبٍ مَّكۡنُوۡنٍ لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ
‘যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, যারা সম্পূর্ণ পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না।’ (সূরা আল-ওয়াকিয়াহ: আয়াত ৭৮-৭৯)
উলামারা বলেন, এখানে ‘মুসহাফ’ বলতে কাগজে লেখা কুরআন বোঝানো হয়েছে। মোবাইল স্ক্রিনে আয়ত প্রদর্শন আলো-রূপে, স্থায়ী লেখার মতো নয়। তাই স্ক্রিন স্পর্শ করা মুসহাফ স্পর্শের মতো নয়। ফিকহ বোর্ড (মজমাউল ফিকহ), লাজনা দায়েমা (সৌদী ফাতওয়া বোর্ড) এবং মুফতি তাকী উসমানীসহ বহু সমসাময়িক আলেম এই মত দিয়েছেন।
২. টয়লেটে নিয়ে যাওয়া: নিষিদ্ধ বা অত্যন্ত অপছন্দনীয়
আল্লাহর নাম নিয়ে অপবিত্র স্থানে প্রবেশ করা নবী (সা.) নিষেধ করেছেন। নবী (সা.) টয়লেটে প্রবেশের সময় তার আংটি খুলে রাখতেন—যাতে আল্লাহর নাম (লেখা) ছিল। হাদিসে এসেছে—
كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ نَزَعَ خَاتَمَهُ
‘নবী (সা.) টয়লেটে প্রবেশ করলে তাঁর আংটি খুলে রাখতেন।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)
ফিকহী হুকুম
যেহেতু মোবাইল স্থায়ী নয়, তবুও স্ক্রিনে আয়াত/আল্লাহর নাম দৃশ্যমান অবস্থায় টয়লেটে নেওয়া মাকরূহ তানযীহি (অপছন্দনীয়)। তাই টয়লেটে গেলে ওয়ালপেপার বা স্ক্রিন অফ করে নিতে হবে।
৩. অসম্মানজনক অবস্থায় ব্যবহার হারাম
কুরআনের আদব লঙ্ঘন করা কঠোর নিষেধ। কুরআনের আদব—
وَ مَنۡ یُّعَظِّمۡ شَعَآئِرَ اللّٰهِ فَاِنَّهَا مِنۡ تَقۡوَی الۡقُلُوۡبِ
‘যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, তা হৃদয়ের তাকওয়ারই প্রকাশ।’ (সুরা আল-হজ: আয়াত ৩২)
তাই কুরআনের আয়াত ব্যবহার করে— অশ্লীল ছবি দেখা, অশোভন পোস্ট স্ক্রল করা, কথোপকথনে অপমানজনক সবকিছু করা, এসব হারাম ও গুনাহ।
আল্লাহর নাম ও কুরআনের আয়াত নিরাশ হৃদয়ে আলো জ্বালায়। মোবাইলে এগুলো ব্যবহার করা ইবাদতের মতো, যদি এর সম্মান রক্ষা করা হয়। পবিত্র বাণীকে শুধু স্ক্রিনে নয়—আমাদের চরিত্র, আচরণ ও জীবনেও ফুটিয়ে তোলাই হলো সত্যিকার সম্মান। প্রযুক্তির মাঝে থেকেও আমরা যেন কুরআনের প্রতি সেই আদব ও শ্রদ্ধা বজায় রাখি, যা আমাদের ইমানকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।